সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মারণ করোনার (Covid-19) দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিধ্বস্ত গোটা ভারত। ইতিমধ্যে অনেক রথী-মহারথীরাই মারণ কোভিডে প্রাণ হারিয়েছেন। এবার করোনায় প্রয়াত হলেন বিখ্যাত পরিবেশবিদ এবং চিপকো আন্দোলনের জনক সুন্দরলাল বহুগুণা (Sunderlal Bahuguna)। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। উত্তরাখণ্ডের হৃষিকেশের এইমস হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা চলছিল তাঁর। শুক্রবার সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সুন্দরলাল বহুগুণা। তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ (President Ramnath Kovind), প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi) থেকে শুরু করে উত্তরাখণ্ডের (Uttarakhand CM) মুখ্যমন্ত্রী তীরথ সিং রাওয়াত।
জানা গিয়েছে, গত ৮ মে সুন্দরলাল বহুগুণাকে শারীরিক অসুস্থতার হৃষিকেশের AIIMS হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছিল। সেখানেই তাঁর কোভিড পরীক্ষা হয়। এরপর তাঁর কোভিড নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে তাঁর অক্সিজেন লেভেল দ্রুত কমতে শুরু করে। এই সময় তাঁকে সাময়িক বাইপ্যাপ ভেন্টিলেশনে স্থানান্তিরতও করা হয়। কিন্তু তবুও শেষ রক্ষা হয়নি। হাসপাতালেই শুক্রবার জীবনাবসান হয় জনপ্রিয় এই পরিবেশবিদের। এরপরই তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। টুইটে লেখেন, “সুন্দরলাল বহুগুণার প্রয়াত হওয়া দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের বেঁচে থাকার বহুদিনের পুরনো নীতিকে মেনে চলতে প্রত্যেককে উদ্দীপিত করেছিলেন। তাঁর সারল্য কখনওই ভোলা যাবে না। তাঁর পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রইল।” শোকজ্ঞাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দও। রাষ্ট্রপতি লেখেন, “সুন্দরলাল বহুগুণার প্রয়াণে একটা গৌরবময় অধ্যায়ের সমাপ্তি হল। পদ্মবিভূষণ এই ব্যক্তি গান্ধীবাদী ছিলেন। তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।”
[আরও পড়ুন: ধর্মের ঊর্ধ্বে মানবতা, মৃত্যুশয্যায় মুসলমান করোনা রোগীকে কলমা পড়ে শোনালেন হিন্দু চিকিৎসক]
১৯৭০ সালে এই সুন্দরলালের হাত ধরেই শুরু হয়েছিল বহু চর্চিত এই “চিপকো আন্দোলন”। গান্ধীজির পথ অনুসরণকারী এই কিংবদন্তি পরিবেশবিদ গাড়োয়াল হিমালয়ের কোলে গাছ বাঁচানোর তাগিদে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। ওই বছর থেকেই উত্তরাখণ্ডের চামোলিতে গাছ কাটার প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু হয়। এর মধ্যেই ১৯৭৪ সালে সরকারের বন নীতির প্রতিবাদে তিনি দু’সপ্তাহ অনশন করেছিলেন। এই সময়ই আবার অলকানন্দা নদীর পাশে ২৫০০ গাছ কাটার কথা ঘোষণা করা হয়। তারপরই আরও বৃহত্তর আন্দোলন শুরু হয়। গ্রামে গাছ কাটার জন্য যন্ত্রাদি আসতেই বহুগুণার নির্দেশে গ্রামের মহিলারা গাছগুলিকে জড়িয়ে ধরেন। শেষপর্যন্ত বাধ্য হয়ে পিছু হটতে হয় সরকারকে। এই চিপকো আন্দোলনের ফলস্বরূপ সরকার ১৯৮০ সালে পরবর্তী ১৫ বছরের জন্য হিমালয়ের পাহাড়ি অঞ্চলে গাছ কাটার উপর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করা হয়। সেই সময় তাঁকে ‘হিমালয়ের রক্ষক’-এর তকমা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আবার ভাগীরথী নদীর উপরে তেহরি বাঁধ নির্মাণের বিরোধিতা করে সত্যাগ্রহ আন্দোলন এবং অনশনও করেছিলেন। আর এই কারণেই পরবর্তীতে বিখ্যাতও হয়েছিলেন।