সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফে আগেই জানানো হয়েছিল চাকরি বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হবে তারা। সেইমতো বুধবার কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে স্পেশাল লিভ পিটিশন দায়ের হল শীর্ষ আদালতে।
গত সোমবার নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রায় ঘোষণা করে কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শাব্বর রশিদির বেঞ্চের তরফে ২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়। গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি মিলিয়ে মোট ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি বাতিল করে ডিভিশন বেঞ্চ। একইসঙ্গে জানানো হয়, প্যানেলের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর যাঁরা চাকরি পান, তাঁদের ১২ শতাংশ সুদ-সহ বেতন ফেরত দিতে হবে। এই রায়ের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে যাওয়ার কথা আগেই জানিয়েছিল কমিশন সেইমতো বুধবার স্পেশাল লিভ পিটিশন দায়ের হল শীর্ষ আদালতে। নিজেদের আবেদনে এসএসসির তরফে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, স্বাভাবিক নিয়মে চাকরি প্রাপকদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও কেন পুরো প্যানেল বাতিল করা হল? বিষয়টি নিয়ে যাতে দ্রুত শুনানি করা যায় তার আবেদন জানানো হয়েছে। সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় অথবা অন্য কোনও বিচারপতির এজলাসে দ্রুত শুনানি হতে পারে।
[আরও পড়ুন: ২০১৭ সালের টেটের প্রশ্নে আদৌ ভুল ছিল? জানতে বিশেষ কমিটি গঠন হাই কোর্টের]
কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশের পর শিক্ষামন্ত্রই ব্রাত্য বসু জানিয়েছিলেন, “অযোগ্যদের বের করে দিয়ে নতুন নিয়োগ দিতে চাই আমরা। সেই আবেদন হাই কোর্টে করেছিল এসএসসি-ই।” কিন্তু সেই আর্জি বুঝতে না পেরে তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়ে দিয়েছিলেন। এদিকে আদালতের এক কলমের খোঁচার চাকরি হারিয়ে চাকরিহারাদের বক্তব্য, আদালতের রায়ে যে সব যোগ্য শিক্ষকেরা চাকরি হারালেন তাদের কী হবে। মানবিক দিক থেকেও কী ব্যাপারটা ভেবে দেখা যেত না! যারা চাকরি হারালেন, তাঁদের অনেকের কর্মজীবনের সবে শুরু। তাঁদের ভবিষ্যৎ কী? কয়েকজন অযোগ্য, অসৎ মানুষের জন্য হাজার হাজার পরিবার কেন শাস্তি পাবে? এক চাকরিহারার প্রশ্ন, “আমাদের হয়ে ভাবার কী কেউ নেই? আইনের এমন কী কোনও ধারা নেই, যারা মানবিক দিকটা ভাবে? আমাদের দোষটা কী?”
পাশাপাশি আদালতের রায় নিয়ে শুরু হয়েছে দ্বন্দ্ব। হাই কোর্টের নির্দেশে চাকরিহারাদের কি নতুন করে পরীক্ষা দিতে হবে? নাকী পুরানো ওএমআর-এর পুনর্মূল্যায়ন করে যগ্যদের চাকরি দেওয়া হবে? মামলাকারী ও আইনজীবীদের মধ্যে শুরু হয়েছে পরস্পরবিরোধী ব্যাখ্যা। শুধুমাত্র অযোগ্যদের বরখাস্ত না করে কেন যোগ্যদেরও বরখাস্ত করা হল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এহেন পরিস্থিতির মাঝেই এবার হাই কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতে এসএসসি।