গৌতম ব্রহ্ম: ব্রঙ্কোস্কপি করে বের করা যায়নি। এমনই কিম্ভূত আকারের মালার টুকরো। শেষমেশ গলায় ফুটো করে বের করা হল ১ সেন্টিমিটার লম্বা ‘বিডস’। বছর দশেকের তারকনাথ সরকারের বিপদ এসেছিল খেলার ছলেই। খেলতে খেলতে মুখে মালা পুরে দিয়েছিল দশ বছরের একরত্তি। ঢোক গিলতে গিয়েই তার একটা দানা সটান ভেতরে। খুদের ওপেন হার্ট সার্জারি করার নিদান দিয়েছিল স্থানীয় হাসপাতাল। শেষমেশ নতুন জীবন এসএসকেএম হাসপাতালের ইনস্টিটিউট অফ অটো রাইনো ল্যারিঙ্গোলজি হেড অ্যান্ড নেক সার্জারি বিভাগে।
ঘটনা গত শুক্রবারের। খেলতে খেলতে কখন যে প্লাস্টিকের পুঁতি গিলে ফেলেছিল কৃষ্ণনগরের বছর দশেকের তারকনাথ সরকার, কেউ বুঝতেই পারেননি। মুহূর্তে শুরু প্রবল শ্বাসকষ্ট। বমির তোড়ে কাহিল অবস্থা। নদিয়ার কৃষ্ণনগরের সরকার পরিবারের তখন মাথায় হাত। প্রায় দেড়শো কিলোমিটার পথ উজিয়ে এসএসকেএমে (SSKM) নিয়ে আসা হয় শিশুটিকে। এসএসকেএম-এর ইনস্টিটিউট অফ অটো রাইনো ল্যারিঙ্গোলজি হেড অ্যান্ড নেক সার্জারি বিভাগের ডিরেক্টর ডা. অরুণাভ সেনগুপ্তর তত্ত্বাবধানে তৈরি হয় মেডিক্যাল বোর্ড।
[আরও পড়ুন: আইপিএলের পরই আয়ারল্যান্ডে টি-২০ সিরিজ খেলতে যাবে ভারত, ঘোষিত দিনক্ষণ]
শিশুটিকে পরীক্ষা করে চিকিৎসকরা জানান, যে বায়ু পথ দিয়ে ফুসফুসে বাতাস পৌঁছয় তাকে বলে ব্রঙ্কাস (Bronchus)। ব্রঙ্কাসের সেই ডান অংশেই আটকে পাথরের মালার টুকরো। পাথরের মালার দানা। জিনিসটা ডিম্বাকৃতি, পিচ্ছিল, আকারেও যথেষ্ট বড় হওয়ায় সাধারণ ব্রঙ্কোস্কপি করে বের করা যায়নি। ফাইবার অপটিক ব্রঙ্কোস্কপি করে শেষমেশ বের করা হয় দানাটিকে। অধ্যাপক ডা. অরুনাভ সেনগুপ্তের তত্ত্বাবধানে দেড় ঘণ্টার টানা অস্ত্রোপচারে ছিলেন ডা. অরিন্দম দাস, ডা. এস কাঞ্জিলাল, ডা. সায়ন হাজরা, ডা. রেশমা। সরু তারের মতো একটি যন্ত্র দিয়ে দানাটি ব্রঙ্কাস থেকে অনেকটা তুলে আনা যায়। তারপর গলার সামনে ফুটো করে সেখান থেকে বের করে আনা হয়।
ভাগ্যিস ওইভাবে বের করা গিয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওভাবে বের করা না গেলে ফুসফুস কেটে বার করতে হতো দানাটি। এতে শিশুটির শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কা ছিল। গলার ফুটোটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই মুহূর্তে কথা বলতে পারছে শিশুটি।
[আরও পড়ুন: বাড়ছে যুদ্ধের ঝাঁজ, চার ঘণ্টার মধ্যে সমস্ত ভারতীয়কে খারকভ ছাড়ার নির্দেশ কেন্দ্রের]
ডা. অরিন্দম দাসের কথায়, গলায় ছোটোখাটো ফরেন পার্টিকল আটকে যাওয়া নতুন নয়। কিন্তু কিম্ভূত আকারের ১ সেন্টিমিটার মালার দানা! তা বের করার ঘটনা কার্যত প্রথম এসএসকেএমে। চিকিৎসকদের কথায়, মা বাবার উদাসীনতার জন্যই শিশুর এমন বিজাতীয় বস্তু গিলে ফেলার ঘটনা বাড়ছে। ডা. সায়ন হাজরা জানিয়েছেন, বাচ্চারা যখন খেলছে অভিভাবকরা লক্ষ্য রাখুন। বাচ্চা যদি কিছু গিলে ফেলে তা নিয়ে বাড়িতেই ‘ডাক্তারি’ করতে বারণ করেছেন চিকিৎসক। ডা. সায়ন হাজরার কথায়, “শিশুর গলায় কিছু আটকে গেলে আঙুল দিয়ে বের করতে যাবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।”