বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: ভোট বড় বালাই। শক্তি প্রদর্শন করতে গিয়ে কার্যত কবরে চলে যাওয়া পার্টির নেতাদেরও দেখা গেল সভাস্থল আলো করতে বসে থাকতে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ভাগ্য নির্ধারণের শরিক হলেন তাঁরা যাঁদের সংসদে কোনও প্রতিনিধিই নেই! দুই শিবিরের মাত্র ৯টি দল রয়েছে যাঁদের সংসদে প্রতিনিধি দশের ওপরে। অর্থাৎ লোকসভার ৫৪৫ আসনের ৪৭৯ আসন এই ন’টি দলের দখলে। এরমধ্যে বিজেপির (BJP) দখলেই আছে ৩০৩টি আসন। তবুও কেন কার্যত রাজনীতির ময়দানে কবরে চলে যাওয়া দলকে প্রাণদানের চেষ্টা? চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ভোটের আগে জনতা জনার্দনের কাছে শিবির ভারী দেখাতেই এমন কৌশল।
বেঙ্গালুরু ও দিল্লি মিলিয়ে রাজনীতির দুই মহা বৈঠকে যে ৬৪ দল অংশ নিল তাদের মধ্যে মাত্র নয়টি দলের দখলে আছে দশটির বেশি লোকসভা আসন। লোকসভার মোট আসন ৫৪৫। তার মধ্যে ৪৭৯টি আসন রয়েছে ন’টি দলের দখলে। দ্বিতীয় স্থানে আছে কংগ্রেস। তাদের ৫২ জন সাংসদ। ২৩টি আসনের অধিকারী ডিএমকে রয়েছে তৃতীয় স্থানে। বাকি দলগুলি হল, তৃণমূল কংগ্রেস ২২, জনতাদল ইউনাইটেড ১৬, অখণ্ড শিব সেনা ১৮ এবং বহুজন সমাজ পার্টি ১০। অর্থাৎ ৫৫টি দলের সাংসদ সংখ্যা দশেরও কম।
[আরও পড়ুন: ‘মিঠাই’য়ের খোলস ছেড়েই উষ্ণ মেজাজে সৌমিতৃষা, ‘কেন তুমি এত হট?’, প্রশ্ন নেটিজেনদের]
সূত্রের খবর, বিজেপির বৈঠকে (NDA meet) যোগ দিতে যাওয়া দলগুলির আটটির কোনও সাংসদই নেই। ৯টি দলের আছে মাত্র একজন করে সাংসদ। আর তিনটি দলের আছে ৩ জন করে সাংসদ। দক্ষিণে বিজেপির হাতে থাকা একমাত্র রাজ্য কর্ণাটক হাতছাড়া হয়েছে। মঙ্গলবার দিল্লির বৈঠকে দক্ষিণের বহু ছোট দলকে শামিল করেন বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা। এছাড়া, নীতীশ কুমারকে জবাব দিতে বিহার থেকে মঙ্গলবারের বৈঠকে যোগ দেয় নতুন ৪টি দল। মঙ্গলবারের বৈঠকেও তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে এনডিএ-র শরিক করা হয়। তাৎপর্যপূর্ণ হল, এই ৪ দলের তিনটির নেতাই নীতীশের একদা অভিন্ন হৃদয় বন্ধু।
আশ্চর্যের বিষয় হল, গত ১৫ মে ছিল এনডিএ-র পঁচিশ বছর পূর্তি। বিজেপি তা নিয়ে উচ্চবাচ্য করেনি। অর্থাৎ শরিকদের ব্যাপারে পদ্ম শিবিরের তেমন মাথাব্যথা ছিল না। কিন্তু কর্ণাটক বিধানসভার ভোটের ফল তাদের সব অঙ্ক ওলট পালট করে দিয়েছে। দল বুঝতে পেরেছে মোদি ম্যাজিকের ভরসায় লোকসভার ভোট বৈতরণী পেরনো কঠিন হবে।
[আরও পড়ুন: খারাপ আবহাওয়া, ভোপালে জরুরি অবতরণ করল সোনিয়া ও রাহুল গান্ধীর বিমান]
কর্ণাটকের ভোটে দেখা গিয়েছে রাজ্য সরকারের কাজকর্ম নিয়ে তৈরি হওয়া প্রতিষ্ঠান বিরোধী ভোটের হাওয়া মোদি ম্যাজিকে উধাও করে দেওয়া সম্ভব হয়নি। সামনে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের ভোট আসন্ন। নভেম্বরে অনুষ্ঠিত সেই ভোটেও কর্ণাটকের পুনরাবৃত্তি অর্থাৎ বিজেপির ভরাডুবি হলে লোকসভা ভোটে তার প্রভাব পড়তে পারে। তাই যত ছোট, ক্ষুদ্র দলই হোক না কেন, বিজেপি এখন শরিক জুটিয়ে জোট রাজনীতিতে বিরোধীদের টক্কর দিতে চাইছে।
কংগ্রেসের ডাকা বেঙ্গালুরুর বৈঠকেও মঙ্গলবার যোগদানকারী দলগুলির মধ্যে অনেকগুলির সংসদে অস্তিত্ব নেই। আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লকের মতো ছোট দলগুলিকেও এবার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।