দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: সুন্দরবনে (Sundarbans) বাড়ল বাঘের সংখ্যা। সম্প্রতি প্রকাশিত হওয়া বাঘ গণনার পরিসংখ্যান থেকে এই তথ্য জানা গিয়েছে। একসঙ্গে ৮টি বাঘ বাড়ার ঘটনা সুন্দরবনে এই প্রথম। আর সুন্দরবনের জঙ্গলে বাঘ বেড়ে যাওয়ায় খুশি প্রায় সকলেই।
গত বছর সুন্দরবনের জঙ্গলের বিভিন্ন এলাকায় ৫৭৮টি ক্যামেরা লাগিয়ে বাঘ গণনা শুরু করে সুন্দরবন বনদপ্তর এবং ব্যাঘ্র প্রকল্প। তাদের এই বাঘ গণনায় সাহায্য করেছিল WWF। কাজে লাগানো হয়েছিল বিভিন্ন বিদেশি প্রযুক্তির। আর তার ফলে বাঘের মোটামুটি একটি সঠিক পরিসংখ্যান উঠে এসেছে এমনটাই মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের। সেখানে দেখা যায়, সুন্দরবনে বাঘ বেড়েছে ৮টি। সর্বশেষ পরিসংখ্যানে বাঘের সংখ্যা ছিল ৮৮টি। এবার তা বেড়ে হল ৯৬টি। বাঘ গণনায় একসঙ্গে ৮টি বাঘ বেড়ে যাওয়ার ঘটনা সুন্দরবনের ইতিহাসের এই প্রথম।
সূত্রের খবর, সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা প্রতি বছর বেড়েই চলেছে। আর বাঘের সংখ্যা বাড়ায় আশার আলো দেখছেন ব্যাঘ্র বিশেষজ্ঞরা। সুন্দরবনে প্রায় দু’মাস ধরে ক্যামেরা বসিয়ে বাঘের গণনা চলে। বিভিন্ন নদী ও খাঁড়িতে বসানো হয়েছিল এই ক্যামেরা। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকায় যেমন ক্যামেরা বসিয়ে গণনা হয়েছিল, তেমনই গণনা করা হয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার বন সংলগ্ন এলাকায়।
[আরও পড়ুন: টেলিস্কোপে ধরা পড়ল চাঁদের স্পষ্ট ছবি, প্রশংসিত ক্যালিফোর্নিয়ার যুবক]
২৬ ডিসেম্বর-১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত হয়েছিল টাইগার প্রজেক্ট এলাকায় ক্যামেরার সাহায্যে বাঘ গণনার কাজ। তারপর ২২ জানুয়ারি-১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার বন্য এলাকায় বাঘ গণনা। ক্যামেরা থেকে প্রাপ্ত ছবিগুলি নিয়ে যথেষ্ট হিসাবনিকাশ করে তারপরেই পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়েছে বলে বনদপ্তর সূত্রে খবর। আর এই পুরো কাজটা হয়েছে দেরাদুন থেকেই।
এ বিষয়ে বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সুন্দরবনের বাঘ বাড়ার ঘটনা সত্যিই একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। এই সংখ্যাটা পরবর্তীতে যাতে সেঞ্চুরি অতিক্রম করে যায় তার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সুন্দরবনের বাঘ বাড়ার ঘটনা থেকে বোঝা যায় যে সুন্দরবনের বন্যপ্রাণীরা যথেষ্ট সুরক্ষিত। সুন্দরবনের ৪২০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ৩৭০০ এলাকায় বাঘের বিচরণ ক্ষেত্র আছে। বাঘ বাড়াতে গেলে আগামী দিনে ম্যানগ্রোভ জঙ্গল বাড়াতে হবে।”
দেখুন ভিডিও:
[আরও পড়ুন: লকডাউনের ফলে কমছে দূষণ, বিহারের গ্রাম থেকে দৃশ্যমান এভারেস্ট]
ভারত আর বাংলাদেশ মিলিতভাবে সুন্দরবনের অবস্থান। সুন্দরবনের বেশিরভাগ এলাকা বাংলাদেশের দখলে অবস্থিত। ফলে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের দিক থেকে বাঘ ভারতে যেমন ঢুকে পড়ে। তেমনই ভারতের বাঘ ও বাংলাদেশের জঙ্গলে যাতায়াত করে তারও প্রমাণ পেয়েছে বনদপ্তর। বাংলাদেশের দিক দিয়ে আগে বন্যপ্রাণী চোরাকারবারীরা ঢুকে পড়ত সুন্দরবনের জঙ্গলে। ইদানীং বনদপ্তরের নজরদারিতে তা অনেকটাই কমেছে। আর চোরা শিকারিদের উপরে নজরদারি ফলেই বেড়েছে বাঘের সংখ্যা।
এ বিষয়ে ব্যাঘ্র প্রকল্পের অধিকর্তা ডঃ সুধীর চন্দ্র দাস বলেন, “সুন্দরবনের জঙ্গলে বাঘ বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারণ হল সুন্দরবন বাঘের উপযুক্ত আবাসস্থল এবং সেখানে বাঘেরা নিরাপদে আছে এটাই প্রমাণ করে। তাছাড়া প্রতিটি বাঘের ‘হ্যাবিচুয়াল অ্যাকশন’ সেটিও সুন্দরবনে দারুণভাবে কার্যকারী হচ্ছে।”
ব্যাঘ্র বিশেষজ্ঞ জয়দীপ কুণ্ডু বলেন, “সুন্দরবনের জঙ্গলে নেট ফেন্সিং দেওয়ার কারণে জঙ্গলের বাঘ বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে না। এর ফলে বাঘের মৃত্যুর হার যেমন একদিকে কমেছে তেমনই জঙ্গলে যথেষ্ট পরিমাণে খাবারেরও জোগান বেড়েছে। শুধু তাই নয় প্রতিটা নদীতে বা খাঁড়িতে বনদপ্তরের ই-পেট্রোলিং চালু হওয়ার কারণে বাঘ পাচারকারীও কমেছে।
The post করোনা সংকটের মাঝেও সুখবর, সুন্দরবনে বাড়ল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা appeared first on Sangbad Pratidin.