সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আফ্রিকান ফুটবল মহলে তাঁর এক পরিচিতি আছে। এক অন্য পরিচিতি– ‘শ্বেত জাদুকর’। যত না তা গায়ের রঙের জন্য, তার চেয়ে বেশি সাদা শার্ট পরার কুসংষ্কারে। তিনি নিজেই মজা করে বলেন, ‘‘সাদা শার্ট গায়ে দিয়ে যে হারিনি, তা নয়। কিন্তু মিরাকল ঘটতে দেখেছি অনেক বেশি।’’ যেমনটা আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে দেখালেন তিনি– হার্ভে রেনার্ড (Herve Renard)। সৌদি আরব (Saudi Arabia) কোচ। যা অবাক বিস্ময়ে দেখল গোটা ফুটবলবিশ্ব।
কাপ জয়ের স্বপ্নিল জগৎ থেকে যিনি এক লহমায় রুক্ষ্ম বাস্তবে টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে আনলেন আর্জেন্টিনাকে। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই যাঁর মগজাস্ত্রের খেলায় এই মাটিতে আছড়ে পড়া লিওনেল মেসিদের, সেই ৫৪ বছরের ফরাসি রেনার্ডের জীবন কিন্তু কর্কশ বাস্তবের মোড়কে ঢাকা। যেখানে উত্থানের চেয়ে পতন বেশি, সাফল্যের চেয়ে বেশি ব্যর্থতা।
[আরও পড়ুন: সাফল্য নেই, দেনার দায়ে ডুবে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড, ক্লাব বিক্রির পথে গ্লেজার পরিবার]
একসময় জিনেদিন জিদানের সতীর্থ ছিলেন। তখন জিদানের বয়স উনিশ, রেনার্ড ২২। পরবর্তী সময়ে জিদান জাতীয় দলের পোস্টার বয়। আর রেনার্ড পিছোতে পিছোতে ফরাসি লিগের ষষ্ঠ ডিভিসনে। শেষে হতাশ হয়ে যখন খেলা ছাড়লেন তখন বয়স মাত্র ৩০। পেটের দায়ে বেছে নিলেন বাড়িতে বাড়িতে আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ। শহরের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ময়লাবাহকের কাজ করতেন রেনার্ড। ভোর তিনটেয় যেতেন কাজে। বেলায় মিলত রোজের মজুরি। এত কষ্টের মধ্যেও ফুটবলকে ভোলেননি। সেটাই ছিল পতনের পাদদেশ থেকে রেনার্ডের সাফল্যের শীর্ষে চড়ার সোপান।
কেরিয়ারে শেষ ক্লাব স্পোর্টিং ড্রাগুইনগানে যোগ দিয়েছিলেন কোচ হিসেবে। কিন্তু সফল হননি। রেনার্ডের ভাগ্যের মোড় বদল তারপরেই। প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লদিও লে রয়ের ডাকে পাড়ি দিয়েছিলেন চিনে, যোগ দিয়েছিলেন সহকারী হিসেবে। পরে সেখান থেকে ইংল্যান্ডে কেমব্রিজ ইউনাইটেডে কোচিং। আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি হার্ভেকে।
ফরাসি ফুটবল তাঁকে উপহার দিয়েছে একরাশ শূন্যতা, সেই অপ্রাপ্তি পূর্ণ করে দিয়েছে আফ্রিকা। রেনার্ডের কোচিংয়ে জাম্বিয়া ২০১১-তে ভারতকে হারিয়েছিল ৫-০ গোলে। পরের বছর জাম্বিয়া আফ্রিকান নেশনস কাপ জয়ী। পরে ২০১৮-তে মরক্কোর কোচ হিসেবে বিশ্বকাপে আটকে দিলেন স্পেনকে। আর এবার আর্জেন্টিনা-বধ। রেনার্ড নিজেই একবার স্বীকার করেছেন, ‘‘আফ্রিকায় মুক্ত মনে কোচিং করাতে পেরেছি।’’ সেই মুক্ত বাতাসেই মঙ্গলসন্ধ্যায় কাতারে নিভল মেসিদের জয়ের স্বপ্ন। ভাঙাগড়া, উত্থান পতনের খেলায় হার্ভে ফের একবার বোঝালেন – আফ্রিকান ফুটবলের মতো কাতারের আরব্য রজনীতেও তিনিই জাদুকর। সরি, শ্বেত জাদুকর!