শুরু থেকেই জটিলতা থাকলে বেড রেস্ট জরুরি। কিন্তু বিশ্রাম কীভাবে নিতে হবে? জানাচ্ছেন আইএলএস হাসপাতালের গাইনোকোলজিস্ট-ল্যাপারোস্কোপিক সার্জন ডা. অরুণা তাঁতিয়া। লিখছেন পৌষালী দে কুণ্ডু।
মাত্র তো ক’টা মাস। একটু না হয় বিশ্রামেই থাকলেন। হাই রিস্ক প্রেগন্যান্সিতে বেড রেস্ট ভীষণ জরুরি। বিশেষ করে প্রথম তিন মাস সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে। তবে এই বেড রেস্টের সঠিক অর্থ অনেকেই জানেন না। গর্ভাবস্থার কোন সমস্যায় সারাদিন বিছানায় শুয়ে থাকতে হবে? কখন বিশ্রামের ফাঁকেও হালকা কাজ করতে পারেন? এমনই নানা প্রশ্নে উতলা হন হবু মায়েরা। আবার অনেক সময় কেউ কেউ সংসারের চাপে ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও ঠিকমতো বিশ্রাম নিয়ে উঠতে পারেন না।
এই কঠিন সময়ে বেড রেস্ট নিলে শরীরে রক্ত চলাচল বেড়ে যায় এবং গর্ভাশয় ও প্লাসেন্টা পর্যন্ত ভালভাবে রক্ত সংবহিত হয়। এতে গর্ভস্থ সন্তানের সঠিক বৃদ্ধি ঘটে।
বেশি বিশ্রাম কাদের জরুরি
- একাধিকবার মিসক্যারেজের ইতিহাস থাকলে।
- ইউটেরাসে প্লাসেন্টা নিচের দিকে থাকলে সাবধান। একে প্লাসেন্টা প্রিভিয়া বলে। এক্ষেত্রে অল্প ব্লিডিং হয়। যা যথেষ্ট দুশ্চিন্তার।
- একাধিকবার গর্ভপাতের কারণে গর্ভাশয়ের মুখ খুলে যায়। এতে অপরিণত অবস্থাতেই গর্ভস্থ ভ্রূণ বাইরে বেরিয়ে আসার ঝুঁকি থাকে। এক্ষেত্রে দ্রুত খোলা মুখ সেলাই করে দিয়ে সম্পূর্ণ বেড রেস্টে থাকতে লাগে।
- অপরিণত ভ্রূণের গঠন
- ব্লিডিং হওয়া
- হাই ব্লাড প্রেশার। প্রিঅ্যাক্লেমশিয়া বা অ্যাক্লেমশিয়া
- হাই ব্লাড প্রেশার
[ বসন্তের পরশে ‘অসুস্থ’ ত্বক, তরতাজা থাকুন এভাবে ]
বিপদ কীরকম
এসব ক্ষেত্রে গর্ভস্থ সন্তানের সঠিক বৃদ্ধি না হতে পারে। মস্তিষ্কের গঠন ঠিকমতো না হতে পারে। প্রিম্যাচিওর শিশুর জন্ম হতে পারে। গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। মৃত সন্তান প্রসব হতে পারে।
মেনে চলুন
- জটিলতা থাকলে প্রেগন্যান্সির প্রথম তিন মাস ডাক্তারের পরামর্শমতো বিশ্রামে থাকুন।
- সব সময় বাঁদিক ফিরে শোবেন। এতে গর্ভস্থ সন্তানের শরীরে ব্লাড সার্কুলেশন ভাল হয়। ডানদিকে ফিরেও কিছুক্ষণ শুতে পারেন। কিন্তু চিত হয়ে শোওয়া চলবে না।
- দু’তিন জনের সংসারে থাকলে খুব অল্প রান্না করতে পারেন। তার বেশি হলে করবেন না।
- অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ি থেকে কাজ করতে পারেন।
- কর্মরত মহিলাদের শুরুতে ক্রিটিক্যাল অবস্থা থাকলে এবং যথার্থ বিশ্রামের পর তিন মাস বাদে ডাক্তার অনুমতি দিলে মাঝে মাঝে অফিস যেতে পারেন। কিন্তু খুব অল্প সময়ের জন্য অফিসে থাকুন ও শরীর-মনে চাপ পড়বে না এমন হাল্কা কাজ করুন। টানা বসে কাজ করবেন না। আধ ঘণ্টা অন্তর চেয়ার ছেড়ে উঠে একটু হাঁটাহাঁটি করে নিন। বমিভাব, কোমরে যন্ত্রণা না থাকলে তবেই তিন মাস পর অফিস যাওয়ার কথা ভাবা উচিত।
- প্লাসেন্টা প্রিভিয়া থাকলে সাধারণত ডাক্তার বাথরুমে যেতেও নিষেধ করেন। সেক্ষেত্রে বেড প্যান ব্যবহার করুন।
- প্রাণায়াম করা ভাল। দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে শ্বাস ছাড়া, শরীরের উপরের অংশের হালাকা এক্সারসাইজ করা যায়। তবে সবটাই চিকিৎসক ও যোগা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে করতে হবে। শুয়ে শুয়েও পা নাড়িয়ে নানা রকমের এক্সারসাইজ করা যায় এই সময়। তাতে পা ব্যথা, ফোলা বা শিরদাঁড়া, কোমরে যন্ত্রণা হয় না।
[ গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকার অব্যর্থ দুই দাওয়াই, ব্যায়াম-প্রাণায়াম ]
বিশ্রাম মানে আতঙ্ক নয়
প্রেগন্যান্সিতে ডাক্তার বেড রেস্ট নিতে বলা মানেই গর্ভস্থ শিশু নষ্ট হওয়ার চান্স খুব বেশি। এ কথা ভেবে দুশ্চিন্তা করার কোনও মানে হয় না। একটি ঘটনার কথা বলি, একাধিকবার প্রেগন্যান্সি নষ্ট হয়েছে এমন এক তরুণীর ইউটেরাসের মুখ খুলে গর্ভস্থ সন্তান প্রায় বেরিয়ে আসছিল। এই রকম পরিস্থিতিতে আমরা দ্রুত ইউটেরাসের মুখ সেলাই করে দিই। তারপর ওই অন্তঃসত্ত্বাকে সম্পূর্ণ বেড রেস্টের নির্দেশ দিই। উনি ঠিকমতো কথা শুনেছিলেন। ক্রিটিক্যাল হওয়ায় বিছানা ছেড়ে বিশেষ ওঠেননি। একেবারে সন্তানের জন্ম দিয়ে বিছানা ছেড়ে ওঠেন। শুনলে অবাক লাগবে, ওই তরুণীর এই অবস্থাতেও নরম্যাল ডেলিভারি হয়েছিল।
পরামর্শ : ০৩৩ ৪০২০৬৫০০
The post জটিলতা থাকলে গর্ভাবস্থায় দরকার সম্পূর্ণ বেড রেস্ট, বলছেন চিকিৎসকরা appeared first on Sangbad Pratidin.