সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) ও অরবিন্দ ঘোষ। তাঁরা নোবেলের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ১৯১৩ সালে সাহিত্যে অবদানের জন্য নোবেল পুরস্কার (Nobel Prize) পান। কিন্তু তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়ও (Tarasankar Bandyopadhyay) যে নোবেলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন সেই তথ্য অবশেষে প্রকাশ্যে এসেছে। ১৯৭১ সালে সাহিত্যে নোবেল জেতেন পাবলো নেরুদা। সেবছর যাঁরা মনোনয়ন পেয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন তারাশংকরও। ৫০ বছর আগের সেই তালিকা আবার বাঙালির জন্য বয়ে এনেছে সুখবর।
কিন্তু এমন একটা খবর এতদিন পরে প্রকাশ্যে এল কেন? আসলে সুইডিশ কমিটি এতদিন কেবল বিজয়ীদের নামটিই ঘোষণা করতেন। এই প্রথম জনসাধারণের জন্য তাদের আর্কাইভ খুলে দিয়েছে কমিটি। আর তার ফলেই জানা গিয়েছে ১৯৭১ সালে তারাশংকরের মনোনীত হওয়ার কথা। গর্বিত হওয়ার নতুন এক মুহূর্ত তৈরি হয়েছে বাঙালি জনমানসে। সেই সঙ্গে রয়েছে মৃদু আফশোসের সুর। যদি সত্য়িই তারাশংকর নোবেল পেতেন, তাহলে সাহিত্যে দেশের দ্বিতীয় নোবেলটিও আসত এক বাঙালিরই হাত ধরে!
[আরও পড়ুন: লক্ষ্মীর আরাধনায় ব্যস্ত বাংলা, সবজি ও ফলের দামে হাতে ছেঁকা গৃহস্থের]
নোবেল পুরস্কারের ওয়েবসাইট থেকে জানা যাচ্ছে, তারাশংকরের নাম প্রস্তাব করেছিলেন সাহিত্য অ্যাকাডেমির তৎকালীন সম্পাদক কৃষ্ণ কৃপালনি। তবে সেই বছরেরই ১৪ সেপ্টেম্বর মৃত্যু হয় তারাশংকরের। ফলে নিয়মানুসারে সেবারের প্রতিযোগিতার জন্য এরপর আর বিবেচিত হয়নি তাঁর নাম। ওই ওয়েবসাইট থেকে আরও জানা যাচ্ছে, তারাশংকর ও নেরুদা ছাড়া সেবার সাহিত্যের নোবেলের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলেন গুন্টার গ্রাস, বোর্হেস, আর্থার মিলারের মতো সাহিত্যিকরা।
১৮৮৮ সালের ২৩ জুলাই বীরভূমের লাভপুরে জন্ম তারাশংকরের। সারা জীবনে লিখেছেন ৬৫টি উপন্যাস, ১২টি নাটক ও ৫৩টি গল্প সংকলন। পেয়েছিলেন রবীন্দ্র পুরস্কার, সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার, জ্ঞানপীঠের মতো পুরস্কার। পেয়েছেন পদ্মশ্রী ও পদ্মভূষণও। তাঁর লেখার মধ্যে গণদেবতা, কবি, হাঁসুলী বাঁকের উপকথা, আরোগ্য নিকেতন বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। রাঢ়বাংলার ভাষ্য তাঁর লেখায় জীবন্ত হয়ে উঠত। সাহিত্যিক সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় একবার বলেছিলেন, কখনও রাঢ়বাংলা ধ্বংস হয়ে গেলে তারাশঙ্করের লেখা অনুসরণ করে ফের তা গড়ে তোলা যাবে। ‘আমার সাহিত্য জীবন’ গ্রন্থে তারাশংকর লিখেছিলেন, ”আমার পাত্রপাত্রীর মুখে আমার ভাষার কথা আমি বসাতে পারি না, তাদের নিজেদের ভাষা আমার ভাবনায়- রচনায় বেরিয়ে আসে।” বাংলার শিকড়ে মিশে থাকা সেই আঞ্চলিক ভাষাই বিশ্বের দরবারেও স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছিল, এতদিন পরে সেই সত্য সামনে আসায় স্বাভাবিক ভাবেই বাংলার সাংস্কৃতিক মহলে খুশির জোয়ার।