shono
Advertisement

এক চুমুকেই তৃপ্তি, কলকাতার এসব চায়ের দোকানে ঢুঁ মেরেছেন?

শহরের অলিগলিতে ছড়িয়ে ঐতিহাসিক সব চায়ের দোকান। The post এক চুমুকেই তৃপ্তি, কলকাতার এসব চায়ের দোকানে ঢুঁ মেরেছেন? appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 09:16 PM Nov 20, 2018Updated: 09:16 PM Nov 20, 2018

শহরের অলিগলিতে ছড়িয়ে ঐতিহাসিক সব চায়ের দোকান। সিসিডি-বারিস্তার বাজারেও যা জলজ্যান্ত। এমনই কিছু চায়ের আড্ডার সন্ধানে সম্বিত বসু

Advertisement

সারা দিনে মাত্র তিন ঘণ্টা ঘুমোয়। একটা চায়ের দোকান। আহিরীটোলায়। ঘুমোয় মানে বন্ধ থাকে। বাকি সব সময়ই খোলা। চা ক্লান্তি মুছে দেয় বলেই কি চায়ের দোকানগুলো এত সময় ধরে জেগে থাকতে পারে? মাত্র তিন ঘণ্টা ঘুমোয় এমন চায়ের দোকান কলকাতায় আর কি আছে? কথা হচ্ছে ‘ভূতনাথ চায়ের দোকান’ নিয়ে। মেট্রোয় শোভাবাজার থেকে নেমে আহিরীটোলা ঘাটের অটো ধরুন। লঞ্চঘাট থেকে সামান্য হাঁটা নিমতলার দিকে। দত্তবাবুর স্নানঘাট ছাড়িয়ে অল্প হাঁটলেই ডান হাতে পড়বে।

দেখতে দেখতে দোকানটি মধ্য পঞ্চাশে। চায়ের দোকানও লেখকদের মতো। যত দিন যায়, তত নাম হতে থাকে তার। তত জটলা, ভিড়। সুড়ুৎশব্দময়। চা দিতে দেরি হয় ভিড়ের কারণে। তবে, চায়ের বিশেষ তারতম্য হয় না। ভূতনাথের এই চা-দোকানটি কেবলমাত্র চায়েই থেমে থাকে না। কারণ আশপাশেই ঘাট। এক-দুটো না। একটানা একের পর এক ঘাট। আহিরীটোলা ঘাটের ছায়ায় যে রাস্তায় বসা সেলুন তার দিকে তাকিয়ে থাকলে, কলকাতার দ্রুত আধুনিক হয়ে ওঠা বোঝা যায় না। ঘাটের কাছে এলে যদিও বোঝা যায়, গঙ্গার প্রবহমানতা। কিন্তু সময় কোথাও গিয়ে থেমে গিয়েছে যেন। একটা অন্যরকম টাইম-স্পেসের মধ্য ঢুকে পড়া যায় এই ঘাটগুলোয় এলে।

‘সেফ খেলিনি’, ‘অব্যক্ত’ নিয়ে অকপট পরিচালক অর্জুন ]

হরিশংকর। বড় চুল-দাড়ি। তাঁর চা বানানোর পদ্ধতি দেখলে অন্যদিকে চোখ সরে না। একহাত উপর থেকে নির্ভুল তাক করে অন্য হাতের পাত্রে ঢুকে পড়ে চা। বার পাঁচেক। দুধ, চা পাতার সঙ্গে এখানে দেওয়া হয় এলাচ। চায়ের ভাঁড়টি পুরনো বনেদি বাড়ির থামের মতো, শুধু মাথা খোলা। ফলে চায়ে চুমুক দেওয়ার সময় মনে হতেই পারে, এই বহুপুরাতন কলকাতাকে শরীরে নিয়ে ফেলছি। ভাল চা খেলে শুধু চা খেয়েছি বলে মনে হয় না, মনে হয় দৃশ্য খেয়ে ফেলেছি। আড্ডা খেয়ে ফেলেছি।

ভূতনাথে চা খেয়ে কেবলমাত্র দোকানে বসে থাকার কোনও মানেই হয় না। খোলা রাখতে হয় চোখ, কানও। কত যে আজগুবি লোক ঘাটে বসে থাকে। কত যে কুকুরের বিছানা এই ঘাট। দিনের পর দিন এক ভদ্রলোককে অ্যাটাচি কেস হাতে বসে থাকতে দেখেছি আহিরীটোলায়। সন্ধেবেলা নাগাদ চলে যান তিনি। হয়তো হঠাৎই তাঁর অফিস বন্ধ হয়ে গিয়েছে। গঙ্গার দিকে তাকিয়ে তিনি তাঁর স্নায়ু শান্ত রাখছেন। মন্দিরের ঘণ্টা ভেসে আসে।

