অর্ণব আইচ: চুরির পর বাড়ি যাওয়ার তাড়া থাকে চোরেরও। তাই শেষ ট্রেনের জন্য স্টেশনে অপেক্ষা করছিল চোর। তখন তার ঝোলায় ভর্তি সোনার গয়না আর মার্কিন ডলার। কিন্তু চুরির জিনিস আর চোরের কপালে সইল কোথায়? বাধ সাধল বাটপাড়। নির্জন স্টেশনে চোরকে মারধর করে তার কাছ থেকে সোনা আর ডলার লুঠ তথা বাটপাড়ি করেই পালাল সে। সব হারিয়ে রাতে রীতিমতো কাঁদতে কাঁদতেই বাড়ি চলে যায় চোর। শেষ পর্যন্ত শেখ রাকেশ নামে ওই চোরকে ধরেই বাটপাড় রাজা সর্দারকে গ্রেপ্তার করলেন লালবাজারের (Lal Bazar) গোয়েন্দারা।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাটি কয়েকদিন আগের। দক্ষিণ ২৪ পরগনা এলাকার বজবজ (Budge Budge) এলাকার কুখ্যাত চোর শেখ রাকেশ বেরিয়েছিল তার কাজে। দিনের বেলায় সুযোগ বুঝে ঢুকে পড়েছিল দক্ষিণ কলকাতার নিউ আলিপুরের একটি বাড়িতে। ওই বাড়ির বৃদ্ধ বাসিন্দার মেয়ে ও জামাই তার কিছুদিন আগে এসেছিলেন আমেরিকা থেকে। জামাই শ্বশুরকে কিছু ডলার দিয়ে যান। বৃদ্ধ সেগুলি আলমারিতে রেখেছিলেন। এ ছাড়াও আলমারিতে ছিল লক্ষাধিক টাকার সোনার গয়না।
বাড়ির লোকের অলক্ষ্যে দরজার লক ভেঙে বাড়িতে ঢুকে আলমারি খুলে ওই গয়না ও লকারে রাখা ৬০ ডলার নিয়ে উধাও হয়ে যায় চোর রাকেশ। ফুরফুরে মেজাজে হাঁটতে হাঁটতে নিউ আলিপুর থেকে সরাসরি স্টেশনে না গিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তারাতলায় গিয়ে কয়েকবার বাস পাল্টে পৌঁছে যায় আক্রা সন্তোষপুরে। তখন রাত হয়ে গিয়েছে। সন্তোষপুর স্টেশনে নির্জন একটি জায়গায় বসে শেষ ট্রেনের জন্য সময় গুণছিল রাকেশ। রাত সোয়া এগারোটার কিছু পরেই তার পিছনে দাঁড়ায় একজন। প্রথমে ওই ব্যক্তি নিজেকে ‘পুলিশ’বলে পরিচয় দেয় তার ব্যাগ তল্লাশি করবে বলে। রাকেশ বাধা দিলে তাকে রীতিমতো মারধর করতে থাকে সে। গালিগালাজ দিয়ে ব্যাগটি কেড়ে নেয়। ব্যাগের ভিতর সোনার গয়না ও ডলার দেখে ফের তাকে মারধর করে প্রায় অচেতন করে ফেলে। এর পর চোরের কাছ থেকে ব্যাগ লুঠ করে পালিয়ে যায় ওই বাটপাড়। শেষ ট্রেনে চড়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি চলে যায় চোর রাকেশ।
[আরও পড়ুন: চরম গরমেও শীতপোশাকে কুচকাওয়াজ! রাজকুমারের সামনেই জ্ঞান হারালেন ৩ ব্রিটিশ সেনা]
এই চুরির ব্যাপারে প্রথমে নিউ আলিপুর থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। চুরির তদন্ত শুরু করে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ। চুরির পদ্ধতি ও সিসিটিভির ফুটেজ দেখে নিশ্চিত হওয়ার পর পুলিশ রাকেশের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। কিন্তু চুরির জিনিসগুলি কোথায়, সেই প্রশ্ন করতেই ফের পুলিশের সামনেই কাঁদতে থাকে সে। কেঁদে কেঁদেই বাটপাড় লুঠপাট করে চলে গিয়েছে বলে জানায়। প্রথমে গোয়েন্দারা বিশ্বাস করেননি। কিন্তু সন্তোষপুর স্টেশনে গিয়ে তদন্ত করে তাঁরা নিশ্চিত হন। স্টেশন ও তার আশপাশের সিসিটিভির ফুটেজ পরীক্ষা করেই গোয়েন্দা পুলিশ বাটপাড় রাজা সর্দারকে শনাক্ত করে। মেটিয়াবুরুজ লাগোয়া রবীন্দ্রনগর থেকে তাকে ধরা হয়। জেরায় জানা যায়, বাটপাড় রাজা নিজেও চুরি করে। উত্তর কলকাতার শ্যামপুকুর এলাকার একটি বাড়িতে সে চুরি করেছে। ওই অভিযোগেও তাকে গ্রেফতার করা হয়। নিউ আলিপুর থেকে চুরি হওয়া জিনিসগুলি রাজা সর্দারের কাছ থেকে উদ্ধারের চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।