সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: সন্তানের পিতৃপরিচয় নিয়ে সন্দেহ নাকি লাগামহীন জীবনযাপনে অশান্তির জের? পুরুলিয়ায় (Purulia) সন্তানকে খুন করে স্পেশ্যাল হোমগার্ডের আত্মহত্যার কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা। আত্মঘাতী হোমগার্ডের স্ত্রী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের সঙ্গে কথা বলে বিস্ফোরক তথ্য পেয়েছে পুলিশ। যার সত্যতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, ২০০৮ সালে পুরুলিয়ার অযোধ্যা স্কোয়াডে যোগ দিয়েছিলেন আত্মঘাতী হেমন্ত হেমব্রমের বর্তমান স্ত্রী চম্পা। মাওবাদীদের ডেপুটি এরিয়া কমান্ডার ছিলেন তিনি। সেই সময় চম্পার সঙ্গে বিক্রম নামে এক মাও নেতার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে চম্পার। তার ঠিক দু’বছর পর ২০১০ সালে অযোধ্যা স্কোয়াডে যোগ দিয়েছিলেন হেমন্ত। স্কোয়াডে থাকাকালীন অন্য এক সদস্যের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন হেমন্তও। সম্পর্ক গভীর হওয়ার পর সিঁদুরও পরিয়েছিলেন হেমন্ত। তবে জানা গিয়েছে, হেমন্ত নাকি ওই তরুণীর সঙ্গে প্রতারণা করেন। সমাজের মূল স্রোতে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। ২০১৪ সালে ৬ ফেব্রুয়ারি হেমন্ত আত্মসমর্পণ করেন। স্পেশ্যাল হোম গার্ডের চাকরিও পান।
[আরও পড়ুন: অনলাইন ক্লাসের ফাঁকে পর্নোগ্রাফি, বালককে টানা দেড় মাস ‘যৌন হেনস্তা’, ধৃত ৩ নাবালক]
তবে তার আগেই সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসেন চম্পা ও তাঁর পরিবারের বেশ কয়েকজন। ২০১২ সালের ৩০ জুলাই কলকাতায় অস্ত্র-সহ আত্মসমর্পণ করেন চম্পা। স্পেশ্যাল হোমগার্ডের চাকরিও পান। এরপর চম্পা এবং হেমন্তের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১৪ সালেই বিয়ে করেন দু’জনে। পুরুলিয়া জেলা পুলিশের তত্ত্বাবধানে বেলগুমা পুলিশ লাইনে বিয়ে হয় তাঁদের।
এভাবেই চলছিল সংসার। ইতিমধ্যেই সন্তানেরও জন্ম দেন চম্পা। তবে তারপর থেকেই দাম্পত্যে ফাটল ধরতে থাকে। কারণ, হেমন্তের দাবি, ওই সন্তানের বাবা তিনি নন। তা নিয়ে বদমেজাজি হেমন্ত ও চম্পার অশান্তি বাড়তে থাকে। ক্রমশ উচ্ছৃঙ্খল হয়ে ওঠেন হেমন্ত। অভিযোগ, চম্পাকে শারীরিক অত্যাচার করতে শুরু করেন। একাধিকবার পুলিশে অভিযোগও জানান চম্পা।
স্পেশ্যাল হোমগার্ডের চাকরির মাঝে ইভটিজিংয়ের অভিযোগও ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। পুরুলিয়ার বেলগুমা পুলিশ লাইনের আবাসনে বসবাস করতেন ঠিকই। তবে টানা ২৫ দিন ধরে চাকরিতে হাজিরা দেননি হেমব্রম। তারপরই সোমবার সকালে বড়সড় কাণ্ড। সন্তানের পিতৃপরিচয় নিয়ে ঝগড়াঝাটির জেরেই কি সন্তানকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুন করে হেমন্ত? আত্মঘাতীও হয় সে। চম্পাকে খুনের চেষ্টা করে। তবে কোনওক্রমে প্রাণরক্ষা হয় তাঁর। ঠিক কী কারণে এমন চরম সিদ্ধান্ত নিলেন হোমগার্ড, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।