সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে বলিউডের একাধিক তারকা। শচীন তেণ্ডুলকর (Sachin Tendulkar) থেকে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly)। মহেন্দ্র সিং ধোনি (Mahendra Singh Dhoni) থেকে ভিভিএস লক্ষ্মণ (VVS Laxman)। সবার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। এমনকী ভারতীয় হকি দল (Indian Mens Hockey Team), ফর্মুলা ওয়ান ছাড়া বাংলাদেশ ক্রিকেট দলেরও স্পনসর হয়েছিলেন। তিনি এক ও অদ্বিতীয় সুব্রত রায় (Subrata Roy)। যিনি মঙ্গলবার অর্থাৎ ১৪ অক্টোবর রাতের পর থেকে ‘অতীত’ হয়ে গেলেন।
সুব্রত রায় থেকে ‘সাহারাশ্রী’ হয়ে ওঠার পথ মোটেও সহজ ছিল না। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে সুব্রত রায়ও প্রথমে চাকরিই করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর বাবার মৃত্যু সব পরিকল্পনা ভেস্তে দেয়। শোনা যায়, সংসার চালানোর জন্য ল্যামব্রেটা স্কুটারে গোরক্ষপুরের রাস্তায় নাকি নিমকি-চানাচুরের মতো নোনতা খাবার বিক্রি করতেন সুব্রত। সেখান থেকেই অ্যাম্বি ভ্যালি সিটি, সাহারা মুভি স্টুডিও, এয়ার সাহারা, উত্তর প্রদেশ উইজার্ডস, হিন্দি সিনেমা ইত্যাদির মতো বহু ক্ষেত্রে ব্যবসাকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। তৈরি হয়েছিল ‘সাহারা ইন্ডিয়া পরিবার’। ভারত জুড়ে এই গোষ্ঠীর ৫,০০০-এরও বেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এমনকি ভারতীয় ক্রিকেট ও হকি দলের প্রধান স্পনসর হিসাবেও বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন ক্যানসারে আক্রান্ত সুব্রত রায়।
২০০৩ সালের বিশ্বকাপের আগের কথা। বিসিসিআই তখন প্রধান স্পনসরের অভাবে ভুগছে। ঠিক সেই সময় ভারতীয় ক্রিকেট দলের স্পনসর হতে রাজি হয়ে যান সুব্রত রায়। ‘অ্যাম্বি ভ্যালি’ ছিল ভারতীয় দলের স্পনসর। সেবারের কাপযুদ্ধের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারলেও, সেই টিম ইন্ডিয়ার প্রতিটি ক্রিকেটারকে ‘অ্যাম্বি ভ্যালি’-তে ফ্ল্যাট উপহার দিয়েছিলেন ‘সাহারাশ্রী’।
[আরও পড়ুন: সেমিফাইনালের মহারণে কি বাদ সাধতে পারে বৃষ্টি? কেমন থাকবে আবহাওয়া?]
সেই সময় ভারতীয় হকি দলের স্পনসরও ছিল সাহারা গোষ্ঠী। শুধু ভারতীয় দলের স্পনসরশিপই নয়, আইপিএল-এ দলও কিনেছিলেন সুব্রত রায়। তাঁর পুণে ওয়ারিয়ার্স দলে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, যুবরাজ সিং, মাইকেল ক্লার্ক, স্টিভ স্মিথের মতো তারকারা খেলেছিলেন। এদিকে বিজয় মালিয়ার ফোর্স ইন্ডিয়া ফর্মুলা ওয়ান দলেও অংশীদারিত্ব ছিল সাহারা গোষ্ঠীর। এমনকী বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলকেও একটা সময় স্পনসর করেছিলেন তিনি।
তবে মাত্র ১০ বছর পরই বিসিসিআইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বাধ্য হন সুব্রত রায়। ২০১৩ সালের আইপিএল চলার সময় তাঁর সঙ্গে তৎকালীন বোর্ড সভাপতি এন শ্রীনিবাসনের ঝামেলা চরমে ওঠে। শ্রীনিবাসন বোর্ড প্রেসিডেন্ট থাকলে ভারতীয় ক্রিকেট দলের স্পনসর থাকবে না সাহারা। সেটা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছিলেন সাহারা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুব্রত রায়। বেটিং কেলেঙ্কারিতে শ্রীনিবাসনের জামাই গুরুনাথ জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণ হলে চেন্নাই সুপার কিংসকেও আইপিএল থেকে ছেঁটে ফেলার দাবি তুলেছিলেন সাহারাশ্রী। এর আগে বিসিসিআইয়ের সঙ্গে সংঘাতের জেরে আইপিএল থেকে নিজের দল পুণে ওয়ারিয়র্সকে তুলে নিয়েছিলেন সুব্রত। ক্রিকেট মহলে যুক্ত থাকা লোকজনদের দাবি, আইপিএল থেকে দল তুলে নিতে বাধ্য করার জন্যই তিনি নাকি শ্রীনিবাসনের বিরোধিতা করেছিলেন।
সালটা ২০১২। কলকাতা নাইট রাইডার্সের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা সৌরভের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সুব্রত রায়। তাঁকে অধিনায়ক তথা মেন্টর হিসেবে নিয়োগ করা হয়। তবে সময় যত এগিয়েছিল, সেই মধুর সম্পর্ক নাকি ততই তিক্ততায় পরিণত হয়েছিল। শোনা যায়, সুব্রত রায়ের অঙ্গুলিহেলনেই সৌরভকে নাকি পুণে ওয়ারিয়র্স দল থেকে শেষ পর্যন্ত বাদ পড়তে হয়। সেই সময় সুব্রত রায় বিবৃতি দিয়েছিলেন যে দলের তরুণ ক্রিকেটারদের এগিয়ে দেওয়ার জন্য সৌরভই নাকি মরশুমের শেষ তিনটে ম্যাচ রিজার্ভ বেঞ্চে বসতে চেয়েছিলেন। সেই আইপিএল মরশুমে পুণে ১৩টি ম্যাচের মধ্যে ৯ ম্যাচেই হেরে যায়। সেই ‘সাহারাশ্রী’ এবার চিরঘুমে চলে গেলেন। রয়ে গেল তাঁকে ঘিরে থাকা অজস্র ঘটনাবলি। যার ভিতরে রয়েছে তাঁর ক্রীড়াপ্রেমী চরিত্রের নানা দিকও।