স্টাফ রিপোর্টার: রোগী রয়েছে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে। কিন্তু তার বাঁপায়ের হাড় গ্রিন করিডর করে কড়া পুলিশ প্রহরায় আনা হল SSKM হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগে। সেখানে ক্যানসার (Cancer) আক্রান্ত পায়ের কোষ নষ্ট করে ৪৫ মিনিটের মধ্যে ফের রোগীর পায়ে প্রতিস্থাপন করা হল। ফলে রোগীর পা কেটে বাদ দিতে হল না। সব ঠিক থাকলে দিন পনেরো পর সুস্থ হয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরে যাবে ওই কিশোর। এই প্রথম এমন এক ঘটনার সাক্ষী থাকল রাজ্য। সৌজন্যে এসএসকেএম হাসপাতালের অর্থোপেডিক ও রেডিওলজি বিভাগ। আর এই ঘটনার সঙ্গে দেশের প্রথম সারির অর্থোপেডিক সার্জারির সঙ্গে একসারিতে জুড়ে গেল এসএসকেএম।
গ্রিন করিডর করে মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিস্থাপন নতুন নয়। কিন্তু রোগীর শরীরের একটি অংশ কেটে গ্রিন করিডর করে সেটিকে ক্যানসার মুক্ত করে প্রতিস্থাপন! না এমনটা আগে হয়নি পশ্চিমবঙ্গে। ডাক্তারি পরিভাষায় এই পদ্ধতির নাম ‘এসট্রা করপোরাল রেডিওথেরাপি অ্যান্ড রি ইম্পল্যান্টেশন অফ বোন উইথ মেগা প্রস্থেটিক’। প্রায় আট ঘণ্টা অস্ত্রোপচারের পর অর্থোপেডিক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মুকুল ভট্টাচার্য বুধবার রাতে জানিয়েছেন, “অস্ত্রোপচার সফল। রোগীর বা পায়ের ফিমারে যে হাড় প্রতিস্থাপন করা হয়েছে তা ক্যানসারমুক্ত। সব ঠিক থাকলে দু’সপ্তাহ পরে বাড়ি ফিরবে মালদহের হরিশচন্দ্রপুরের নাসিরুদ্দিন।” রোগী আইসিইউতে। ঘণ্টায় ঘণ্টায় রিপোর্ট পাচ্ছেন। ততই খুশিতে উজ্জ্বল হচ্ছেন চিকিৎসকরা। অস্ত্রোপচার থেকে প্রতিস্থাপন গোটা বিষয়টি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে পর্যবেক্ষণ করেছেন অধিকর্তা ডা. মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়।
[আরও পড়ুন: বাংলা বন্ধ পালন না করলে ‘মৃত্যুদণ্ডে’র হুঁশিয়ারি, জঙ্গলমহলে মাওবাদী পোস্টার উদ্ধারে চাঞ্চল্য]
নাম যতটা খটমটে। রোগ তার থেকেও কঠিন। বলা যায় মারণ রোগ। তাও আবার বছর পনেরোর এক কিশোরের। প্রায় এক মাস আগে এসএসকেএম হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগে বাঁ পায়ের অসহনীয় যন্ত্রণা নিয়ে হাজির হয় নাসিরুদ্দিন। বেশ কয়েকটি পরীক্ষার পর চিকিৎসকরা নিশ্চিত হন নাসিরুদ্দিনের বাঁ পায়ের ফিমার বোন মারাত্মক ক্যানসারে আক্রান্ত। জীবনকে যে ভাল করে জানতেই পারল না এমন এক কিশোরকে কী করে সুস্থ করা যায় তাই নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মুকুল ভট্টাচার্যর কথায়, “রোগীকে সুস্থ করে জীবনের স্বাদ ফিরিয়ে দিতে হবে। এই ইচ্ছেটাই আমাদের সামনে একমাত্র চ্যালেঞ্জ ছিল। তাই বিদেশে চালু হওয়া একেবারে নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করতে কোনও দ্বিধা ছিল না।”
রোগীর বাঁ পায়ের ফিমারের হাড়ের নিচের অংশ পুরো নষ্ট হয়ে যায়। এই রোগীকে কী করে সুস্থ করা যায়। তার জন্য হাসপাতালের অঙ্কো অর্থো বিভাগের ডা. কৌশিক নন্দী ঠিক করেন ফিমারের চার ভাগের তিনভাগ কেটে রেডিওলজিতে এনে ক্যানসার কোষগুলি নষ্ট করা হয়। পরে সেই হাড়টাই প্রতিস্থাপন করা হয়। এই সাফল্যের জন্য অস্ত্রোপচারের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকরা ধন্যবাদ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। টাটা ক্যানসারের সঙ্গে চুক্তি হওয়ায় বেশ কয়েকজন ক্যানসার বিশেষজ্ঞ যুক্ত হয়েছেন। ফলে এমন অস্ত্রোপচার করতে সুবিধা হয়েছে। যেহেতু রোগীর নিজের হাড়, তাই কৃত্রিম হাড়ের সঙ্গে এটিও রাখা হয়েছে। যাতে ভবিষ্যতে নতুন করে অস্ত্রোপচার করতে না হয়।