সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এত বারণ করা সত্ত্বেও যদি ইউক্রেনে (Ukraine) হামলা হয়, তাহলে রাশিয়াকে (Russia) ভয়ংকর জবাব দেওয়া হবে। আশঙ্কার মুখে থাকা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেন্সকিকে ফোনে এমনই ভাষায় আশ্বাস দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন (Joe Biden)। তিনি বলেন, ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগলিক সংহতি রক্ষায় বদ্ধপরিকর আমেরিকা।
মোটের উপর এখন ওই বিশেষ ভৌগোলিক অঞ্চলের হাওয়া যে চরম উত্তপ্ত তা স্পষ্ট। দিন কয়েক আগেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দিকে হুঁশিয়ারি ছুড়ে দিয়ে জো বাইডেন বলেছিলেন, রাশিয়া যদি ইউক্রেনে হামলা চালায়, তবে তার ফল ভাল হবে না। মস্কো পড়শি দেশে আক্রমণ করলে প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করা হবে বলেও চলতি সপ্তাহে হুমকি দিয়েছে আমেরিকা। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল করে রাশিয়া। তারপর মস্কোর উপর একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা জারি করে ওয়াশিংটন।
[আরও পড়ুন: ‘তালিবান মনে করে আমার শরীরটাও ওদের’, বিস্ফোরক দাবি একমাত্র আফগান পর্ন তারকার]
এবার এক শীর্ষ মার্কিন আধিকারিক জানিয়েছেন, রুশ বাহিনীর হামলায় কিয়েভ বিপন্ন হলে খোদ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হতে পারে। যুদ্ধ হলে দুনিয়া বদলে যাবে বলেও সম্প্রতি সতর্ক করেন বাইডেন। এদিকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা মনে করছেন রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে দ্রুত বাড়ছে যুদ্ধের সম্ভাবনা। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা উস্কে কিয়েভের পাশে দাঁড়িয়েছে আমেরিকা ও ন্যাটো সামরিক জোট।
বিগত কয়েকদিন ধরেই ইউক্রেন ও বেলারুশ সীমান্তে সেনার সংখ্যা বাড়িয়ে চলেছে রাশিয়া। ন্যাটো সামরিক জোটে কিয়েভকে যেন কোনওভাবেই জায়গা দেওয়া না হয় সেই দাবি জানিয়েছে মস্কো। পাশাপাশি, পূর্ব ইউরোপের একাধিক ঘাঁটি থেকে ফৌজ সরাতে হবে আমেরিকা ও ন্যাটো জোটকে বলে দাবি করেছে তারা। বিশ্লেষকদের মতে, পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর সম্প্রসারণে উদ্বিগ্ন মস্কো। এবার আমেরিকার নেতৃত্বে ওই সামরিক জোটে ইউক্রেন যোগ দিলে, রাশিয়ার সীমান্তের কাছে এসে পড়বে বিরোধী শিবির। তাই প্রতিরক্ষার কৌশলগত কারণেই ইউক্রেন দখল করে পূর্ব ইউরোপ ও নিজেদের মধ্যে একটি ‘বাফার জোন’ তৈরি করতে চাইছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বিষয়টি নিয়ে মধ্যস্থতা করতে পুতিনের সঙ্গে গত কয়েকদিনে বেশ কয়েক দফা ভিডিও কনফারেন্স করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাক্রোঁ। পুতিনও তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন, তাঁরাও শান্তিই চান। আক্রমণাত্মক হওয়ার কোনও পরিকল্পনাই নেই তাঁদের।
[আরও পড়ুন: আরও নিম্নমুখী দেশের কোভিড গ্রাফ, তবে নতুন করে চিন্তা বাড়াচ্ছে মৃতের সংখ্যা]
তবে পুতিনের মুখের কথাতেই আশ্বস্ত হচ্ছে না বাকি দুনিয়া। দিনকয়েক আগেই রুশ হামলা ঠেকাতে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করতে জেলেন্সকির সঙ্গে ফোনে আলাপ সারেন বাইডেন। একইসঙ্গে ন্যাটো জোটে অন্তর্ভুক্ত ইউরোপের দেশগুলির রাষ্ট্রনায়কদের সঙ্গেও ফোনে আলাপ করেন তিনি। নিজের বার্তায় বাইডেন স্পষ্ট জানিয়েছেন, বিদেশি আগ্রাসনের পরিস্থিতিতে কিয়েভের পাশে দাঁড়াবে ওয়াশিংটন।
বিগত কয়েকমাস ধরেই পূর্ব ইউরোপে ন্যাটো জোটের প্রভাব বিস্তার নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছে রাশিয়া। সম্প্রতি, আমেরিকার নেতৃত্বাধীন সামরিক গোষ্ঠীটিতে কিয়েভের যোগ দেওয়ার জল্পনার পর থেকেই ইউক্রেন সীমান্তে অন্তত ১ লক্ষ সেনা মোতায়েন করেছে মস্কো। স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবিতে মিলেছে আসন্ন যুদ্ধের ইঙ্গিত! এহেন পরিস্থিতিতে কিয়েভের পাশে দাঁড়িয়েছে আমেরিকা, ব্রিটেন ও কানাডা। রুশ বাহিনীকে রুখতে ইতিমধ্যেই ইউক্রেনের হাতে অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল তুলে দিয়েছে ব্রিটেন। শুধু তাই নয়, ইউক্রেনের ফৌজকে মদত দিতে বিশেষ কমান্ডো বাহিনী পাঠিয়েছে কানাডা।
মস্কোর উপর চাপ বাড়িয়ে সম্প্রতি ইউক্রেনের হতে হাতিয়ার ও যুদ্ধের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের একটি বিশাল ভাণ্ডার তুলে দিয়েছে আমেরিকা। মার্কিন নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন চলতি মাসে বা আগামী মাসেই পড়শি দেশটিতে হামলা চালাতে পারে পুতিনের ফৌজ। এদিকে, সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে রাশিয়া। পাশাপাশি, ন্যাটো গোষ্ঠীতে ইউক্রেনকে অন্তর্ভুক্ত না করার দাবি জানিয়েছে রাশিয়া। এর অন্যথা হলে সামরিক পদক্ষেপ করা হবে বলে হুমকি দিয়েছে মস্কো। এহেন পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের পৌঁছেছে ৩০ জনের ব্রিটিশ কমান্ডো বাহিনী। একইসঙ্গে প্রায় ২ হাজার ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী হাতিয়ার ও পাঠিয়েছে লন্ডন। ভবিষ্যতে আরও হাতিয়ার পাঠান হবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা সচিব বেন ওয়ালেস। ইতিমধ্যে কিয়েভকে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের হাতিয়ার দিয়েছে আমেরিকা। পাশাপাশি, পূর্ব ইউরোপে প্রায় ৫০ হাজার ফৌজ মোতায়েন করতে পারে আমেরিকা বলে সূত্রের খবর।