স্বাধীনতা অর্জনের প্রথম ধাপই হল নিজের আর্থিক সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা। কিন্তু অনেক মেয়েরাই জানেন না, কীভাবে নিখুঁতভাবে তা করা সম্ভব! বিমা পাশে দাঁড়াবে ঠিকই কিন্তু নিজের জন্য সঠিক বিমা বেছে নিতে গেলে সুচিন্তিত পদক্ষেপ জরুরি। তার জন্য দরকারে পেশাদারের সাহায্যও নিন। আর কী করবেন, লিখছেন বৃশাঙ্ক ফিনান্সিয়ালের কো-ফাউন্ডার সর্বাণী সাধু দাস
মেয়েদের যে অনেক ভূমিকায় দেখা যায় সে বিষয়ে আজ আর কোনও সন্দেহ নেই। পারিবারিক কাঠামো মজবুত রাখা, সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্বাচ্ছন্দ্যে বেঁধে রাখা–সেই বহুমুখী ভূমিকার কথাই কেবল বলছি না। নিজের স্বাস্থ্যে আঘাত এলেও মেয়েরা এগুলো পালন করেই থাকেন। তবে কখনও কি ভেবে দেখেছেন, আর্থিক সম্পদ গঠনে এবং তার সুরক্ষার জন্য মেয়েরা কি অসম্ভব পরিশ্রম করছেন? আর তার ফলও পাচ্ছেন? নিজেরা তো বটেই বাড়ির অন্যরাও উপকৃত হচ্ছেন সেই জন্য। আমার আজকের লেখা, ‘সঞ্চয়’-এর জন্য প্রথমবার, মেয়েদের ফিনান্সিয়াল প্ল্যানিং নিয়ে। প্রথমেই যে কথাটি বলতে চাই তা হল নিজেদের পরিকল্পনার উপর জোর দিন। আপনার সুরক্ষা তথা স্বাধীনতা এরই উপর নির্ভর করবে। অন্যের উপর নির্ভরতা কমানোর জন্য যা যা পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, তা নিতে হবে আপনাদের।
এই প্রসঙ্গে কয়েকটি সাধারণ টিপস
১. পরিবারের ফিনান্সিয়াল প্ল্যান, যেটি সবাইকার আর্থিক সমৃদ্ধির কথা ভেবে গঠিত হচ্ছে, সম্বন্ধে জেনে রাখুন। সম্ভব হলে এই প্ল্যানের ‘অ্যাঙ্কর’ হন আপনি নিজে। কখনই যেন পরিকল্পনাটি ‘অ্যাঙ্কর’ অর্থাৎ আপনাকে বাদ দিয়ে না হয়, তাও খেয়াল রাখুন।
২. নিজের ইনসিওরেন্স, ইনভেস্টমেন্ট, এস্টেট প্ল্যানিং ইত্যাদির জন্য সময় দিন। জানি, সকলের আর্থিক পরিস্থতি কখনই এক হতে পারে না, তবে সীমিত গণ্ডির মধ্যে ঘোরাফেরা করলেও এই সমস্ত বিষয়ে মন দেবেন। তাতে উপকার আপনারই।
৩. নিজের প্ল্যানটি যথাযথভাবে পরিচালনা করুন। উপযুক্ত পরামর্শদাতার সাহায্য ছাড়া তা ভালো করে হবে না, জেনে রাখুন। বিনিয়োগ করেই ক্ষান্ত দেবেন না, তার ফলটি কী হল, তা জানার চেষ্টা করুন।
৪. বিমা কিনলেই সব সমাধান পেয়ে গেলেন, এমনও ভাববেন না। নিজের ‘লাইফ স্টেজ’ যখন বদলাবে, তখন প্ল্যানের পুনঃর্বিন্যাস করতে হবে। সে ব্যাপারে তৈরি থাকুন।
৫. ইনভেস্টমেন্ট ইত্যাদি সংক্রান্ত বিষয়ে কৌতূহলী হয়ে উঠুন, আখেরে উপকার পাবেন। জানি, আপনি একার জন্য ভাবেন না, নিজে অনেক দায়িত্ব সামলান। তবুও বলছি এই যুগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে গেলে যথেষ্ট তথ্য ইত্যাদি আপনার থাকা প্রয়োজন। এই জন্য যা করা দরকার, তা করতে ভুলবেন না।
[আরও পড়ুন: কেন স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ করবেন? জেনে নিন বিস্তারিত]
প্রসঙ্গ বদলে একটু অন্য দিকে যাই। নিজের অভিজ্ঞতার নির্যাসটুকু একবার আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিই। আমরা অনেক সময় ‘বেবি স্টেপস’ সম্বন্ধে নানাভাবে বলে থাকি। আমার ব্যক্তিগত ধারণা, এই ‘বেবি স্টেপস’-এর উপমা মেয়েদের জন্য একেবারে যথার্থ। নিজের আর্থিক সুখ-শান্তির কথা ভেবে গোড়াতেই ‘বেবি স্টেপস’ নিন। ধরুন, অল্প বয়সে কয়েকটি ফান্ডে সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (সিপ) শুরু করলেন। সিপ নিয়ে নতুন করে কিছু বলব না, আপনারা অনেকেই জানেন।
আমার অভিজ্ঞতা বলছে, মেয়েদের অনেকেই চাকরি-বাকরি শুরু করার সময়েই সিপ আরম্ভ করছেন। এবং তাতে সুবিধা আছে, এ-ও বেশ বুঝে গিয়েছেন সবাই। স্বল্প টাকা নিয়মিতভাবে জমালে ভবিষ্যতে বড় তহবিল হাতে পাওয়া যাবে – এই সম্ভাবনা কিন্তু এক ধরনের নিশ্চিন্ত থাকার মূলে, তাই না? বীজ পুঁতুন, চারা গাছে জল দিন, বৃহৎ বৃক্ষে তা পরিণত হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। এই বিষয়টি মেয়েরা ভালোই জানেন। কোনও কালেই আর্থিক সুরক্ষার বিকল্প ছিল না, আজকের পৃথিবীতে তো একেবারেই নেই। নিজেদের টাকা-পয়সা নিজেরাই সামলাতে পারব, সম্পদ গঠন করে স্বপ্নপূরণ করতে পারব, এই ভাবনাই আমাদের পাথেয়। আমরা বাড়ি-বাইরে সবই সামলাই, তাই কিছুই আমাদের জন্য অভেদ্য চ্যালেঞ্জ নয়। লক্ষ্য আয়ত্তে আনার জন্য যে সব সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তা যেন নিতে পারি অন্যের উপর নির্ভর না করেই।