রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ও ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: ঘাটালে ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে টুইট যুদ্ধে শুভেন্দু অধিকারী ও দেব। 'যুদ্ধে'র সূত্রপাত বিরোধী দলনেতার একটি টুইটকে কেন্দ্র করে। যেখানে তিনি একটি বাণিজ্য সংস্থার লেনদেনের তথ্য প্রকাশ্যে আনেন। দেখা যায়, ওই সংস্থা দুদফায় ৫০ লক্ষ টাকা কাউকে দিয়েছে। সঙ্গে পোস্ট করা ডায়েরির পাতায় রয়েছে দেবের নাম। তিনি দামী ঘড়ি ও মোবাইল উপহার নিয়েছেন বলেই ইঙ্গিত। এই পাতাগুলি পোস্টের উপর 'দেবের কীর্তি' বলে ক্যাপশনও দিয়েছেন দাপুটে বিজেপি নেতা। তিনি পুরো বিষয়টি খোলসা না করলেও সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে পুরো বিষয়টি জানিয়েছেন খোদ সাংসদ দেব-ই। সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীকে ধন্যবাদ জানিয়ে অভিনেতা-সাংসদের দাবি, আড়াই বছর থেকে চেপে থাকা কষ্ট আজ লাঘব হল। তবে তদন্তকারী সংস্থাকে দেওয়া তথ্য বিজেপি নেতা কীভাবে পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন দেব।
এক্স হ্যান্ডেলে শুভেন্দু তিনটি পাতা পোস্ট করেন। প্রথমটি একটি ব্যাঙ্কের লেনদেন ছবি। দেখা যাচ্ছে, আরণ্যক ট্রেডার্স থেকে কাউকে দুদফায় ২৫ লক্ষ টাকা করে মোট ৫০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। আর একটি ডায়েরির পাতার ছবি পোস্ট করা হয়েছে। লেখা রয়েছে, দেব মোবাইল ৭২ হাজার টাকা। দেব ঘড়ি ৪ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। তবে এই তথ্যের সত্যতা যাচাই করেনি সংবাদ প্রতিদিন ডট ইন। তবে শুভেন্দুর দাবি, গরুপাচারের টাকা নিয়েছিলেন দেব। ইডি তদন্ত শুরু হতেই তা ফেরত দিয়ে দেন। একইসঙ্গে ঘাটালের মানুষকে এমন 'অসৎ' মানুষকে ভোট না দেওয়ার আবেদন জানান তিনি। সূত্রের খবর, গরু পাচারের মূল অভিযুক্ত এনামুল হকের ভাইয়ের সংস্থা আরণ্যক ট্রেডার্স। এনামুলের ডায়েরির পাতার ছবিই নাকি পোস্ট করা হয়েছে বিরোধী দলনেতার এক্স হ্য়ান্ডেলে।
[আরও পড়ুন: সিগন্যালিং সমস্যার জেরে সাতসকালে মেট্রো বিভ্রাট, ভোগান্তিতে যাত্রীরা]
এ প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন ঘাটালের সাংসদ-অভিনেতা দেব। বলেন, "শুভেন্দুদার পোস্টটা দেখে কাকে ধন্যবাদ দেব বুঝতে পারছি না। হিরণকে নাকি শুভেন্দুদাকে। আমি হিরণকে দিয়েই শুরু করি। আড়াই বছর ধরে মনের মধ্যে অনেক কথা জমে ছিল। কোনও এজেন্সি নিয়ে যখন তদন্ত হয়, তখন সেই তদন্ত নিয়ে বেশি কথা বলা যায় না। আমি খুব আশ্চর্য হলাম এই যে ইডি-সিবিআই কাছে যে তথ্যপ্রমাণগুলো ছিল, সেটা শুভেন্দু অধিকারীর কাছে কেন এবং কীভাবে এল। এটা শুধুই ইডি বা সিবিআইয়ের কাছে থাকা উচিত। কিংবা হোম মিনিস্ট্রির কাছে থাকা উচিত, বা কোর্টের কাছে থাকা উচিত। এই চারজনের বাইরে আমার মনে হয় এই তথ্য আরও কাছে যাওয়া উচিত নয়। এগুলো খুবই গোপন নথি।" দেব আরও বলেন, ''এর থেকে বোঝা যায়, শুভেন্দু অধিকারীর কাছে সোর্স রয়েছে। তাছাড়া, আমি আগেও বলেছি, যে টাকাটা আমি নিয়েছিলাম, সেটা আমি ফিরিয়েও দিয়েছি। সেই তথ্যও আমি সোশাল মিডিয়ায় আপলোড করব।''
এক্স হ্যান্ডেলে দেব লেখেন, "ও শুভেন্দু দা, তুমি নাকি কোথায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছো, হিরণের পাল্লায় পড়ে তোমাকে তো কাউন্সিলরে নামিয়ে দিচ্ছে। ভালোবাসি বলে বললাম, আমিও জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো।" এর পর তাঁর সংযোজন, "আর রইলো কথা গরু চুরির টাকা,তোমার কোলের ছেলে হিরো হিরণ সেও পিন্টু মন্ডলের থেকে টাকা নিয়েছেন,তাহলে উনিও..।" এখানেই থামেননি দেব। একটি পোস্টারের ছবির সঙ্গে তিনি লেখেন, "তাহলে উনিও কি গরু চোর? শুভেচ্ছা দুজনকেই। আর একটা কথা আমার ভদ্রতা কিন্তু আমার দুর্বলতা নয়।"
[আরও পড়ুন: শাহ-যোগী ‘বিভেদ’ উসকে দেওয়ার কৌশল, দিল্লি জয়ে নয়া চাল কেজরির]
এই জনৈক পিন্টু মণ্ডলের পরিচিতি একজন শো অর্গানাইজার। সিনে ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি পরিচিত মুখ। তাঁর সঙ্গে কাজ করেছেন বহু নামী-দামী অভিনেতা-অভিনেত্রী। তাঁর সঙ্গে শুধু দেব নন, কাজ করেছেন হিরণ-ও। তাহলে গরু পাচারের টাকা বিজেপি প্রার্থী হিরণের কাছেও গিয়েছে হলে দাবি করলেন দেব।