অভিজিৎ ঘোষ, জয়পুর: শুক্রবারের সন্ধ্যা পড়লেই রাজস্থানে জিজের গাড়ি বাড়তে থাকে। প্রতি ৫টি গাড়ির মধ্যে একটা জিজে থাকবেই। জিজে মানে বুঝলেন? জিজে মানে গুজরাটের গাড়ি। রাজস্থানিরা গুজ্জুভাই বলে তাদের সম্বোধন করে। কিন্তু গুজরাটের (Gujarat) কেন এত রাজস্থানি প্রেম? কেন প্রতি সপ্তাহে গুজারাটিদের লাইন লেগে থাকে রাজস্থানে? কারণ, মদ।
বিজেপি গুজরাটে মদ বিক্রি বন্ধ করেছে। কিন্তু সে তো নাম কে ওয়াস্তে। গুজরাটিদের মন থেকে মদ সরাতে পারেনি। তাই শুক্রবারের জয়পুর, যোধপুর, জয়সলমেঢ়ে গুজরাটের গাড়ির মেলা বসে যায়। এক দোকানদার হাসতে হাসতে বললেন, ইয়ে গুজরাটি লোগ আজিব সা হ্যায়। হোটেল লেগি ১২ হাজার কি, লিকার লেগি ৫ হাজার কি, লেকিন খানে কে লিয়ে ২৫ রুপাইয়া কি থালি ঢুন্ডেগা। মূলত শুক্রবার রাতে গুজরাটবাসীরা রাজস্থানে ঢোকে। ফিরে যায়, রবিবার সন্ধ্যা অথবা সোমবার সকালে। কিন্তু কী লাভ এই লিকারবিহীন রাজ্যের। কী লাভ এই লোকদেখানো নিষেধাজ্ঞার?
[আরও পড়ুন: বাঙালি থ্রিলার ‘ছোটলোক’-এর রক্তমাংসের ‘হিরো’ সাবিত্রীর গল্প শোনালেন পরিচালক ইন্দ্রনীল]
দিন দশেক ধরে রাজস্থানে (Rajasthan) প্রায় ২২০০ কিলোমিটার সফর করলাম। রাস্তা এক কথায় মখমলের মতো। জাতীয় সড়ক তাকিয়ে দেখার মতো। সিগন্যাল নেই রাস্তায়। নিজেদের খেয়ালে লোকে রাস্তায় চলছে। ট্রাফিক উৎপাত কম। অপরাধ কম। সীমান্ত এলাকায় কিছু ঘটনা অবশ্যই ঘটে। গেহলটের জমানায় নতুন নতুন টুরিজম স্পট বেড়েছে, পর্যটকও বেড়েছে। কিন্তু পাথর, সিমেন্ট আর কাপড়ের উপর জিএসটি নিয়ে ক্ষোভ আছে। ভোটে ব্যবসায়ী মহলকে সামনে রেখে সে নিয়ে বিজেপি-বিরোধী প্রচার আছে। কিন্তু গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ কংগ্রেস কতটা ফায়দা তুলতে পারবে, সেটাই প্রশ্ন।
গুজরাট ফর্মুলা রাজস্থানে প্রয়োগ করতে পারেনি মোদি-শাহর বিজেপি। প্রার্থী বদলে নতুন মুখ নিয়ে আসার চেষ্টা করে হার মেনেছে বিজেপি (BJP)। দলের রাজ্য নেতারা স্পষ্ট বলে দিয়েছিলেন, পুরনোদের উপেক্ষা করলে দলে বিদ্রোহ অবশ্যম্ভাবী। আর তার নেতৃত্ব দেবেন বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া। বিজেপি আর বিপ্লব করার চেষ্টা করেনি। প্রার্থী তালিকায় মিশেল রয়েছে। কিন্তু বসুন্ধরাকে তোয়াজ করা চলছেই। ফলে তর্কের খাতিরে যদি বিজেপি অলটারনেট টার্নে এবার জিতেও যায়, যোগী আদিত্যনাথের পোষ্যপুত্র বালকবাবার সত্তায় বসতে চাওয়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে যেতে পারে। কারণ, বসুন্ধরা ঘনিষ্ঠমহলে বলেছেন, নির্বাচনে জিততে দাও, তারপর দিল্লিকে বোঝাব এটা রাজস্থান, গুজরাট নয়।
[আরও পড়ুন: এক ফুল দো মালি! শুভমানের প্রেমের ক্রিজে নবাবকন্যাকে বোল্ড আউট শচীনকন্যার?]
একেবারে শেষে সুধীর সাহিলের কথা। জয়সলমেঢ়ের একটি পাঁচতারা হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার সুধীর। মূলত দিল্লিতে পড়াশোনা আর বেড়ে ওঠা। নয়ের দশকে তাজ বেঙ্গল হোটেলের গোড়াপত্তনের সময়ে চাকরি নিয়ে কলকাতা গিয়েছিলেন। মাস ছয়েক ছিলেন। এখন জয়সলমেঢ়ের হোটেলে। গল্প করতে করতে বাংলার রাজনীতির কথাও বলছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাও স্বাভাবিকভাবে এসেছে। হঠাৎ আলোচনার বাইরে গিয়ে বলতে শুরু করলেন, মোদিজি যেভাবে বাংলায় বিধানসভা ভোটের সময় দিদি… ও দিদি সুর তুলে তুলে জনসভায় ব্যঙ্গ করেছেন, সেটা একজন প্রধানমন্ত্রীকে মানায়? শেম…শেম…