সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তাঁর মন্তব্য নিয়ে তোলপাড় গোটা দেশ। দেশ ছাড়ো বিতর্কের মুখে এবার সাফাই দিলেন বিরাট কোহলি। টুইটারে লিখলেন, ব্যক্তিগত পছন্দের স্বাধীনতার পক্ষেই তিনি। তাঁর মন্তব্য হালকা চালে নেওয়ার অনুরোধও করেন ভারত অধিনায়ক। এক ক্রিকেটভক্তকে দেশ ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন বিরাট। তারপরই সোশ্যাল মিডিয়ায় ওঠে সমালোচনার ঝড়। সমালোচনার মুখে সাফাই দিলেন অধিনায়ক কোহলি। তাঁর টুইট, ”আমার জন্য এই ট্রোলিং নয় বলেই মনে করি। আমি ট্রোলড হতে অভ্যস্ত। আমি ‘এই ধরনের ভারতীয়’ মন্তব্যটি নিয়েই বলেছি। পছন্দের স্বাধীনতার পক্ষে আমি। এটা হালকাভাবেই নাও বন্ধুরা। উৎসবের মরসুমে আনন্দ করো। সবাইকে প্রীতি ও শুভেচ্ছা”।
প্রসঙ্গত, বুধবার এক ক্রিকেটপ্রেমীর নেতিবাচক মন্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে মেজাজ হারান কোহলি। ওই ভক্ত লিখেছিলেন, বিরাটের ব্যাটিং অতিরিক্ত প্রশংসিত। তাঁর ব্যাটিংয়ে তেমন বিশেষত্ব নেই। এই ধরনের ভারতীয়দের চেয়ে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং দেখতে পছন্দ তাঁর। ওই ক্রিকেটপ্রমীর এহেন মন্তব্য পড়ার পর ক্ষুব্ধ হন বিরাট। বলেন, ‘আমার মনে হয় আপনার অন্য কোনও দেশে গিয়ে থাকা উচিত। আপনি এই দেশে বসবাস করবেন আর অন্য দেশকে ভালবাসবেন! আপনি আমাকে পছন্দ না-ই করতে পারেন। তাতে আমার বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই। কিন্তু আমার মনে হয় আপনার এই দেশ থেকে বেরিয়ে অন্য কোথাও গিয়ে থাকা উচিত। আপনি সবার আগে নিজের অগ্রাধিকার ঠিক করুন।’
এই মন্তব্যের জেরে দেশজুড়ে বিতর্কের ঝড় ওঠে। ভারত অধিনায়ককে তীব্র সমালোচনার মধ্যে পড়তে হয়। লোকজন বলতে শুরু করেছে, ওই ক্রিকেট সমর্থক কথাটা ঠিক বলেননি। কিন্তু ভারত অধিনায়ক হয়ে বিরাট পালটা হিসেবে যা সব বলেছেন, তাও মেনে নেওয়া যায় না। বৃহস্পতিবার ‘রং দে বসন্তী’ খ্যাত অভিনেতা সিদ্ধার্থ ভারত অধিনায়ককে একহাত নিয়ে টুইট করেছেন, ‘বিরাট তোমাকে যদি সত্যিই কিং কোহলি হতে হয়, তোমার শেখা উচিত এই জায়গায় দ্রাবিড় থাকলে কী বলত? ভবিষ্যতে কথা বলার সময় মনে রেখো। ভারত অধিনায়ক হয়ে কী নির্বোধের মতো কথা!’
