কলহার মুখোপাধ্যায়, বিধাননগর : উদাহরণে ক্ষুদ্র বোঝাতে শ্রীচৈতন্যের ‘তৃণাদপী সুণীচেন’অর্থাৎ ‘ঘাসের ন্যায় ক্ষুদ্র’ শব্দবন্ধটি ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। উদাহরণের অলঙ্কার থেকে এই শব্দবন্ধটিকে বাস্তবের মাটিতে নামিয়ে নিয়ে এলেন ‘ভোটকুশলী’ পিকে অর্থাৎ প্রশান্ত কিশোর।
পুরভোটের প্রাক্কালে তৃণমূল কংগ্রেসের হালহকিকত বুঝতে তৃণমূল স্তরের উপরই ভরসা রাখছে টিম পিকে। শনিবার বাগুইআটির এক ‘অতি ক্ষুদ্র স্তরের কর্মী’কে ফোন করে ওয়ার্ডের হাল জেনেছেন পিকের প্রতিনিধি। ফোন পেয়ে আশ্চর্য ওয়ার্ডের কাউন্সিলরও। কারণ, তাঁর কাছেও এসেছিল টিমের ফোন। কথা হয়েছে সাকুল্যে ৪৫ সেকেন্ড। আর তৃণমূলের যে বুথস্তরের কর্মীর কাছে ফোন এসেছিল, তার সঙ্গে পিকের টিমের কথা হয়েছে ১৩ মিনিট ২৫ সেকেন্ড।
[আরও পড়ুন: খাস কলকাতায় করোনা ভাইরাসের থাবা! আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে যাদবপুরের বৃদ্ধ]
পিকের ফোন পাওয়া তৃণমূলের কর্মী একেবারে বুথস্তরের। তাঁর কাছে বিকেল ৪.৪৯ নাগাদ ঢোকে ফোনটি। প্রথমে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল যে, ফোনটি টিম পিকের থেকে এসেছে, জানিয়েছেন ওই কর্মী। প্রথমে কর্মীর নাম এবং ধাম জিজ্ঞেস করার পর ফোনের অপর প্রান্তের মহিলা বলেন, “প্রশান্ত কিশোরের অফিস…তৃণমূল কংগ্রেস।” ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন ওই কর্মী। তাই তৃণমূল ও অফিস কথাটির মাঝখানে আরও একটা শব্দ ব্যবহার করেছিলেন মহিলা। কিন্তু ঘাবড়ে গিয়ে সেটি এই তৃণমূল কর্মী বেমালুম ভুলে গিয়েছেন বলে জানালেন।
সময় নষ্ট করেনি টিম পিকে। ফোন করার পর সরাসরি প্রসঙ্গে প্রবেশ করে মহিলা জানতে চান, ওয়ার্ডে অবাঙালি ভোটারের সংখ্যা কত? হিন্দু ও মুসলমান ভোটার সংখ্যা কত? আর তাৎপর্যপূর্ণ প্রশ্নটি ছিল, ওয়ার্ডে এসটি ও এসসি ভোটার কী? কর্মীর বক্তব্য, বিজেপির সঙ্গে লড়াইয়ে এই তিনটি বিষয় জরুরি হয়ে উঠবে বলে দলীয়ভাবে তাঁরাও ঘুঁটি সাজাচ্ছেন। তাই তথ্যগুলি কণ্ঠস্থ ছিল। উত্তর দিতে এক মিনিটও দেরি হয়নি। এনআরসি ইস্যুতে সংখ্যালঘু ভোট ভাগ হবেই। তার জন্য পিকের অফিসের প্রথম প্রশ্নটিই ছিল, হিন্দু ও মুসলমান ভোটার সংখ্যা কত?
[আরও পড়ুন: বইমেলায় অশান্তির জেরে বিধাননগর উত্তর থানায় ধুন্ধুমার, মারধর মহিলা পুলিশকর্মীকে]
ওই ওয়ার্ডে উদ্বাস্তু পরিবার রয়েছে বেশ কয়েকটি। NRC,CAA’র প্রভাব সেখানে কেমন পড়তে পারে, তা বুঝে নেওয়ার জন্য়ই এই সংখ্যা জানা। এছাড়া অবাঙালিদের মধ্যে বিজেপির প্রভাব রয়েছে বলে বাঙালি ও অবাঙালি ভোটারদের সংখ্যাও আলাদা করে জিজ্ঞাসা করেছেন পিকের প্রতিনিধি। কর্মীকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ওয়ার্ডে জিতে আসার সম্ভাবনা কতটা? মানুষের কাছে নিয়মিত যাওয়া হচ্ছে নাকি সে কাজে কোনও গাফিলতি রয়েছে, তা–ও জানতে চাওয়া হয়েছে। পুর নাগরিকরা সরকারি পরিষেবা পাচ্ছেন কিনা? এবং এক্ষেত্রে কোনও বৈষম্য হচ্ছে কিনা তা–ও জানতে চাওয়া হয়েছিল কর্মীটির কাছে।
এদিন দুপুর ১২টা নাগাদ ফোন এসেছিল ওয়ার্ডের পুরমাতার কাছে। কথা হয়েছে ৪৫ সেকেন্ড। তাঁকে শুধু নিজের ওয়ার্ডের ভৌগোলিক অবস্থান জানাতে বলা হয়েছিল। ম্যাপটি বুঝিয়ে বলার পর ধন্যবাদ জানিয়ে ফোন রেখে দেন টিম পিকের পুরুষকর্মী। যে নম্বর থেকে ফোন এসেছিল। তাতে পরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন ওই বুথকর্মী। কিন্তু সেই নম্বরটির কোনও অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি বলে দাবি তাঁর।
The post পুরভোটে বুথকর্মীরাই ভরসা, ফোনে তাঁদের থেকে খুঁটিনাটি জানল টিম পিকে appeared first on Sangbad Pratidin.