সুমিত বিশ্বাস ও অমিতলাল সিং দেও: মুখ পুড়ল বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari)। শারুল উৎসবে যোগ দিতে এসে মাত্র ২৫০-৩০০ জন জমায়েত হওয়ায় সেখানে যোগ না দিয়েই ফিরে গেলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিষয়টিকে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ। এক্স হ্যান্ডেলে লেখে , "লোক হয়নি বলে পাশের হোটেলে বসে থেকে পালিয়ে গেল শুভেন্দু। বয়কট করল ভূমিজ সমাজ।"
মঙ্গলবার পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের কেন্দাপাড়ায় সামাজিক সংগঠন আদিবাসী ভূমিজ সমাজ রেয়া -র উদ্যোগে ওই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। সভার নির্দিষ্ট সময়ের পরেও ভিড় না হওয়ায় তিনি ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়িতে একটি হোটেলে উঠেছিলেন। প্রায় ঘন্টা দুয়েক অপেক্ষা করে সেখান থেকে তিনি ফিরে যান। অথচ এই অনুষ্ঠানে ১০ হাজার মানুষের জমায়েতের কথা ছিল।
[আরও পড়ুন: অন্ধ হতে পারেন! চোখের চিকিৎসায় লন্ডনে রাঘব, জল্পনা ওড়াল আপ]
শুভেন্দু চলে যাওয়ায় ওই শারুল উৎসবে ছন্দপতন ঘটে। অভিযোগ সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে এই শারুল উৎসবকে রাজনীতির অনুষ্ঠানের রূপ দিতে চেয়েছিল বিজেপি। সেই কারণেই ওই সম্প্রদায়ের মানুষজন ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেননি। শুভেন্দু-র এহেন কাজের বিরুদ্ধে ভূমিজ গ্রামে ঢুকলে তাঁকে ঘেরাওর হুমকি দিয়েছে অল ইন্ডিয়া ভূমিজ সমাজ। এদিন শুভেন্দুর বক্তব্যস্থলে বিজেপির প্রতীক পদ্ম চিহ্ন দেখা যায়। তা নিয়ে হইচই হতে পরে তা ঢাকা দেওয়া হয়। এদিকে শাসক দলের সাংসদ সামিরুল ইসলাম ভূমিজ সমাজের সঙ্গে বৈঠক করেন। এই বৈঠক থেকে জানানো হয়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের জন্য তাঁরা তৃণমূলের পাশে থাকবেন।
বান্দোয়ানের কেন্দাপাড়ায় শারুল উৎসবের অনুষ্ঠানস্থল। ছবি: অমিতলাল সিং দেও।
এই অনুষ্ঠানের আগে সোমবার অল ইন্ডিয়া ভূমিজ সমাজের তরফে জানানো হয়েছিল, আদিবাসী বিরোধী বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী সামাজিক সংগঠনকে রাজনৈতিক হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছেন। সাংবাদিক সম্মেলন করে ওই সংগঠন জানায়, তারা শুভেন্দু অধিকারীকে চরম হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। এমন যদি কাজ আগামী দিনে করে থাকেন তাঁকে ঘেরাও করা হবে। সেই সঙ্গে তারা প্রশ্ন তুলেছেন, আদিবাসীদের সংরক্ষণ, জল- জঙ্গল-জমি অধিকার হরণ করা হচ্ছে। এই বিষয়ে তাঁর মতামত কী তা জানাতে হবে। সেই সঙ্গে শুভেন্দু সম্প্রতি চুয়াড় বিদ্রোহের নেতা রঘুনাথ মাহাতোকে নিয়ে কিছু বক্তব্য রাখেন। তার প্রেক্ষিতে ওই সংগঠন জানিয়েছে, চুয়াড় বিদ্রোহ আসলে কারা করেছিলেন তার বিবৃতি দিয়ে তাদেরকে জানাতে হবে। না হলে তিনি যে ভূমিজ গ্রামে যাবেন সেই গ্রামে তাঁকে ঘেরাও করা হবে। ঢুকতে দেওয়া হবে না।
[আরও পড়ুন: ধাক্কা গেরুয়া শিবিরে, বিজেপির দেবাশিস ধরের মামলা ফেরাল সুপ্রিম কোর্ট]
শারুল উৎসবের আয়োজক সংগঠনের তরফে রামকৃষ্ণ সিং বলেন," শারুল উৎসবের এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। শুভেন্দু অধিকারীকে সামাজিক সংগঠনের তরফেই আমন্ত্রণ জানানো হয়। দলীয় কর্মসূচিতে ব্যস্ত থাকায় তিনি আসতে পারেননি। আমাদের যা দাবি-দাওয়া রয়েছে তা আমরা তাঁকে পরে জানাব। " বান্দোয়ানের তৃণমূল বিধায়ক রাজীবলোচন সরেন বলেন, " ওই সামাজিক অনুষ্ঠানকে রাজনীতিতে রূপ দেওয়া হচ্ছিল। তাই সেখানে মানুষজন যাননি। " তৃণমূলের পুরুলিয়া কেন্দ্রের নির্বাচন পরিচালন কমিটির চেয়ারম্যান সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, " শুভেন্দু বাবু আপনাকে আমি মানবাজার কেন আসতে নিষেধ করেছিলাম আজ প্রমাণ পেলেন তো! বান্দোয়ান মানবাজার মহকুমার অধীনে। এখানকার মানুষ আপনার মুখ দেখতে চান না। তাই আগামী দিনে আপনি আর চেষ্টা করবেন না এই এলাকায় আসতে। না হলে আজকের মতোই অবস্থা হবে। "
এদিন শুভেন্দু অধিকারী ঝাড়গ্রামের বিজেপি প্রার্থী প্রণত টুডুর মনোনয়নে অংশ নিয়ে আড়াইটা নাগাদ বান্দোয়ানের উদ্দেশ্যে ঝাড়গ্রাম থেকে রওনা হন। তিনি ওই অনুষ্ঠানের ভিড় নিয়ে খোঁজ করতে-করতে আসেন। ভিড় না হওয়ায় তিনি বেলপাহাড়িতে একটি হোটেলে অপেক্ষা করছিলেন। তার পর সাড়ে চারটে পর্যন্ত একেবারেই ভিড় না হওয়ায় তিনি সেখান থেকে চলে যান।