সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সুনীল সুনীল সুনীল…। আরবসাগরের তীরে উঠল ঢেউ। ম্যাচ তখন সবে শেষ হয়েছে। জোড়া গোলে কেনিয়াকে ধরাশায়ী করে দেশকে ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ দিয়েছেন অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী। তবে শুধু একটা ট্রফি নয়। জাতীয় নায়ক যেন ঘুম ভাঙিয়ে দিয়েছেন ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীদের। সেই সঙ্গে দেশের ফুটবল সংস্কৃতিরও।
শুধু মুম্বই কেন! গোটা দেশই যেন এখন ডুব দিয়েছে সুনীল সাগরে। সেই উচ্ছ্বাসের ঢেউ লেগেছে নেটদুনিয়ায়। চোখ রাখলেই বোঝা যাচ্ছে বিশ্বকাপের আগে দেশের ফুটবলকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরতে চাইছেন অনুগামীরা। এই অনুরাগ যিনি জাগিয়ে দিতে পেরেছেন তিনি নিঃসন্দেহে সুনীল ছেত্রী। তাই ম্যাচ শেষে উঠল ‘সুনীল সুনীল’ আওয়াজ। আইপিএল-এর ম্যাচ নয়। মাঠে কোহলিরাও কেউ নেই। অথচ যেভাবে মুম্বইকররা রাত দশটাতে থেকে গলা ফাটালেন, তা ভারতীয় ফুটবলের জন্য নিঃসন্দেহে বড় বিজ্ঞাপন। অথচ দেশের ফুটবল অনুরাগের ছবিটা যে বরাবর এরকম তা তো বলা যায় না। ভারতীয়রা ফুটবল ভালবাসেন। কিন্তু যেহেতু বিশ্বকাপের মতো আন্তর্জাতিক আসরে দেশের খেলার সুযোগ নেই, তাই দেশবাসী যে যার মতো করে একটা দেশকে জড়িয়ে ধরেন। ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা তর্কে চায়ের কাপে তুফান ওঠে। আর বাকি থাকল ক্লাব ফুটবল। কিন্তু কোহলিদের জন্য যেভাবে গোটা দেশ এক হয়ে ওঠে, ফুটবল মানচিত্রে সে দৃশ্য খুব কমই দেখা যেত। অথচ স্কিলের অভাব নেই। সাফল্যেও খরা ছিল না। কিন্তু অভাব কিছু একটা ছিল। দক্ষতা, সাফল্য আর আবেগের মধ্যে সংযোগের ফাঁকটা বরাবর বড় হয়ে দেখা দিচ্ছিল। সেই সেতু হয়ে উঠেছেন অধিনায়ক নিজে। ফলে সুনীল ছেত্রীর হাত ধরেই যেন ঘুম ভাঙছে ভারতীয় ফুটবলের।
[ ম্যাজিসিয়ান সুনীলের জোড়া গোলে ধরাশায়ী কেনিয়া, ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ জয় ভারতের ]
দেশ খেলছে, দেশবাসী কেন বসে থাকবেন? কেন সমর্থন উজাড় করে দেবেন না? আর যদি নাই-ই দেন, আবেদন জানাতে দোষ কীসের? নেতা সুনীল এগিয়ে এসেছেন। যেখানে অভাব ছিল, সেখানে ভাবের ঘরে চুরি করেননি। সরাসরি আবেদন জানিয়েছেন ফুটবলপ্রেমীদের উদ্দেশ্যে। তাতেই ম্যাজিক হয়েছে। মাঠে বেড়েছে অনুরাগীর সংখ্যা। টিকিট বিক্রিও হয়েছে হু হু করে। দেশের ক্রিকেটের জন্য যে আবেগের বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে, বহুদিন পর তা যেন দেখা গেল দেশের ফুটবলের জন্য। ফুটবল যে আর ব্রাত্যজনের রুদ্ধসংগীত নয় তা প্রায় একা হাতেই প্রমাণ করেছেন সুনীল। দক্ষতা, জয়ের খিদের পাশাপাশি যে প্রচার, যে বিপণন, যে ব্র্যান্ডিংয়ের দরকার ছিল, সুনীল যেন তারই অ্যাম্বাসাডার। দেশের জার্সি গায়ে গোলের সংখ্যার নিরিখে ছুঁয়ে ফেলেছেন লিও মেসিকে। একশো ম্যাচ খেলা হয়ে গিয়েছে। শততম ম্যাচে এমন গোল করেছেন, যা দেখে যে কোনও আন্তর্জাতিক ফুটবলারই ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে উঠবেন। সেই সুনীলের আবেদনেই ম্যাজিক হয়েছে। মেসিকে ছুঁয়ে ফেলাটা বা অতিক্রম করাটা বড় কথা নয়। যে দেশের হয়ে তিনি খেলেন, ফিফা ব়্যাংকিংয়ের অনেক নিচে থাকা সে দেশ যেন ফুটবলেও তৃতীয় বিশ্বের দেশ। সে দেশকে জাগিয়ে তুলে গেলে শুধু দক্ষতাই শেষ কথা নয়। দরকার একজন জাতীয় নায়কের। যাঁর দিকে তাকিয়ে অনুরাগীরা বলতে পারবেন, অনেক না-থাকার মধ্যেও আমাদের একজন নায়ক আছেন, বলা বাহুল্য, ভারত অধিনায়ক সেই শূন্যস্থানটিই পূরণ করেছেন।
এরই মধ্যে এসে গেল বিশ্বকাপ। ফুটবল জ্বরে কাঁপবে গোটা বিশ্ব। ভারতও ব্যতিক্রম নয়। তবে এই ফুটবলপ্রেম দেশের খাতে প্রবাহিত হয়ে ফুটবল সংস্কৃতিতে এবার নতুন জোয়ার আনে কি না সেটাই দেখার।
The post ‘সুনীল’ সাগরে অবগাহন দেশবাসীর, ঘুম ভাঙছে ভারতীয় ফুটবলের appeared first on Sangbad Pratidin.