সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: উৎকর্ষ বাংলা থেকে পুরুলিয়ার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ট্যুরিস্ট গাইডদের পর্যটন বিভাগের আওতায় আনল রাজ্য। ‘এক্সপেরিয়েন্স বেঙ্গলের’ ট্যাগ দিয়ে পুরুলিয়ার ৬৯ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গাইডকে জ্যাকেট, টুপি ও ব্যাজ দিল রাজ্যের পর্যটন বিভাগ। সোমবার পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনিক ভবনে জেলাশাসক রজত নন্দার উপস্থিতিতে ওই ‘ট্যুরিস্ট গাইড কিট’ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পথপ্রদর্শকদের হাতে তুলে দেয় পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই সরকারি গাইডরা যাতে পর্যটক পেয়ে আয়ের মুখ দেখতে পারেন তার সমস্ত ব্যবস্থা করছে জেলা প্রশাসন।
জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন তাদের ওয়েবসাইট purulia.gov.in-এ নাম ও মোবাইল নম্বর নথিভুক্ত করেছে। সেই সঙ্গে জেলার কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্রের হোটেলের সঙ্গেও আলাদাভাবে তাঁদের যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এখানেই শেষ নয়। তাঁদের আয় সুনিশ্চিত করতে পুরুলিয়া জেলা হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাও করা হয়েছে। বছরভর তাঁরা যাতে পর্যটক পান তার নিশ্চয়তা দেবে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। এদিনের অনুষ্ঠানে জেলাশাসক ছাড়াও ছিলেন জেলার পর্যটন দেখভাল করা অতিরিক্ত জেলাশাসক ( ভূমি ও ভূমি সংস্কার ) রাজেশ রাঠোর, ওসি ট্যুরিজম ড.ওয়ালিউল্লা ও বাঘমুন্ডির বিডিও আর্য তা। এই বিষয়ে জেলাশাসক বলেন, “উৎকর্ষ বাংলা থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গাইডরা রাজ্যের পর্যটন বিভাগের তালিকাভুক্ত হলেন। এঁরা যাতে বছরভর কাজ পান সেই বিষয়টি আমরা দেখছি।”
[আরও পড়ুন: ঘুষ নিলে ছাড় পাবেন না সরকারি আধিকারিকরা, BLRO-দের কড়া বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর]
পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, উৎকর্ষ বাংলা থেকে গতবছরই বাঘমুন্ডি ব্লকে দুধাপে ‘নিউ ট্যুরিস্ট গাইড ট্রেনিং’ নামে একটি কোর্স করানো হয় ইচ্ছুক তরুণ-তরুণীদের। বাঘমুন্ডি ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে প্রথম ধাপে ২৯ জন ও দ্বিতীয় ধাপে ২৫ জন মোট ৫৪ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তার পর পুরুলিয়া শহরে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে একাধিক ব্লক থেকে আরও ১৫ জন তরুণ-তরুণী এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে তাঁদেরকে শংসাপত্র দেওয়া হয়। এর পরই রাজ্যের পর্যটন বিভাগ তাঁদেরকে তালিকাভুক্ত করে পরিচয়পত্র দেয়। সঙ্গে আরও একধাপ এগিয়ে জ্যাকেট, টুপি ও ব্যাজ দেওয়া হল। গত বছর যারা গাইডের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে বেশ কিছুজন এই কাজ শুরু করে দিয়েছেন। প্রশাসন তাঁদেরকে পর্যটক দেওয়ার পাশাপাশি ওই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গাইডরা নিজ উদ্যোগেও বিভিন্ন ট্যুর এন্ড ট্রাভেল কোম্পানি ও হোটেলের সঙ্গে যোগাযোগ করে পর্যটক পাচ্ছেন।
যেহেতু বাঘমুন্ডি ব্লকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ট্যুরিস্ট গাইডের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ৫৪ জন। তাই সেখানে ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে পর্যটন সহায়তা কেন্দ্রের কিয়স্ক খুলে পর্যটন সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য-সহ এই গাইডদের কাজের সুযোগ করিয়ে দেওয়া হবে। ওই কিয়স্ক খুব দ্রুত চালু হবে বলে এদিন জেলাশাসক ইঙ্গিত দেন। ৬৯ জন গাইডদের মধ্যে একাধিক মহিলা গাইডও রয়েছেন। ‘নিউ ট্যুরিস্ট গাইড’-র প্রশিক্ষণ যারা নিয়েছেন তাঁদের মধ্যে অনেকেই এখনও লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। মূলত পর্যটনকে ভালোবেসেই এই গাইড-র প্রশিক্ষণ নেন তাঁরা। সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিদ্যা নিয়ে স্নাতকোত্তর সুদীপ্তা দত্ত বলেন, “আমার বেড়াতে খুব ভালো লাগে। তাই এই নিউ ট্যুরিস্ট গাইডের প্রশিক্ষণ নিয়ে রাখলাম। এই কাজে একটা আলাদা অ্যাডভেঞ্চার রয়েছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি এই কাজও করে যাব।”
[আরও পড়ুন: এবার রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজে র্যাগিংয়ের অভিযোগ, বিধায়কের দ্বারস্থ ‘নির্যাতিতা’ ছাত্রী]
একইভাবে বাংলায় স্নাতক বধূ পুরুলিয়া শহরের ভাটবাঁধের ছবি মাহাতো বলেন, ” এই জেলার পর্যটন কেন্দ্র তো শুধু অযোধ্যা পাহাড় নয়। গড় পঞ্চকোট, বড়ন্তি, জয়চন্ডী পাহাড়, দুয়ারসিনি, দোলাডাঙ্গা রয়েছে। প্রশিক্ষণে এই বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। এখানে কী কী সাইট সিন আছে তা ছবি সহকারে জানানো হয়। এর পর থেকে পুরোপুরিভাবে এই কাজে যুক্ত হব।” প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আরেক গাইড অযোধ্যা হিলটপের শম্ভুনাথ মুড়ার কথায়, ” প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর থেকেই আমি কাজ শুরু করে দিয়েছি। তবে আমাদেরকে রাজ্য পর্যটন বিভাগ তালিকাভুক্ত করায় এবার আরও বেশি করে কাজ মিলবে।” সরকারি প্রশিক্ষণ ছাড়াও এই গাইডরা জেলার পর্যটনে নানান পাঠ নিয়ে নিজেদেরকে আরও ভালোভাবে তৈরি করেছে।
দেখুন ভিডিও: