সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে অনেকগুলি বছর। আইসিসি টুর্নামেন্টে ভারতের ‘শনির দশা’ আর কাটছে না। যদিও সকলের আশা ছিল এবার বোধহয় সুসময় ফিরবে। কোহলি-রোহিতদের হাতে উঠবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ (T20 World Cup 2022)। এমনকী এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠতে না পারার ব্যর্থতাকেও ধর্তব্যের মধ্যে আনছিলেন না অনেকেই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবারের সেমিফাইনাল বুঝিয়ে দিয়ে গেল টিম ইন্ডিয়ার কপাল এবারও মন্দ। কপাল? নাকি সেকেলে ধাঁচের ক্রিকেট খেলাই আসল কারণ? দাবি কিন্তু উঠছে।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে গতিই শেষ কথা। টেস্ট ক্রিকেট তো বটেই, এমনকী ৫০ ওভারের খেলাতেও যে মনোভাব চলতে পারে তা খেলার সবচেয়ে ছোট ফরম্যাটে একেবারেই অচল। আর সেটাই ঘটেছে। প্রতি ম্যাচেই দেখা গিয়েছে শুরু থেকে ধরে খেলে উইকেট হাতে রেখে পরের দিকে আক্রমণে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। অর্থাৎ ফিক্সড ডিপোজিট করে ভবিষ্যৎ গোছাও। এমন নয় এই পরিকল্পনা কাজে আসেনি। বিশেষত, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একেবারে শেষপর্যন্ত অপেক্ষা করে আক্রমণে যাওয়ার নীল নকশা দারুণ ভাবে কাজে এসেছিল। কিন্তু সেটা এক-আধদিন ঘটলেও হালফিলের টি-টোয়েন্টিতে এই প্ল্যান কখনওই ধারাবাহিক সাফল্য আনতে পারে না। এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
[আরও পড়ুন: সেমিফাইনালে ভরাডুবির দায় কার? ভারতের হারের সম্ভাব্য পাঁচ কারণ]
আসলে টি-টোয়েন্টির দর্শন হল শেয়ারে লগ্নির মতো। যখন দর বাড়ছে, দ্রুত বিনিয়োগ করো। কারণ হাতে সময় কম। যে দর্শন এদিনের খেলায় ব্রিটিশরা দারুণ ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে। প্রথম বল থেকে যেভাবে মার মার কাট কাট ভঙ্গিতে মারতে শুরু করলেন বাটলার ও হেলস, তাতে ভুবনেশ্বর-অর্শদীপরা দাঁড়াতেই পারলেন না। যেটা রোহিত-রাহুলের খেলায় একেবারেই ছিল না।
সমস্যা আরও রয়েছে। রাহুল-রোহিত-কোহলি। প্রথম তিনে তিনজন সিনিয়রকে না রেখে একজন অন্তত তরুণকে সামনে আনলে খেলায় একটা গতি স্বাভাবিক ভাবেই আসত। সূর্য, পাণ্ডিয়া কিংবা পন্থকে কি ভাবা যেত না? আসলে যে টি-টোয়েন্টি তরুণদেরই খেলা। তাছাড়া ফর্মে না থাকা রাহুল কিংবা অধিনায়ক রোহিত কোনও একজনকে পাঁচে নামালে হয়তো ব্যাটিং গভীরতাই বাড়ত।
[আরও পড়ুন: নক আউটের অভিশাপ কাটাতে পারলেন না রোহিতও, সেমিফাইনালে ভারতকে পিষে দিল ইংল্যান্ড]
বোলিং পরিবর্তনে সেই অর্থে অর্থোডক্সই থেকেছেন রোহিত (Rohit Sharma)। অধিনায়ক কোনও চমকের ধার ধারেননি। পরিস্থিতি সামলাতে বোলার পরিবর্তনে চমক আনা, কোনও চটজলদি মোড়ঘোরানো সিদ্ধান্ত টি-টোয়েন্টিতে দারুণ কাজে আসে। কিন্তু রোহিতরা এই ধরনের চমক দিতে পারেননি। এরপরও কি বিশ্বকাপ আসার কথা ছিল? এই প্রশ্নই উঠে আসছে ম্যাচশেষে।
খেলোয়াড়দের গড় বয়সের ক্ষেত্রেও এই প্রশ্নটা উঠছে। তিরিশ ছুঁয়ে ফেলা খেলোয়াড়দের ব্যাটিং অর্ডারে আধিক্যও একটা ফ্যাক্টর। তাছাড়া ব্যাটিং অর্ডারের নিচের দিকে বড় হিট নিতে না পারা টেল এন্ডারদের থাকাটাও সেই পুরনো আমলের ক্রিকেটকেই মনে করায়। বিশ্বকাপের ব্যর্থতার পরে এবার কি নতুন রণকৌশল আনবেন রাহুল দ্রাবিড়রা? আপাতত সেদিকেই তাকিয়ে ওয়াকিবহাল মহল।