সময় বাঁচাতে প্যাকেটফুডে পেটপুজো করবেন না। এই অভ্যাসে বিপদ ঘোরতর। ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে স্বাভাবিক জীবন। সতর্ক করলেন ফর্টিস হাসপাতালের বিশিষ্ট নিউরোলজিস্ট ডা. অমিত হালদার। শুনলেন সুমিত রায়৷
রান্নার কষ্ট লাঘব করতে এখন কর্মরত গৃহিণীরা অধিকাংশই প্যাকেটফুডের উপর নির্ভরশীল। মাত্র ৫-১০ মিনিটেই সুস্বাদু রান্না রেডি। তাই খামোখা কষ্ট করতেই বা যাবেন কেন? এই ভরসাযোগ্যতা কিন্তু মোটেই ভাল নয়। প্যাকেট ফুডে উপস্থিত থাকে নানা ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু। যা হয়তো আমরা সহজে বুঝতে পারি না। কিন্তু এই খাবার খেতে থাকলে তা সাময়িকভাবে একজনকে প্যারালাইসিস পর্যন্ত করতে পারে। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে এই তৃপ্তি কতটা অতৃপ্তিকর পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে! তারপর কেউ যদি এমন হওয়ার পরও ঠিকমতো চিকিৎসা না করেন তাহলে বিপদ আরও মারাত্মক হতে পারে।
[আরও পড়ুন: ফেসবুক নয়, সমালোচনামূলক চিন্তার মাধ্যমেই স্পর্শকাতর নাগরিক হবে নয়া প্রজন্ম]
এক নজরে রোগ
প্যাকেটফুড থেকে প্যারালাইসিসের সমস্যার জন্য দায়ী একধরনের ব্যাকটেরিয়া যার নাম ক্লোসট্রিডিয়াম বটুলিনাম (Clostridium botulinum), যার বিষ-বটুলিনামটক্সিন সবচেয়ে বিষাক্ত টক্সিনগুলির মধ্যে একটি। যা আমাদের শরীরে খাদ্যের মাধ্যমেই প্রবেশ করে। এই বিষ আমাদের শরীরের স্নায়ু এবং মাংসপেশীর যোগস্থলে গিয়ে আক্রমণ করে যার ফলে পক্ষাঘাত হয়ে যায়। যা স্বল্পমেয়াদি। এই রোগ শরীরের যেকোনও মাংসপেশী বা স্নায়ুকে দুর্বল এবং শিথিল করে দিতে পারে।
শরীরে প্রবেশ
এই ব্যাকটেরিয়া মূলত শরীরে প্যাকেজ ফুডের মাধ্যমে প্রবেশ করে। বিশেষ করে প্যাকেটজাত খাবার যদি কাঁচা বা ভাল করে উচ্চ তাপে রান্না না করে খাওয়া হয় সেক্ষেত্রে বিপদ বেশি। বিশেষ করে প্যাকেটজাত মাছ, মাংস (সাসেজ), মটরশুঁটি, সালামি, লোকাল বা ঘরে বানানো টম্যাটো সস, চিজ, তেলে দেওয়া রসুন ইত্যাদি থেকে এই ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করার সম্ভাবনা বেশি। যদি সঠিক পরিমাণে প্রিজারভেটিভ না দেওয়া হয় বা সঠিকভাবে স্টোর না করা হয়, তখন এই ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে এই অসুখকে বলা হয় ইনফ্যান্ট বতুলিজম। যা মধু থেকে বা কর্ন সিরাপ (গাঢ় মিষ্টি রোজে ভুট্টার দানা) থেকে হতে পারে। মধু যদি অনেকদিন প্রিজার্ভ করা হয় এবং সঠিক পাত্রে যদি রাখা না হয় সেই ক্ষেত্রে এই ব্যাকটেরিয়া থেকে বতুলিজম হতে পারে।
কেন জন্মায় এই ব্যাকটেরিয়া?
প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে খাবার সংরক্ষণে যে প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা হচ্ছে তার অম্লত্ব কম হলে।
সাধারণত প্যাকেজিং-এর ক্ষেত্রে এমন চেষ্টাই করা হয় যাতে তাতে অক্সিজেন ঢুকতে না পারে, আর এই ব্যাকটেরিয়াগুলিও সচরাচর এমন পরিবেশেই জন্মায়।
প্যাকেট, বোতল, যে কোনও প্লাস্টিকের পাত্র বা ফয়েলে খাবার প্যাকেট করা হলে সেটা যদি ঠিকমতো জীবাণুবিহীন না করা হয় সেক্ষেত্রে এই ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
[আরও পড়ুন: সাবধান! প্রিয় মানুষটির প্রাথমিক চিকিৎসায় এই পাঁচটি ভুল করেন না তো?]
এত জটিল কেন?
এই ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে মুশকিল হল ব্যাকটেরিয়া মারা গেলেও তার বিজগুটি (স্পোরেস) থেকেই যায়।টমেটো, টক ফল বা যে কোনও রকম আচারে যেহেতু অম্লের মাত্রা বেশি তাই এগুলিতে এই ব্যাকটেরিয়া জন্মায় না। কিন্তু মাংস, মাছ, সবজি যেগুলির অম্লত্ব (PH লেভেল) বেশি সেগুলির ক্ষেত্রে এই ব্যাকটেরিয়া জন্মায় সহজেই। শুধু তাই নয়, এগুলোকে প্যাকেজিং করার আগে যখন উচ্চ তাপে গরম করা হচ্ছে তখন হয়তো ব্যাকটেরিয়া মরে যেতে পারে কিন্তু বিজগুটি নষ্ট হয় না। আর পরবর্তী সময় যখন এগুলো অক্সিজেনবিহীনভাবে প্যাকেট করা হচ্ছে, তখন বিজগুটি থেকে ব্যাকটেরিয়া পুনরায় জন্মানোর সঠিক পরিবেশ পেয়ে যাচ্ছে। সুতরাং প্যাকেজিংয়ের আগে যখন উচ্চ তাপে গরম করা হচ্ছে তখন প্রেশার কুকারের মধ্যে দিয়ে গরম করলে তবে এই বিজগুটিও নষ্ট করা সম্ভব।
সাবধানতা
পক্ষাঘাত হলে তো এমনিতে বাড়ির লোকজন তৎপর হন রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে। এই ক্ষেত্রে খুবই প্রয়োজন হল সঙ্গে সঙ্গে ICU-তে ভরতি করা, কারণ হার্ট, ফুসফুস বা অন্য কোনও গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের স্নায়ু এবং মাংসপেশীর সংযোগস্থলে এই বিষ প্রভাব ফেললে সেক্ষেত্রে রোগীর মরণ-বাঁচন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
The post সময় বাঁচাতে প্যাকড ফুডে পেটপুজো? সাবধান, অচিরেই বিপদ appeared first on Sangbad Pratidin.