স্টাফ রিপোর্টার: বগলের নিচে দুটো, আর বুকে একটা। তিনটি ছোট ফুটো দিয়েই বাদ দেওয়া হল থাইরয়েড গ্রন্থি। ল্যাপারোস্কোপির মাধ্যমে এমন অস্ত্রোপচার করে নজির গড়ল কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতাল (SSKM Hospital)। চিকিৎসকদের দাবি, বাংলা তো বটেই, পূর্ব ভারতেও সরকারি ক্ষেত্রে এমন অস্ত্রোপচার এই প্রথম।
মীনা দেবী। বাড়ি কাঁকিনাড়ার ভাটপাড়ায়। বিগত চার মাস ধরেই মীনাদেবী খুব অসুস্থ। থাইরয়েড ক্যানসারের ছোবলে শয্যাশায়ী। কর্কটরোগ গলা ছাড়িয়ে শরীরের অন্যত্রও ছড়িয়েছে। ছোবল দিয়েছে পায়ে। পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন পঁয়তাল্লিশেই। প্রথম থেকেই পিজি হাসপাতালের অঙ্কোসার্জন অধ্যাপক ডা. দীপ্তেন্দ্র সরকার দেখছিলেন। লকডাউনের (Lockdown) মাঝামাঝি সময়ে ক্যানসার ধরা পড়ে। কিন্তু লকডাউনের জেরে মাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা যায়নি। এমনটাই জানালেন ছেলে দীপক সাউ।
১ অক্টোবর মীনাদেবীকে পিজিতে ভরতি করা হয়। গত সপ্তাহে অস্ত্রোপচার হয়। দীপ্তেন্দ্রবাবু জানালেন, “থাইরয়েডেকটমি বা থাইরয়েড গ্রন্থি কেটে বাদ দেওয়ার অস্ত্রোপচার অনেক হয়েছে পিজিতে। কিন্তু সবই গলা কেটে। এই প্রথম ল্যাপারোস্কোপি পদ্ধতি প্রয়োগ করে থাইরয়েডেকটমি হল। শুধু পিজি নয়, পূর্ব ভারতের কোনও সরকারি হাসপাতাল এখনও পর্যন্ত এই ঝুঁকি নেয়নি। সেই দিক থেকে বৈপ্লবিক পদক্ষেপ তো বটেই। খুশি মীনাদেবীর পরিবারও। দীপক জানালেন, “মা এখনও হাঁটতে পারছেন না। তবে বাকি সমস্যাগুলি নেই। করোনা কালে এমন জটিল অস্ত্রোপচার করে পিজির ডাক্তারবাবুরা আমাদের অশেষ উপকার করলেন।”
[আরও পড়ুন: যন্ত্রণা পেটে, চিকিৎসা হল হৃদরোগের! ৫০ হাজার টাকা জরিমানা নার্সিংহোমের]
১২ মিলিমিটার, ১০ মিলিমিটার ও ৫ মিলিমিটার। তিনটি ছিদ্র দিয়েই অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। দীপ্তেন্দ্রবাবু জানালেন, কাজটা সহজ ছিল না। এর আগে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও সাফল্য আসেনি। এবার এল। এরপর থেকে এই পদ্ধতিতে থাইরয়েডেকটমি করার চেষ্টা করা হবে। এতে রোগী খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে। গলায় কোনও কাটা দাগও থাকবে না। মীনা দেবীর গলায়ও কোনও কাটা দাগ নেই। বোঝারই উপায় নেই, গোটা থাইরয়েড গ্রন্থিটাই বাদ গিয়েছে শরীর থেকে। দীপ্তেন্দ্রবাবু জানালেন, “ল্যাপারোস্কোপির ক্ষেত্রে খুব উন্নত ধরনের যন্ত্রপাতি এসেছে। তার জন্যই এত জটিল অস্ত্রোপচারও সহজে করা সম্ভব হচ্ছে। এই পদ্ধতির সবচেয়ে বড় সুবিধা এখানে কাটাকাটি বা সেলাইয়ের সমস্যা নেই। শুধু দুটো বা তিনটি ফুটো করলেই হল। আগামী দিনে ব্রেস্ট ক্যানসার সার্জারির ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতি প্রয়োগ করার ভাবনা রয়েছে দীপ্তেন্দ্রবাবুদের। সেক্ষেত্রে ফের পিজি বাংলা তথা ভারতে নজির গড়বে।