রেললাইনের ওপারে পুরনো একটানা বাড়ি। গায়ে গাছ। হয়তো ‘বিপজ্জনক বাড়ি’-ও কিছু কিছু। কিন্তু তার থেকেও বিপজ্জনক হয়তো এইসব রাস্তায় মানুষের বেঁচে থাকা। এ রাস্তায় প্রায়শই দেখা যাবে ছোটদের দৌড়াদৌড়ি, খেলা। হাতে পোষা সেকেন্ড হ্যান্ড নগ্ন পুতুল, সে নিজে তার পুতুলের থেকেও নগ্ন। চা খেতে খেতে এইসব দৃশ্য যেন ভুলে না যায় মানুষ। কারণ ভুলিয়ে দেওয়ার বহু আধুনিক ও জোরালো পদ্ধতি আমাদের হাতে রয়েছে।

ভূতনাথ গেলেন, অথচ লিট্টি খেলেন না- এর মানে টানটান কোনও সিনেমার হাফটাইমে আপনি আনমনে বেরিয়ে এসেছেন। কপালে পিস্তল ঠেকানোর আগে পর্যন্ত হলফ করে বলতে পারি- কলকাতার শ্রেষ্ঠ লিট্টি এই দোকানেরই। উনুনে হালকা আঁচে পোড়ানো লিট্টির পুড়ে যাওয়া দেখে মনে পড়ে যেতে পারে সৌরজগৎ। নরম-গরম টোম্যাটোও দেখা যেতে পারে মাঝে মাঝে। তাকে সূর্য বলেই ধরে নেওয়া যাক। এক প্লেট লিট্টি নিলে পাবেন আলু-টম্যাটো-লঙ্কামাখা অনবদ্য একটি মিক্সড চাট। সঙ্গে বেগুনের অতুলনীয় পেস্ট। দরকারে টম্যাটোপোড়াও খেতে পারেন। শীত পড়ছে। গঙ্গার ঠান্ডা হাওয়ার পাশাপাশি, দুরন্ত চা আর দোসর লিট্টি! ভাবতে পারছেন!

দোকানে হরিশংকর থাকেন মূলত দিনের বেলা। তাঁর চা বানানো চলে দুপুর ২টো থেকে ১১টা। ১১টা থেকে ২টো দোকানের দায়িত্বে থাকেন অঙ্কিত। ভোর পাঁচটায় আবার অঙ্কিতের বউদি এসে দোকান খুলে দেন। থাকেন ৮টা পর্যন্ত। চায়ের সঙ্গে এখানে মিশে যায় আধ্যাত্মিকতা। শিবের একনিষ্ঠ ভক্ত হরিশংকর, স্নান সেরে ‘দর্শন দে দো বাবা’ বলতে বলতে যখন মালা পরিয়ে দেন দোকানের স্থির ঈশ্বরচিত্রগুলোয়, তখন একবারও মনে হয় না চা বানানোয় তাঁর নিষ্ঠা এর চেয়ে কম।

শ্মশান সামনেই। নিমতলা। মৃত্যুও তো জীবনেরই অংশ। চা খেতে খেতে কি জীবনটাকে গুছিয়ে নেওয়ার কথা ভাবা যায় না একটু বসে? আসলে তো কিছুই, কেউ-ই অপরিহার্য নয়। চায়ের ভিতর দিয়ে প্রত্যেকের একটা পথ আছে বলে আমি বিশ্বাস করি। সেটা কারও কাছে চিন্তার পথ। কারও কাছে ক্লান্তি সরানোর। কারও বাঁচার, দিনযাপন করার। আপনি আপনার চায়ের ভিতর দিয়ে কোন পথে যাবেন, ঠিক করবেন আপনি। তবে, নিজেকে এই প্রাক্‌ শীতে একবার ভূতনাথে নিয়ে যান। প্লিজ্‌!

পুনশ্চ: একপাশ দিয়ে ট্রেন চলে যায়। আর একপাশ দিয়ে গঙ্গা। দু’রকম গতিময়তার মধ্যে চা খেতে খেতে নিজেকে জুড়িয়ে নিন। চা যেন জুড়িয়ে না যায়।

ডিজিটালে ফিরল ‘পথের পাঁচালী’-র স্মৃতি, নবজন্ম অপু-দুর্গার ]

The post এক চুমুকেই তৃপ্তি, কলকাতার এসব চায়ের দোকানে ঢুঁ মেরেছেন? appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement