সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মানব শরীরে বরাহ-বৃক্ক প্রতিস্থাপন! গোটা বিশ্বে তোলপাড় ফেলে ৬২ বছরের এক সঙ্কটজনক রোগীর শরীরে শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপন করলেন আমেরিকার চিকিৎসকরা। বোস্টনের ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালে গত ১৬ মার্চ এই প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া হয়। সম্প্রতি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন। তাঁদের দাবি, ‘এই জেনোজেনিক ট্রান্সপ্লান্টেশন সফল হয়েছে। রিচার্ড স্লেম্যান নামে ওই রোগী সুস্থ আছেন।’ এই প্রথমবার শূকরের কিডনি মানব শরীরে প্রতিস্থাপিত (kidney transplant) হল। চিকিৎসা বিজ্ঞানে জন্ম নিল নতুন রূপকথা।
এর আগে মানুষের শরীরে শূকরের (Pig) হার্ট প্রতিস্থাপিত হয়েছে। এবং আশ্চর্যের বিষয় সেই সাহসী অস্ত্রোপচার প্রথম করেছেন একজন ভারতীয় চিকিৎসক, ডা. ধনীরাম বড়ুয়া। ধনীরামের রোগী পূর্ণ সইকিয়া শূকরের হৃদপিণ্ড নিয়ে সাতদিন বেঁচেছিলেন। এই নিয়ম বহির্ভূত অস্ত্রোপচারের জন্য ধনীরামের জেল হয়েছিল। পরে আমেরিকায় একইরকম চেষ্টা হয়। মানবদেহে শূকরের হার্ট প্রতিস্থাপন। সেবার প্রতিস্থাপনের দু’মাস পর রোগীর মৃতু্য হয়। রিচার্ড স্লেম্যান পিগ-কিডনি নিয়ে দশদিন পার করেছেন। আরও কতদিন বেঁচে থাকবেন সময় বলবে। তবে, এই ঘটনা চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন আশার আলো জ্বেলেছে। আলোড়ন ফেলেছে বিজ্ঞান জগতে।
[আরও পড়ুন: বাল্টিমোরের সেতু দুর্ঘটনায় ৬ জনের মৃত্যুর আশঙ্কা, তবে নিরাপদেই জাহাজে থাকা ভারতীয়রা]
তবে রাস্তা মসৃণ ছিল না। অনেক সাধ্য সাধনার পর সফল প্রতিস্থাপন সম্ভব হয়। আসলে, প্রাণীর অঙ্গ মানুষে প্রতিস্থাপন অর্থাৎ জেনোজেনিক ট্রান্সপ্লান্টেশনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল ‘টিস্যু রিজেকশন’ অর্থাৎ বর্জন। এক্ষেত্রে ‘ক্রিসপার ক্যাস-৯’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে শূকরের কিডনিতে ৬৯টি জিনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর মধ্যে এমন তিনটি জিনের পরিবর্তন করা হয়েছে, যার জেরে রিজেকশন করাতে পটু এইরকম কিডনি পৃষ্ঠের তিনটি সুগার অণু বাদ গেছে। আবার সাতটি এমন জিনের পরিবর্তন করা হয়েছে যাতে মানুষের কোষ প্রতিস্থাপিত কিডনিকে চিনতে পারে। বাকি ৫৯টি জিন পরিবর্তন করা হয়েছে, যাতে শূকরের কিডনি থেকে কোনও সুপ্ত জীবাণু ও ভাইরাস মানব (গ্রহীতার) দেহে চলে আসতে না পারে। এমনটাই জানালেন বিশেষজ্ঞ ডা. সিদ্ধার্থ জোয়ারদার। তঁার পর্যবেক্ষণ, “এই প্রতিস্থাপন পদ্ধতি চিকিৎসাবিজ্ঞান গবেষণায় এক নতুন পথ খুলে দিল। তবে এখন দেখার, সাব-অ্যাকুউট ও অ্যাকুউট রিজেকশনের ঝক্কি সামলালেও এটি শরীরের ক্রনিক রিজেকশন পদ্ধতিকে কতটা সামলাতে পারে। কারণ তার উপরই প্রতিস্থাপিত অঙ্গের স্থায়িত্ব বা আয়ু নির্ভর করবে।”
একই বক্তব্য কার্ডিওলজিস্ট ডা. তাপস রায়চৌধুরির। কলকাতায় প্রথম হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট করানোর অন্যতম কারিগরের বক্তব্য, “যে পদ্ধতিতে বিজ্ঞানীরা এগোচ্ছেন তা সত্যিই আশা জাগাচ্ছে। পিগ-হার্ট প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রেও এই ‘ক্রিসপার ক্যাস-৯’ প্রযুক্তি কার্যকর হবে বলে মনে করা হচ্ছে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে ভারতে কাজ হচ্ছে। তবে, খুবই ব্যয়সাপেক্ষ। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে এই পরিস্থিতির বদল হতে পারে।” এই শহরে বহু মানুষকে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করিয়ে নবজীবন দান করেছেন নেফ্রোলজিস্ট ডা. প্রতিম সেনগুপ্ত। ধনীরামের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘‘বহু বছর ধরেই এই জেনোট্রান্সপ্লান্টেশন নিয়ে গবেষণা চলছে। কাজ হচ্ছে। আর এই ব্যাপারে ১৯৯৭ সালে ধনীরামই বিশ্বকে পথ দেখিয়েছেন। একথা বলতে কোনও দ্বিধা নেই। ভবিষ্যতে ধনীরামের দেশ বিশ্বকে শাসন করতেই পারে।’’