অ্যানুইটি নিয়ে জানতে উৎসুক? তা, কোন ধরনের অ্যানুইটি আপনার জন্য আদর্শ হবে? ‘ইমিডিয়েট’ না ‘ডেফার্ড’? এই সমস্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কি অবসর আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন? না কি এখন থেকেই ভাবনা-চিন্তা শুরু করে দেওয়া ভাল? বিশ্লেষণ করলেন এবারের অতিথি শাক্য রায়চৌধুরি
‘সঞ্চয়’-এর পাতায় ‘Annuity’ (অ্যানুইটি) নিয়ে লেখা আগে পড়েছেন। সম্প্রতি দেখতে পাচ্ছি এই বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন অনেক নতুন ইনভেস্টর, বিমা সংস্থাগুলিও এই নিয়ে আলোচনায় উৎসাহী। বিশেষত ‘ইমিডিয়েট’ অ্যানুইটি কিনবেন, না ‘ডেফার্ড’– এই প্রশ্নটি করছেন ইনসিওরেন্স কোম্পানির সম্ভাব্য গ্রাহকরা। চলুন, আজ এই সওয়ালেরই উত্তর খুঁজি।
দেখুন, deferred annuity-র ক্ষেত্রে নামেই মালুম, ভেস্টিং এজ আরও কিছু সময় পরে আসবে। ডেফারমেন্ট পিরিয়ডেই সেটির কর্পাস তৈরি হবে। ভেস্টিং এজ চলে এলে, এই কর্পাস দিয়ে নির্দিষ্ট অ্যানুইটি কিনতে পারা যাবে। কেনার সময় রেট দেখে নেবেন।
এবার নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন, এমন প্রোডাক্ট কি সত্যিই আপনার দরকার? মানে, টাকা যদি পরে আসে, তাতে অসুবিধা হবে না? না কি, এখনই চাই? এই শেষ প্রশ্নটির উত্তর যদি ইতিবাচক হয়, অর্থাৎ এখন থেকে পেলেই মঙ্গল, তাহলে ইমিডিয়েট অ্যানুইটি আপনার প্রয়োজন। কারণ তার পিরিওডিক পেমেন্ট চালু হতে দেরি হবে না।
[আরও পড়ুন: কেন NFO-তে বিনিয়োগ করবেন? জেনে নিন লগ্নির গূঢ় কথা]
এবার প্রসঙ্গটি একটু ঘুরিয়ে দিই। রিটায়ারমেন্ট প্ল্যানিং করার সময় অ্যানুইটির উপযোগিতা পরখ করবেন। রেগুলার ইনকাম তথা নিয়মিত উপার্জন নিশ্চিত করতে হবে যখন অবসর নেব, এমন অনেকেই ভাবেন। সেক্ষেত্রে এই শ্রেণির প্রোডাক্ট আপনার সহায় হবে। হয়তো হাফ-ইয়ার্লি অপশন নিলেন, তাহলে বছরে দুবার পাবেন। মোটা কর্পাস তৈরি করতে পারলে, ভালই হবে। অন্য অপশনও নিতে পারেন।
অভিজ্ঞতায় দেখেছি, সাধারণ মানুষ মধ্যবয়সে অ্যানুইটি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা শুরু করেন, তার আগে নয়। অনেকের ক্ষেত্রে এই সময়ই তাঁদের কেরিয়ারের শ্রেষ্ঠ, যাকে আমরা ‘পিক’ বলে থাকি। উপার্জনও যথেষ্ট হয় সেই সন্ধিক্ষণে। সেদিক থেকে দেখলে হয়তো তখনই ইনসিওরেন্স সংক্রান্ত নতুন প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য আদর্শ। তবে এই নিয়ে মতান্তর আছে, তাও বলে রাখি। তখন অ্যানুইটি নিতে হলে পেমেন্ট-জনিত বিকল্পগুলি জেনে নিন।
যেমন ধরুন, ‘রিটার্ন অফ পার্চেজ প্রাইস’। নাম শুনে ব্যাপারটি নিঃসন্দেহে আকর্ষণীয় মনে হয়, তাই না? হ্যাঁ তাই, তবে লগ্নির বাজারে অন্য সব কিছুর মতো, এখানেও ভাল-মন্দ দুই-ই আছে। মূল ইস্যুটি হল, এমন আকর্ষণীয় বিকল্প নেওয়া সত্ত্বেও কি অন্য কোনওভাবে বিনিয়োগকারীকে আপোস করতে হবে? জেনে নিতে ভুলবেন না-দ্বায়িত্ববান লগ্নিকারী হিসাবে আপনাকে দুই দিকই সামলাতে হবে।
ইনসিওরেন্স কিনতে চাইলে এই সংক্রান্ত বিষয়গুলি বুঝতে হবে, তাই বিভিন্ন কোম্পানির প্রোডাক্ট নিয়ে তুল্যমূল্য আলোচনা করবেন। সময় না পেলে পেশাদারের সাহায্য নেবেন। নিয়ন্ত্রক আইআরডিএ এই প্রসঙ্গে কী জানাচ্ছেন, তাও পড়ে নিন, সুবিধা হবে। যথেষ্ট আগে শুরু করুন, অবসরের প্রাক্কালে হঠাৎ জেগে উঠে নয়, তখন বেশ দেরি হয়ে যাবে। অবসরকালে ‘ইনকাম রিপ্লেসমেন্ট’ করতে পারলে, কার না ভাল লাগে! আংশিক হলেও, অ্যানুইটি ব্যবহার করে সেই চেষ্টা একবার করা যায় কি না দেখুন। এই উত্সবের মরসুমে আরম্ভ করুন না, এখনই উপযুক্ত সময়, সবুরে মেওয়া হয়ত না ফলতেও পারে।
আশা করি, এখন অ্যানুইটি নিয়ে আপনার মনে কিছু নতুন প্রশ্ন জেগেছে, কয়েকটি ব্যাপারে জানার ইচ্ছা হয়েছে। এই লেখা পড়ে যদি সেগুলির উত্তর খুঁজে নেন, তাহলে বুঝব আমার প্রয়াস সার্থক।
(লেখক বিনিয়োগ উপদেষ্টা)