সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সোশাল মিডিয়ায় বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এলন মাস্কের কোম্পানি ‘এক্স’ (পূর্বতন টুইটার)-এর সঙ্গে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর তথ্যপ্রযুক্তি আইন-এ গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন আনল কেন্দ্র। বুধবার গভীর রাতে ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক ২০২১ সালের ইন্টামিডিয়াকি গাইডলাইন্স অ্যান্ড ডিজিটাল মিডিয়া এথিকস কোড রুল'-এর নতুন সংশোধনী বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।
মন্ত্রকের দাবি, এই পরিবর্তনের লক্ষ্য “স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা ও নিরাপত্তা বাড়ানো”। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, আর এখন থেকে “অবৈধ তথ্য” মুছে ফেলার নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা থাকবে শুধু সিনিয়র কর্মকর্তাদের হাতে। অর্থাৎ, কোনও সরকারি নির্দেশ জারি করতে পারবেন কেবলমাত্র যুগ্মসচিব বা তার উপরের পদাধিকারী, অথবা অনুমোদিত সংস্থার সমতুল্য পদমর্যাদার আধিকারিক। পুলিশ প্রশাসনের ক্ষেত্রে এই দায়িত্ব থাকবে বিশেষ অনুমোদিত ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি)-র ওপর। এতদিন পর্যন্ত পুলিশ ইন্সপেক্টররাও এই ধরনের নির্দেশ দিতে পারতেন, যা এখন বাতিল করা হয়েছে।
মন্ত্রক জানিয়েছে, প্রতিটি নির্দেশ বা ‘ইন্টিমেশন’-এর সঙ্গে এবার থেকে বিস্তারিত যুক্তি ও নির্দিষ্ট আইনি ভিত্তি উল্লেখ করতে হবে। অর্থাৎ, কোন আইনের কোন ধারার অধীনে তথ্যটি ‘অবৈধ’ বলে বিবেচিত হচ্ছে, তা স্পষ্টভাবে জানাতে হবে। নির্দেশে সেই কনটেন্টের সুনির্দিষ্ট লিঙ্ক, আইডেন্টিফায়ার বা ইলেকট্রনিক অবস্থানও উল্লেখ করতে হবে। এই সংশোধনগুলি আগামী ১৫ নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে। সরকার জানিয়েছে, সংশোধনগুলির ফলে আইটি আইনের অধীনে মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলির দায়িত্ব আরও স্পষ্ট হবে এবং সরকারি নির্দেশের ওপর সর্বোচ্চ স্তরে মাসিক পর্যালোচনাও চালু করা হবে, যাতে পদক্ষেপগুলি “প্রয়োজনীয়, সামঞ্জস্যপূর্ণ ও আইনি সীমার মধ্যে থাকে।”
এই পরিবর্তনের পটভূমিতে রয়েছে কর্নাটক হাই কোর্টের সাম্প্রতিক রায়। গত মাসে আদালত ‘এক্স’ কর্পোরেশনের দায়ের করা একটি পিটিশন খারিজ করে জানায়—সামাজিক মাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণে আনা জরুরি, বিশেষ করে নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধের ক্ষেত্রে। আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, “নিয়ন্ত্রণ ব্যর্থ হলে নাগরিকের মর্যাদার সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়।” তবে ‘এক্স’ কর্পোরেশন এই রায়ের পর তীব্র আপত্তি জানিয়েছিল। তারা জানায়, “নতুন ব্যবস্থা ‘সহযোগ’ নামের একটি গোপন পোর্টালের মাধ্যমে অসংখ্য পুলিশ আধিকারিককে কোনও বিচারিক পর্যালোচনা ছাড়াই কনটেন্ট সরানোর ক্ষমতা দিচ্ছে। এটি আইটি আইনের ধারা ৬৯এ-এর পরিপন্থী এবং নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত।”
কোম্পানির অভিযোগ, এই প্রক্রিয়া আইনি পর্যালোচনা এড়িয়ে গোপনে নিয়ন্ত্রণের সুযোগ তৈরি করছে। কেন্দ্রের তরফে অবশ্য দাবি, এই সংশোধনগুলি নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকারের সঙ্গে রাষ্ট্রের ন্যায্য নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে। মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “সংশোধনের ফলে একদিকে সরকারি পদক্ষেপে স্বচ্ছতা আসবে, অন্যদিকে কোনও ইচ্ছামত সেন্সরশিপের সম্ভাবনা রোধ হবে। নিয়মিত পর্যালোচনা, নির্দিষ্ট দায়িত্ব নির্ধারণ ও স্পষ্ট আইনি ভিত্তি উল্লেখ বাধ্যতামূলক করায় প্রশাসনিক জবাবদিহি আরও মজবুত হবে।” অর্থাৎ, মাস্কের এক্স-এর সঙ্গে আইনি সংঘাতের জেরে তৈরি হওয়া বিতর্কের পর, ডিজিটাল পরিসরে মতপ্রকাশ ও নিয়ন্ত্রণের সীমানা নিয়ে নতুন করে কড়া দিশা ঠিক করে দিল কেন্দ্র।
