সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: যে জিনিসপত্র সাধারণত ফেলে দেওয়া হয়। সেই ফেলে দেওয়া কলার পাতা দিয়েই লক্ষ্মী প্রতিমা গড়ে তাক লাগালেন পুরুলিয়ার শিক্ষক। এমনকী, প্রতিমা তৈরিতে তিনি পচা কলার পাতাও ব্যবহার করেছেন। তবে পুজো দেওয়ার জন্য ১১ রকমের মাটি দিয়ে আলাদা ভাবে ধনসম্পত্তির দেবী লক্ষ্মীর প্রতিমা গড়েছেন ওই শিক্ষক।
পুজোর সময় এই কলা পাতার লক্ষ্মী বিরাজ করবে দেবী আলয়ে। কেল্লার আদলে গড়ে উঠেছে সেই আলয়। আসলে কলা পাতা দিয়ে তৈরি লক্ষ্মী প্রতিমার পোশাক রাজপরিবারের রানীদের মতোই। তাই সেই ভাবনাতেই দেবী আলয় তৈরি করেছেন শিক্ষক শঙ্কর মুখোপাধ্যায়। পাঁচ ফুট উচ্চতা ও ছ’ফুট চওড়ার এই আলয় পাট দিয়ে তৈরি হয়েছে। লক্ষ্মীর সঙ্গে চোখ টানছে তাঁর আলয়ও।
[আরও পড়ুন: ত্রয়োদশীতে ৫১ জন কুমারীর পুজো সতীপীঠ কঙ্কালীতলায়, জানেন এর মাহাত্ম্য?]
ফি বছরই তিনি নিজ হাতে লক্ষ্মী গড়ে বাড়ির সকলকে নিয়ে আরাধনা করেন। প্রতি বছরেই প্রতিমা গড়ার কাজে কোনও না কোনও থিমকে ব্যবহার করে থাকেন তিনি। এইভাবেই গত ১৫ বছর ধরে তিনি নিজ হাতে লক্ষ্মী তৈরি করে পুজো করে আসছেন। এবারও তাঁর হাতের তৈরি এক ফুটের লক্ষ্মী প্রতিমা তাক লাগাল শহরে। বুধবার মা লক্ষ্মীর আরাধনা করবেন শিক্ষক। তার আগে সোমবার বিকালে শহর পুরুলিয়ার রাঁচি রোড বাই লেনে নিজের বাড়িতে ওই প্রতিমায় ফিনিশিং টাচ দিচ্ছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, “কোনও জিনিসই ফেলে দেওয়ার নয়। সব জিনিসই সুন্দর। সব জিনিসের মধ্যেই কোনও না কোনও ভাল দিক রয়েছে। সেটা বোঝাতেই আমার এই কাজ।”
[আরও পড়ুন: জীবনে সুখসমৃদ্ধি চান? লক্ষ্মীপুজোয় এই কাজগুলি ভুলেও করবেন না]
একেবারে ছেলেবেলা থেকেই হস্তশিল্পকলায় যুক্ত তিনি। হাতে–কলমে কখনও মূর্তি তৈরির কাজ না শিখলেও মাতৃপ্রতিমার টানে কুমোর পাড়ায় বসে থাকা আজও তাঁর অভ্যাস। এছাড়া তাঁর হাতের নানান কাজ চোখ টানে। শিক্ষকতার ফাঁকেই অবসরে এই শিল্পকর্ম চলে তাঁর। তাই প্রায় দেড় দশক ধরে নিজ হাতে লক্ষ্মী গড়ে বাড়ির আরাধনা করে আসছেন পুরুলিয়া মফস্বলের বেলকুঁড়ির রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ মিশনের এই সংস্কৃত শিক্ষক। শুধু মূর্তি গড়াই নয়। তাঁর হাতে আলপনা রঙবাহারির রূপ দেয়। লক্ষ্মী পুজোয় আলপনায় সাজিয়ে তোলেন তাঁর বাড়ি।