এক নয়। বেশ কিছু কারণ দায়ী শেয়ার বাজারের সাম্প্রতিক পতনে। তবে এই ঘটনা সাময়িক বলেই মনে হয়। এর প্রভাবও অদূর ভবিষ্যতে খর্ব হতে পারে। তবে এই অবস্থায় লগ্নিকারী হিসাবে কী কী পদক্ষেপ নিলে পস্তাবেন না মোটেই, তার দিকনির্দেশ করে দিলেন লগ্নি বিশেষজ্ঞ সোমকান্তি সরকার
কি, সকলে চমকে গিয়েছেন তো? ভাবছেন কী হয়ে গেল? সব তো ঠিকই চলছিল। কী করব এবার?
এই রকমই হয়। তাই এটা ইক্যুইটি মার্কেট বা শেয়ার বাজার। যেটা হল, সেটা হচ্ছে নিফটি তার সব সময়ের উচ্চতা থেকে আজ হঠাৎ করে অনেকটা নিচে। মানে ২৬,২৭০ পয়েন্ট থেকে ২৩,৯০৭ পয়েন্ট যা কি না ১০ শতাংশ ডাউন। কী কারণে হল এটা? তবে কি ভারতীয় অর্থব্যবস্থা খারাপ হয়ে গেল? না, একেবারেই না। ইন্ডিয়া স্টোরি সেই একই রকম আছে। যেটা হয়েছে, তার জন্য কিছু সমসাময়িক ব্যাপার দায়ী। যেমন–
১) অক্টোবর বা তার কিছু দিন আগে এফআইআই বা ফরেন ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টররা ভারত ছেড়ে বেরিয়ে গিয়ে প্রথমে চিন ও পরবর্তীকালে ইউরোপ এবং আমেরিকায় ইনডেক্সে কর দিল। কারণ তাঁদের সেখান থেকে বেশি রিটার্ন পাওয়া যাবে বলে মনে হয়েছিল।
২) ভারতীয় কোম্পানিগুলির একাংশের আয় যতটা আমরা আশা করেছিলাম, বাস্তবের আয় তার থেকে অনেকটাই কম অথবা গত কয়েক বছরে যতটা আয় করে আসছিল, এই বছরে তার থেকে কম হয়েছে। এর জন্যও অবশ্য কিছু কারণ আছে।
৩) সম্প্রতি আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ভোটে প্রতিপক্ষ কমলা হ্যারিসকে হারিয়ে জিতেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন ইতিহাসে প্রথমবার কেউ প্রেসিডেন্ট ভোটে দাঁড়িয়ে প্রথম বার জিতে, পরের বার হেরে, তার পরের বার পুনরায় নব-নির্বাচিত হলেন। যাই হোক, ট্রাম্পের পূর্ববর্তী জমানায় আমরা একটা নতুন কথা জেনেছিলাম।
‘ট্যারিফ ওয়ার’। মানে শুল্ক যুদ্ধ। অর্থাৎ আমদানি এবং রপ্তানি ক্ষেত্রে দেশগুলির মধ্যে শুল্ক নিয়ে দর কষাকষি। ট্রাম্প পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন ঠিকই তবে তাঁর প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসতে এখনও মাস কয়েক দেরি। তাই সারা দুনিয়া তাকিয়ে আছে ট্রাম্পের দিকে যে, তিনি ঠিক কী করতে চলেছেন আগামিদিনে। এই নিয়ে অঙ্ক কষাকষি শুরু হয়ে গিয়েছে। মূলত এইগুলোই প্রধান। এই অবস্থায় ঠিক কী করা উচিত? এক্সিসটিং ইনভেস্টমেন্ট–কোনও কিছু করার দরকার নেই, যেমন আছে তেমনই চলুক। আর হয়তো কয়েকটা মাস এই রকম ‘ভোলাটিলিটি’ থাকবে, তারপর ‘এক্সপেক্টেড’ সব কিছু ঠিক হয়ে পুরোনো জায়গায় ফিরে আসবে। অর্থাৎ ইনভেস্টমেন্ট টেনিওরটা একটু বেড়ে গেল, নতুন ইনভেস্টমেন্ট–আমরা সকলেই জানি ডাইভারসিফিকেশনের কী গুরুত্ব ইনভেস্টমেন্টের ক্ষেত্রে, তাই এই মুহূর্তে আমাদের পোর্টফোলিও একটু ডাইভারসিফাই করা উচিত। আমি ধরেই নিচ্ছি যে আমাদের বেশিরভাগেরই ইক্যুইটি বা ইক্যুইটি এমএফ ইনভেস্টমেন্ট পোর্টফোলিওর বৃহৎ অংশ জুড়ে আছে। তাই এখন যদি ইনভেস্ট করতে হয়, তাহলে আমাদের কাছে সব থেকে গ্রহণযোগ্য ইনস্ট্রুমেন্ট হচ্ছে এফএমপি–ফিক্সড ম্যাচুরিটি প্ল্যান।
‘ফিক্সড’ শব্দটা থেকেই বুঝতে পারছি যে এইখানে একটা ফিক্সড টেনিওর বা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ইনভেস্টমেন্ট করে রাখতে হবে। যেখানে ইনভেস্টমেন্ট হয়, মূলত ডেট ইনস্ট্রুমেন্ট-এ যা কিনা, একটা নির্দিষ্ট সময়ের পরে ম্যাচিওর করে রিটার্ন দেয়। এটা কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর হতে পারে। যেমন–
ক) গর্ভমেন্ট / কর্পোরেট বন্ডস
খ) নন কনভার্টিবল ডেবেঞ্চার
গ) কমার্শিয়াল পেপারস
ঘ) ট্রেজারি বিলস
ঙ) আদার মানি মার্কেট ইনস্ট্রুমেন্টস সাচ অ্যাস ব্যাঙ্ক ফিক্সড ডিপোজিটস প্রভৃতি