বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: নারদা, সারদার পর শেষ আসানসোল। তাঁর সভায় পদপিষ্ট হয়ে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনাতেও নিজেকে নির্দোষ প্রমাণে মরিয়া শুভেন্দু অধিকারী। আদালতের রক্ষাকবচে ভরসা নেই। নির্দোষ প্রমাণে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দরবারে তিনি। রাজ্য সরকার তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে। তাই একের পর এক মামলা করেছে বলে শাহর কাছে নালিশ জানান বিরোধী দলনেতা। মোদির সঙ্গে সংসদের সেন্ট্রাল হলের সামনে দেখা হলেও অভিযোগ জানানোর সুযোগ পাননি। এছাড়াও মঙ্গলবার দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা ও আইনমন্ত্রী কিরণ রিজিজুর সঙ্গে নিজে গিয়ে দেখা করেন।
সংসদের শাহর সঙ্গে বৈঠক থেকে বেরিয়ে শুভেন্দু জানান, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে একটি তালিকা তুলে দিয়েছি যেখানে আমার বিরুদ্ধে রাজ্যের করা এইআইআর ও মামলার তালিকা তুলে দিয়েছি।” শুভেন্দুর দিল্লি সফর ও শাহর দ্বারস্থ হওয়ায় তীব্র কটাক্ষ করেছেন তৃণমূলের মুখপাত্র ও রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, “শুভেন্দু অধিকারীর সেই তালিকায় ওঁর বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের এফআইআরটা আছে তো! যাতে শাহের সিবিআই নারদের তোলাবাজিতে শুভেন্দুর নামে এফআইআর করে রেখেছিল। যেটা থেকে বাঁচতে শাহের জুতো পালিশ করতে গিয়েছেন শুভেন্দু। ওটা তো সবার আগে দিয়ে বলা উচিত।” শুধু বাংলার কেন, দিল্লির সিবিআইয়ের এফআইআরের তালিকাটাও দিলেন না কেন? শুভেন্দুর উদ্দেশে সেই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন কুণাল ঘোষ। বিকেলে দিল্লি ফিরে যাওয়ার আগে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুদারকে সঙ্গে নিয়ে ১০০ দিনের কাজে রাজ্যের বকেয়া অর্থ আটকাতে দ্বারস্ত হন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী গিরিরাজ সিংয়ের।
[আরও পড়ুন: দিল্লিতে আচমকা মুখোমুখি মোদি-শুভেন্দু, ‘ক্যায়সে হ্যায় আপ?’, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর]
গত শুক্রবার রাতে বঙ্গ সফরে এসেছিলেন অমিত শাহ। বিমানবন্দরে পা রেখেই সোজা তিনি চলে গিয়েছিলেন রাজ্য বিজেপির সদর দপ্তর মুরলীধর সেন লেনে। সেখানে রাজ্য বিজেপির নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন তিনি। সেই বৈঠকে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদারও। পরদিন দিল্লি ফেরার পথে কলকাতা বিমানবন্দরে শুভেন্দু অধিকারীকে দিল্লি আসতে বলেন অমিত শাহ। জানা গিয়েছিল, বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকেও আসতে বলা হয়েছিল। সোমবার দিল্লিতে এসে বিজেপির সাংগঠনিক বৈঠকে যোগ দেন তাঁরা। এদিন শুভেন্দু অধিকারী একাই জেপি নাড্ডা এবং অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করেন। যদিও আগে জানা গিয়েছিল যে সুকান্ত মজুমদারও ওই বৈঠকগুলিতে থাকবেন।
অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক শেষে শুভেন্দু অধিকারী জানান, “আমার বিরুদ্ধে যে যে মামলা করা হয়েছে, তার বিবরণ অমিত শাহকে দিয়ে এসেছি। কীভাবে বাংলা আর তেলেঙ্গানায় বিরোধীদের বিরুদ্ধে আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে। দেশের মানুষের জানা প্রয়োজন।” তাঁর দাবি, তিনি তথ্য দিয়ে শাহকে জানান রাজ্যের একশ্রেণির আমলা তাঁকে স্বাভাবিক রাজনৈতিক কাজকর্মে বাধা সৃষ্টি করছে। অমিত শাহ এতো মামলা দেখে বিস্ময়প্রকাশ করেন। জানা গিয়েছে, রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি-সহ একাধিক ইস্যুতে শাহের সঙ্গে আলোচনা করেন শুভেন্দু। এছাড়া আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্য ও দলের পরিস্থিতি কী হবে, তা নিয়েও আলোচনা হয় বলে সূত্রের খবর। প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে তাঁদের বৈঠক চলে।
[আরও পড়ুন: কলকাতাবাসীর জন্য সুখবর, বড়দিনে বেশি রাত অবধি চলবে মেট্রো, দেখে নিন সময়সূচি]
সংসদ থেকে বেরিয়ে সুকান্তকে সঙ্গে নিয়ে গিরিরাজ সিংয়ের বাসভবনে যান শুভেন্দু। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে সুকান্ত জানান, যে কোনও প্রকল্পে কেন্দ্র অর্থ পাঠালেই তা লুট করছেন তৃণমূলের নেতারা। স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করলে তবেই যেন অর্থ দেওয়া হয় মন্ত্রীর কাছে সেই আরজি জানিয়েছেন। সেইসঙ্গে ১০০ দিনের কাজের টাকা নিয়ে ভুরিভুরি অভিযোগ রয়েছে। সুকান্তর অভিযোগ, বাংলাদেশের বাসীন্দার নামেও ১০০ দিনের অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশিকা মেনে রাজ্য কাজ করলে তবেই যেন অর্থ দেওয়া হয় বলে গিরিরাজ সিংয়ের কাছে আর্জি জানান তাঁরা।