[‘দ্রাবিড়ের থেকে কথা বলা শিখুন’, বিরাটের নিন্দায় সরব বলিউড অভিনেতা]
অন্যদিকে, ভারতীয় ক্রিকেটের দুই মুখ্য চরিত্র বিরাট কোহলি ও রবি শাস্ত্রী এবার নিজেদের মন্তব্যের জন্য বিনোদ রাই নেতৃত্বাধীন সিওএ-র রোষে পড়ে গেলেন! মাত্র চব্বিশ ঘণ্টা আগে এক ভারতীয়কে ভারতীয় ক্রিকেটারদের অপছন্দ করার ‘অপরাধে’ তাঁকে দেশ ছাড়তে বলেছিলেন কোহলি।
ভারত অধিনায়কের কথাবার্তা সিওএ-রও পছন্দ হচ্ছে না। সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত প্রশাসনিক প্যানেলের কেউ কেউ বলে দিচ্ছেন, কোহলির মন্তব্যটা সত্যিই নির্বোধের মতো। কোহলি ভারত অধিনায়ক। তাঁর মনে রাখা উচিত যে কী বলছেন, না বলছেন। তাঁর বোঝা উচিত ভারতীয় সমর্থকরা নিজেদের কষ্টের উপার্জনের টাকা খরচ করে খেলা দেখতে আসছেন বলেই তিনি নিজে এত টাকা পাচ্ছেন।
কোহলির বিতর্কিত মন্তব্যটা ব্যবসায়িক প্ল্যাটফর্মে (নিজের অ্যাপ উদ্বোধনী মঞ্চে), তাই বোর্ড কিছু বলবে না। বোর্ড মঞ্চে বললে অবশ্যই অধিনায়কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হত। ভারতীয় কোচ রবি শাস্ত্রী-তিনিও শোনা গেল, সাম্প্রতিক সিওএ বৈঠকে কড়া ধাতানি খেয়েছেন বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য। গত ইংল্যান্ড সফরে একটা টেস্ট জয়ের পরেই শাস্ত্রী বলে বসেছিলেন যে, গত পনেরো বছরে বিদেশে এটাই শ্রেষ্ঠ ভারতীয় টিম। যা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সুনীল গাভাসকর থেকে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়- প্রত্যেকে পাল্টা শুনিয়ে দেন শাস্ত্রীকে। গত মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে হায়দরাবাদ টেস্টের সময় সিওএ-র সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন শাস্ত্রী-কোহলিরা। সেখানে না কি ভারতীয় কোচ শুরু থেকেই বলতে থাকেন, ভারতীয় মিডিয়া সব সময় নিজেদের প্লেয়ারদেরই সমালোচনা করে। অথচ এই টিমটাই গত পনেরো বছরে বিদেশে সেরা ভারতীয় টিম।
[আইপিএল খেলার প্রয়োজন নেই ভারতীয় পেসারদের, মত কোহলির]
এখানেই নাকি থামেননি শাস্ত্রী। বৈঠকে এরপর ক্রমাগত কোহলির টিমের জয়গান গাইতে শুরু করেন। যা সহ্য হয়নি সিওএ-র। শাস্ত্রীর বাড়াবাড়ি দেখে এক সিওএ সদস্য বৈঠকেই তাঁকে বলে দেন, অস্ট্রেলিয়া সফরে কী হবে, না হবে তা নিয়ে কথা বলতে। যে কারণে বৈঠকটা ডাকা হয়েছে। শাস্ত্রীকে এটাও বলা হয়, গত পনেরো বছরে বিদেশে এটাই শ্রেষ্ঠ ভারতীয় টিম কি না, তা বিচার করার শাস্ত্রী কেউ নন। দেশের মানুষ তার বিচার করবে! উল্টে কোচ-অধিনায়ককে শোনানো হয় যে, প্রচুর টাকাপয়সা, প্র্যাকটিসের ভাল সুযোগ-সুবিধে, চাহিদামতো সাপোর্ট স্টাফ, সবই দেওয়া হচ্ছে টিমকে। কিন্তু তারপরেও বিদেশে ভাল পারফরম্যান্স কেন আসবে না?
যা অবস্থা, তাতে শাস্ত্রী-কোহলির সময় হালফিল মোটেই ভাল চলছে না। ঠোঁট নিঃসৃত কথাবার্তাই যে বিদ্রোহ করছে!
[ভারতীয় ক্রিকেটারদের অপমান! এক ফ্যানকে মোক্ষম জবাব দিলেন বিরাট]
The post ‘এই ধরনের ভারতীয়’ মন্তব্যে আপত্তি, দেশ ছাড়ো বিতর্কে পালটা কোহলির appeared first on Sangbad Pratidin.