সব্যসাচী বাগচী: মেগা ডার্বি (Kolkata Derby) তো শুধু আবেগের মহা বিস্ফোরণ ঘটায় না, বরাবর নতুন নায়কেরও জন্ম দেয়। এবার যেমন ভারতীয় ফুটবলে (Indian Football) নতুন ভাবে ধরা দিলেন অখ্যাত নন্দকুমার শেখর (Nandhakumar Sekhar)। ২০১৭ সালের ১২ মার্চ। ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal) বিরুদ্ধে আই লিগের ম্যাচে ক্লাব কেরিয়ারের প্রথম গোল করেছিলেন। চেন্নাই সিটি-র সেই উইঙ্গার এবার লাল-হলুদের কাছে ত্রাতা হয়ে দাঁড়ালেন। এবার শনিবাসরীয় যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে তাঁর দুরন্ত গোল থেকেই ঘটল লাল-হলুদের শাপমুক্তি। ১-০ গোলে হারল মোহনবাগান (Mohun Bagan)।
ম্যাচের শুরুতেই ধারাভাষ্যকার মনে করিয়ে দেন, ১৬৫৭ দিন! হ্যাঁ ঠিকই পড়েছেন। অবশেষে ১৬৫৭ দিন পর ডার্বি জিতে খরা কাটাল ইস্টবেঙ্গল। দিন বদলের আশায় ছিল লাল-হলুদ শিবির। অবশেষে দিন বদল হল। ৬০ মিনিটে নন্দকুমারের একমাত্র গোলে ডার্বি জিতে যুবভারতীর গ্যালারিতে যেন জ্বলে উঠল অদৃশ্য মশাল। শনিবারের ডার্বিতে জয়ের পর নন্দকুমার যে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের হৃদয়ে জায়গা করে নিলেন, সেটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
[আরও পড়ুন: আত্মতুষ্টি নাকি ভুল কৌশল? খাতায়-কলমে শক্তিশালী হয়েও ডার্বিতে মোহনবাগানের হারের কারণ কী?]
আর তাই তো ম্যাচের শেষেও যেন নন্দকুমারের ঘোর যেন কিছুতেই কাটছে না। বলছিলেন, “যখন দেখলাম অনিরুদ্ধ থাপা কেটে গিয়েছে, তখন আর বল পায়ে রাখার ঝুঁকি নিতে যাইনি। মোক্ষম শট জালে ঢুকে যায়।” এমন বড় ম্যাচে তাঁর গোলে দলের জয়। নন্দ স্বভাবতই আপ্লুত। সেটা তাঁর প্রতিক্রিয়াতেই বোঝা যাচ্ছিল। নন্দ ফের যোগ করলেন, “ইস্টবেঙ্গলের খেলা ছোটবেলা থেকে টিভি-তে দেখেছি। সেই দলের হয়ে ডার্বির মতো ম্যাচে গোল করতে পারব, এটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো ব্যাপার।”
১৯৯৫ সালের ২০ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন নন্দকুমার। ভারতের এই পেশাদার ফুটবলার চলতি মরশুমে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের উইঙ্গার হিসেবে যোগ দিয়েছেন। জাতীয় ফুটবল দলের জুনিয়র স্কোয়াডেও তাঁর খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। গত আট ডার্বি হেরে যাওয়া লাল-হলুদকে কীভাবে উজ্জীবিত করেছিলেন নতুন হেড কোচ কার্লোস কুয়াদ্রাত? নন্দ বলছিলেন, “গত কয়েক বছরে ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলের পারফরম্যান্স কেমন সেটা সবাই জানে। কোচ আমাদের ‘হারার আগে হারব না’, এই মনোভাব বজায় রেখে খেলতে বলেছিলেন। আর সেই মন্ত্রেই এল জয়।”
[আরও পড়ুন: Durand Cup Derby 2023: বদলার ডার্বিতে অন্য ইস্টবেঙ্গল, নন্দকুমারের গোলে মোহনবাগানকে হারিয়ে জয়ের সরণীতে লাল-হলুদ]
২০১৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি শিলং লাজংয়ের বিরুদ্ধে চেন্নাই সিটি এফসি-র জার্সি গায়ে চাপিয়ে প্রথমবার মাঠে নেমেছিলেন। মাস খানেক বাদে পেশাদার ফুটবলে প্রথম গোলটা করেছিলেন। মজার ব্যাপার হল, সেই গোলটাও ইস্টবেঙ্গল ফুটবল ক্লাবের বিরুদ্ধে তিনি গোল করেছিলেন। ওই ম্যাচের ৫৭ মিনিটে চেন্নাই সিটির হয়ে সমতা ফিরিয়েছিলেন নন্দকুমার। ওই ম্যাচে চেন্নাই ২-১ গোলে জয়লাভ করেছিল। এবার সেই নন্দ লাল-হলুদের দীর্ঘদিনের যন্ত্রণা মিটিয়ে দিলেন।
চেন্নাই ছেড়ে গত বছর নন্দকুমার ওডিশায় যোগ দিয়েছিলেন। মরশুমের প্রথম ম্যাচেই ডুরান্ড কাপে তিনি নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে অসাধারণ একটি গোল করেন। সেই ম্যাচে ৬-০ গোলে জিতেছিল চেন্নাই। অবশেষে এবছর তিনি তিন বছরের চুক্তিতে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে যোগ দেন। তারপর বাকিটা ইতিহাস। গোলার মতো শটে গোল করে তিনিই এখন লাল-হলুদের নতুন নায়ক।