সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অনুরা কুমার দিশানায়েক। শ্রীলঙ্কার বামপন্থী দল জনতা ভিমুক্তি পেরামুনার (JVP) তরুণ নেতা। দ্বীপরাষ্ট্রের সদ্য নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি। ২০২২ সালে আর্থিক মন্দার পর শ্রীলঙ্কার প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন ৫৫ বছরের বাম নেতা। এতদিন ধরে যে রাজনৈতিক সংগঠন দ্বীপরাষ্ট্রের রাজনীতিতে দুর্বল তথা প্রান্তিক অবস্থায় ছিল, সেই দলের প্রার্থী জেতায় অবাক অনেকে। সেদেশের নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী ভোট প্রাপ্তির নিরিখে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে অনেকটাই পিছনে ফেলেছেন দিশানায়েক। শনিবারের নির্বাচনে তাঁর ভোটপ্রাপ্তি ৪২ শতাংশেরও বেশি। অন্যদিকে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাজিথ প্রেমদাসা পেয়েছেন ৩২.৭৬ শতাংশ ভোট। সাফল্যই পাদপ্রদীপের আলোয় আনে মানুষকে। ফলে এখন প্রশ্ন উঠছে, কে এই দিশানায়েক? কোন জাদুতে দ্বীপারাষ্ট্রের রাজনৈতিক দিশা বদলে দিলেন তিনি?
অনুরা কুমার দিশানায়েক শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক মহলে পরিচিত একেডি (AKD) নামে। ১৯৬৮ সালের ২৪ নভেম্বর অনুরাধাপুরা জেলায় কৃষক পরিবারে জন্ম। বাবা সরকারি অফিসের নিচুতলার কর্মী, মা গৃহবধূ। দরিদ্র পরিবারের ছেলের রাজনীতিতে আসার কথা ছিল না। কিন্তু ১৯৮৫ সালে অনুরাধাপুরায় হামলা চালায় এলটিটিই। যাতে শিশু ও মহিলা-সহ মৃত্যু হয়েছিল ১৪৬ জনের। ভয়ংকর হিংসায় পরিবারের এক সদস্যকে হারান একেডি। এমনকী তাঁদের বাড়িটিকেও ধ্বংস করা হয়। এই ঘটনাই জন্ম দেয় ভবিষ্যতের এক রাষ্ট্রনেতার। জেভিপি-র রাজনৈতিক এজেন্ডার প্রতি আকৃষ্ট হন দিশানায়েক।
প্রাথমিকভাবে জেভিপি একটি কট্টর সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী এবং সমাজতান্ত্রিক অবস্থান বজায় রেখেছিল। কিন্তু ১৯৮০-র দশকে সিংহলী জাতীয়তাবাদের দিকে ঝোঁকে দলটি। নেপথ্যে এলটিটিই তথা তামিলদের সঙ্গে সংঘাত। এর মধ্যে আটের দশকে নিষিদ্ধ হয়েছিল জেভিপি। পরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় তৎকালীন সরকার। এর পর মূলধারার রাজনীতিতে প্রবেশ করে বামপন্থী এই দলটি। নির্বাচনে জয়লাভ করে। অন্যদিকে মার্কসবাদী লেনিনবাদী দলের ছাত্র সংগঠন থেকে উত্থান হয় একেডি-র।
২০০০ সালে প্রথমবার সংসদ সদস্য হন একেডি। ২০০৪-'০৫ সালে চন্দ্রিকা কুমারতুঙ্গে বন্দরনায়েকে সরকারের কৃষিমন্ত্রী ছিলেন। ২০১৪ সালের দলের প্রধান নেতা নির্বাচিত হন। এরপর এনপিপি বা ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার জোট গঠন করেন তিনি। শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টি এবং ইউনাইডেট ন্যাশনাল পার্টির বিকল্প মঞ্চ হয়ে ওঠে এই এনপিপি। চলতি নির্বাচনে মেধাবী, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির একেডিতেই ভরসা রাখলেন দ্বীপরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ। বিশেষজ্ঞ বলছেন, তাঁর এই সাফল্যের অন্যতম কারণ জনতার 'ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে' ফেলার প্রবণতা। আর্থিক মন্দা পরবর্তী সময় দ্বীপরাষ্ট্র নতুন কাণ্ডারি চাইছে। এখন দেখার দেউলিয়া দেশকে দিশা দিতে পারন কিনা দিশানায়েক?