রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: ১৩ বছরের খরা কাটিয়ে ফের বিশ্বজয়ী ভারত। সুদূর বার্বাডোজে টি-২০ বিশ্বকাপ জিতেছেন বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মারা। কিন্তু সেই স্কোয়াডে ডাক পাননি কোনও বাঙালি ক্রিকেটার। তবে বাঙালি ক্রিকেটার না থাকলেও, বিশ্বজয়ের নেপথ্য নায়ক হিসাবে রয়ে গেলেন এক বাঙালি। তাঁর হাত ধরেই বিশ্বকাপে রইল বাংলার ছোঁয়া।
তিনি দয়ানন্দ গরামি। কোলাঘাটের গ্রামের এক কৃষক পরিবারের সন্তান। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল ক্রিকেটার হবেন। কিন্তু স্বপ্নপূরণের পথে বারবার অন্তরায় হয়ে উঠেছে দারিদ্র। দয়ানন্দের বাবা একজন সাধারণ কৃষক। পরের জমিতে চাষ করেন। কিন্তু অর্থের অভাব দমিয়ে রাখতে পারেনি জামিত্যা গ্রামের দয়ানন্দকে। কোলাঘাট থেকেই শুরু করেন ক্রিকেটের প্রস্তুতি, কারণ কলকাতায় এসে ক্রিকেটের প্রশিক্ষণ নেওয়ার সামর্থ্য ছিল না। তবে ২০১০ থেকে সিএবি ক্লাব ক্রিকেট খেলেছেন।
কিন্তু বছর আঠাশের দয়ানন্দের পথটা একেবারেই মসৃণ ছিল না। ক্রিকেট খেলতে এসে কলকাতায় গ্রিন পুলিশের চাকরি করেছেন পেটের দায়ে। তবে পুলিশের চাকরি থেকে ভারতীয় দলের ড্রেসিংরুম- দয়ানন্দের এই যাত্রাটা শুরু হয় অনিল কুম্বলের হাত ধরে। আইপিএলে ইডেনের নেটে তাঁর দু’হাতে থ্রো দেখে ফেলেন কিংবদন্তি ভারতীয় স্পিনার। সেখান থেকে স্বপ্নের উড়ান শুরু। প্রথমে অন্ধ্রপ্রদেশের রনজি দলে ছিলেন। কুম্বলের হাত ধরে যোগ দেন কিংস ইলেভন পাঞ্জাব শিবিরে। ২০২০ সালে কে এল রাহুলদের দলে ম্যাসাজ থেরাপিস্ট কাম থ্রো ডাউন স্পেশালিস্ট হিসাবে কাজ শুরু করেন।
[আরও পড়ুন: ইউরোর কোয়ার্টারে গুরু বনাম শিষ্য! উত্তর মিলবে আজ]
সেখানে ভালো কাজের পুরস্কার মেলে ওই বছরেই। ২০২০ সালে ভারতীয় দল (Indian Cricket Team) অস্ট্রেলিয়া সফরে যায়। সেই দলের সঙ্গে ক্যাঙ্গারুদের দেশে উড়ে যান দয়ানন্দ। সেবারেই গাবায় অজি বধ করে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জিতে নেয় মেন ইন ব্লু। তার পর থেকে ভারতীয় দলের সঙ্গেই যুক্ত রয়েছেন কোলাঘাটের ছেলে। বিরাটের খুব কাছের মানুষ তিনি। দয়ানন্দের বিয়ের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন রোহিত শর্মা স্বয়ং। এসেছিলেন সূর্যকুমার যাদবও। গত চার বছরে ভারতীয় দলের সাপোর্ট স্টাফ হিসাবে যথেষ্ট পরিচিত মেদিনীপুরের ছেলে।
২০২৩ সালে বিশ্বজয়ের খুব কাছে গিয়েও শেষরক্ষা হয়নি ভারতের। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে ট্রফি অধরাই থেকে যায়। তার পরেই হেড কোচ রাহুল দ্রাবিড়-সহ সাপোর্ট স্টাফের চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিসিসিআইয়ের অনুরোধে টি-২০ বিশ্বকাপ (T20 World Cup 2024) পর্যন্ত দায়িত্ব নিতে রাজি হন দ্রাবিড়। তাঁর সঙ্গে থেকে যান দয়ানন্দরাও। কথায় আছে, সবুরে মেওয়া ফলে। সেই কথাই সত্যি হয়েছে গোটা ভারতীয় দলের জন্য। ১৩ বছরের অপেক্ষা শেষে বিশ্বজয়ের শিরোপা উঠেছে ভারতের মাথায়। সেই দলের গর্বিত সদস্য দয়ানন্দ। ক্রিকেটার না থাকলেও, ম্যাসাজ থেরাপিস্টের হাত ধরে ক্যারিবিয়ানভূমে বিশ্বজয়ের শরিক থাকল বাঙালি।