স্টাফ রিপোর্টার: করোনা (Corona) পরিস্থিতিতে হাই প্রোটিন (Protein) ডায়েটের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু বাজারে গিয়ে মুরগির মাংস কিনতেই হাত পুড়ছে আম গেরস্তের। বাজার হেরফেরে আচমকাই মাংসের দাম কেজিতে বেড়ে গিয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। ফলে হিসেব গুলিয়ে গিয়ে পকেটে পড়ছে টান। গত সপ্তাহে খুচরো বাজারে মুরগির মাংসের কেজি প্রতি দাম ছিল ১৫০-১৮০টাকা। আর শুক্রবারই মুরগির মাংস বাজারভেদে বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ২২০-২৪০ টাকায়। সরকারি ফেয়ার প্রাইস শপেও কেজি প্রতি ২০৫ টাকাতে বিক্রি হচ্ছে মুরগির মাংস। আর ডিম? তার দামও বেড়েছে দিন দুই ধরে। খুচরো বাজারে দাম যেখানে সাড়ে চার টাকা থেকে পাঁচ টাকা ছিল তা এখন পৌঁছে গিয়েছে ছ’টাকা। দিন চারেক আগেও ১০ টাকা জোড়া বিক্রি হয়েছে ডিম। এখন ১৩ টাকা জোড়া। চারটে নিলে ২৫ টাকা। ফলে গরিব মানুষ যে শরীরে ইমিউনিটি পাওয়ার বাড়াতে ডিম খাবে তারও উপায় নেই।
করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, “এই সময় প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার দরকার। ডিম এবং মাংসে প্রচুর প্রোটিন আছে। তাই এটা খেতে পারলে ভাল হয়।” ইন্টারন্যাল মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায়ও জানিয়েছেন, “এখন শরীরে প্রোটিন প্রয়োজন। কারণ, করোনা ভাইরাসের হানা শরীরকে ভিতর থেকে দুর্বল করে দেয়। তাই এনার্জি বাড়াতে প্রোটিন রয়েছে এমন খাবার চাই। না হলে দুর্বলতা কাটবে না সহজে।” তাই ফল ও সবজির পাশাপাশি ডিম ও মাংস খেতেই হবে বলে মত দিব্যেন্দুবাবুর।
কিন্তু মানুষ খাবে কী! মাছ—সবজিরও একই অবস্থা। একটু সস্তা ছিল ডিম, মাংস। তার দামও বেড়েছে। পোল্ট্রি ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এই মুহূর্তে দাম কমার সম্ভাবনা নেই। বরং তা আরও বাড়বে। কারণ জোগান নেই। মুরগির খাবারের জোগান না থাকায় উৎপাদন কম হচ্ছে, তাতেই দাম বাড়ছে। ফলেরও দাম আকাশছোঁয়া। বিশেষ করে লেবু ও আপেলের দাম মাত্রাছাড়া।
[আরও পড়ুন: হামাসের বিরুদ্ধে ট্যাঙ্ক নামাল ইজরায়েল! সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ নেটফ্লিক্সের তারকা অভিনেত্রী]
করোনার প্রথম ধাক্কা বদলে দিয়েছে বহু মানুষের জীবন। কেউ হারিয়েছেন চাকরি, কারও কোপ পড়েছে রোজগারে। তার ওপর আছড়ে পড়ছে দ্বিতীয় ঢেউ। এমন অবস্থায় দু’বেলা দু’মুঠো ভাত জোগাড়ই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই পরিস্থিতিতে মুরগির মাংস, ডিম খেয়ে যে শরীরে প্রোটিন প্রবেশ করাবে তারও উপায় নেই। ক্রেতারা বলছেন, লকডাউনের সুযোগের ব্যবহার করছেন ব্যবসায়ীরা। নিজেরা নিজেদের মতো করে ঠিক করে যেমন খুশি দাম ঠিক করছেন। বিক্রেতাদের অবশ্য দাবি, দাম বাড়ছে পোল্ট্রি থেকেই। পোল্ট্রি ব্যবসায়ে যুক্ত মানুষজন বলছেন, সয়াবিনের জোগান নেই। উৎপাদিত মুরগির ৪০ শতাংশ খাবার আমাদের রাজ্যে উৎপন্ন হয়। বাকি ৬০ শতাংশ আমদানি করতে হয় ভিন দেশ থেকে। কিন্তু তা আসছে না। সারা দেশে এখন মুরগির ঘাটতি চলছে। তবে কেন্দ্র আলোচনা করছে। আশা করা হচ্ছে ওই ভিনদেশ থেকে সয়াবিন আনতে কোনও সমস্যা হবে না। কিন্তু তার পরও এর দাম ঠিক হতে আরও দু’—আড়াই মাস লেগে যাবে। আরও তিন মাস আগে থেকে বিষয়টি নিয়ে দেশের বিভিন্ন পোল্ট্রি সংগঠন কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু অভিযোগ, কেন্দ্র গড়িমসি করেছে। পশ্চিমবঙ্গ পোলট্রি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মদনমোহন মাইতি এ দিন জানান, “মুরগির খাবারের জোগানে ঘাটতি আছে। সয়াবিন আসছে না। যতদিন না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে ততদিন উৎপাদন কমই থাকবে। সে কারণেই দাম বাড়ছে।”