মুভি রিভিউ:
ছবি- সোয়েটার
অভিনয়ে- ইশা সাহা, খরাজ মুখোপাধ্যায়, জুন মালিয়া, শ্রীলেখা মিত্র, সিদ্ধার্থ (সিধু), ফরজান ইমরোজ, সৌরভ দাস, অনুরাধা মুখোপাধ্যায়
সন্দীপ্তা ভঞ্জ: মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। বয়স কুড়ির কোঠায়। মেয়ের রূপ-গুণ বলতে গেলে মিনিট খানেক ভেবেও কিছু উদ্ধার করা যাবে না। রান্নাবান্না দূরঅস্ত, চা-টুকুও বানাতে পারে না সে। আর ‘রূপে লক্ষ্মী, গুণে সরস্বতী’ নাহলে সেই মেয়েকে আবার বিয়ে করবে কে? অতএব মা-বাবার সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠে সেই মেয়ে। এরপর শুরু হয় ‘উঠ ছেরি তোর বিয়ে লাগে’ গোছের ব্যাপার। যেমন করেই হোক এ মেয়েকে বাড়ি বসিয়ে রাখা যাবে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পাত্রস্থ করতেই হবে। এরকমই একটা মেয়ে টুকু। নিপাট সাদাসিধে। মুখে ‘রা’-টি কাড়ে না। মা-বাবা যাই বলুক না কেন, চুপচাপ শুনে নেয়। কারণ, সে কিছু পারে না। তাই ছোট থেকেই কারণে-অকারণে হেয় হতে হয়েছে টুকুকে। মনের কথাগুলো খুলে বলার মতো সাহসও নেই তার। টুকুর মা-বাবাও তাঁদের মধ্যবিত্ত চিন্তাধারণাকে সম্বল করে বড় মেয়ের বিয়ে দিতে চায়। কারণ, তার পরেই রয়েছে ছোট মেয়ে। তাকেও ঠিক বয়সে বিয়ে দিতে হবে। অন্যদিকে, প্রেমের সম্পর্কেও টুকু অবহেলিত। একটা ছাপোষা, আত্মবিশ্বাসহীন সাধারণ মেয়ের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পকে পরিচালক শিলাদিত্য মৌলিক খুব যত্নে বুনেছেন। সেই উষ্ণতার আঁচ পাবেন তাঁর ‘সোয়েটার’-এ। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তার চড়াই-উতরাইয়ের সঙ্গে টুকুর আবেগ-অনুভূতি কোথাও গিয়ে মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। কুয়াশামাখা দার্জিলিংয়ের রাস্তায় টুকু-সাম্যর সাক্ষাতের দৃশ্যও উল্লেখ্য।
[আরও পড়ুন: প্রেমের গল্প কতটা ফুটিয়ে তুলতে পারল ‘নোটবুক’?]
ডি-গ্ল্যাম একটা চরিত্রকে দর্শকের মনের কাছের কী করে তুলতে হয়, সেই পারদর্শীতা ইশার বেশ ভালই জানা। তা এর আগেই তিনি প্রমাণ করেছেন। এই ছবিতেও তার অন্যথা হয়নি। ওই ছলছলে চোখ, সরলতা ও মমতা মাখানো মুখটা দেখে দর্শকরা টুকুর প্রেমে পড়তে বাধ্য। পাহাড়ি শীতলতায় সাম্যর বন্ধুত্বের উষ্ণতায় টুকুর আশ্রয় নেওয়া থেকে একটা আত্মবিশ্বাসহীন মেয়ের নিজেকে ভরসা করতে শেখা, মানসিকভাবে বোবা মেয়েটার একসময়ে হবু শাশুড়িকে সোয়েটারের দাম চাওয়া, বয়ফ্রেন্ড পাবলোর অপমানের জবাব দিয়ে তাকে প্রত্যাখ্যান করা- শিলাদিত্যর খাস বুননে এসব বেশ মন কেড়েছে। তবে, পাবলোকে প্রত্যাখ্যানের পর টুকুর পরিবর্তিতরূপ কোথাও গিয়ে কঙ্গনার ‘ক্যুইন’ ছবির কথা মনে করিয়ে দেয়। এছাড়া টুকুর একাকীত্বের ব্যথাটা গল্পজুড়ে প্রতিষ্ঠিত হতে হতেই ফসকে যাওয়ার মতো মনে হল। এই জায়গাটা পরিচালক আরেকটু যত্নে বুনতেই পারতেন! তবে, টুকুর গল্পটা এ সমাজের আরও অনেক মেয়েরই গল্প। তাই দর্শকরা অনায়াসেই এঅই গল্পের সঙ্গে একাত্ম হতে পারবেন।
ছবির প্রোটাগনিস্ট টুকুর চরিত্র এস্টাবলিশ করতে গিয়ে বোন অনুরাধা মুখোপাধ্যায়ের চরিত্র প্যারালালি বেশ ভালই গিয়েছে। তবে যেটা বিশেষভাবে উল্লেখ্য, সেটা হল এই মিষ্টি গল্পের প্লাস পয়েন্ট- সিধু ও শ্রীলেখার অনস্ক্রিন রোম্যান্স। স্ক্রিন প্রেসেন্স সেভাবে না থাকলেও, অভিনেতা হওয়ার উপকরণ যে সিধুর মধ্যে বেশ বিদ্যমান তা তিনি এই ছবিতেই প্রমাণ করে দিয়েছেন। বাবার ভূমিকায় খরাজ মুখোপাধ্যায় এককথায় অনবদ্য।
[আরও পড়ুন: বাস্তবের রাজনৈতিক চিত্র কতটা তুলে ধরতে পারল ‘শঙ্কর মুদি’?]
তবে, ২০১৯-এর প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে উল বোনার গল্প একটু অপ্রসঙ্গিক মনে হলেও, ছবির চিত্রনাট্য সেই ভাবনাকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। কুয়াশামাখা দার্জিলিংয়ে লগ্নজিতার গলায় ‘প্রেমে পড়া বারণ’ এক অন্য রেশে নিয়ে যায় মনকে। রণজয় ভট্টাচার্যের সুরে গানগুলো বেশ মনে ধরার মতো। হল থেকে বেরিয়েও যার রেশ থেকে যায় অনেকক্ষণ। এই গল্প একটা মেয়ের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। সমাজের ‘সো-কলড’ কিছু চিরাচরিত ধারণার উপর কষাঘাত করতে ‘সোয়েটার’ সাবলীলতার সঙ্গে উতরেছে বলেই মনে হল। দর্শকদের জন্য টুকু নিঃসন্দেহ একটা ‘সারপ্রাইজ প্যাকেজ’। শিলাদিত্যর পরিচালনায় এটাই প্রথম বাংলা ছবি। সবমিলিয়ে বেশ মিষ্টি একটা গপ্পো ফেঁদেছেন পরিচালক।
The post এক আত্মবিশ্বাসহীন মেয়ের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প ‘সোয়েটার’ appeared first on Sangbad Pratidin.