shono
Advertisement

লাইভ কিশোর কুমারের গান শুনতে চান? ঢুঁ মারুন বেনিয়াটোলা লেনে

এখনও নানা জায়গায় ফাঁক পেলেই অনুষ্ঠান করে আসেন কিশোরকণ্ঠী। The post লাইভ কিশোর কুমারের গান শুনতে চান? ঢুঁ মারুন বেনিয়াটোলা লেনে appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 03:43 PM Oct 09, 2018Updated: 03:43 PM Oct 09, 2018

শহরের অলিগলিতে ছড়িয়ে ঐতিহাসিক সব চায়ের দোকান। সিসিডি-বারিস্তার বাজারেও যা জলজ্যান্ত বেঁচে। এমনই কিছু চায়ের আড্ডার সন্ধানে সম্বিত বসু

Advertisement

মহালয়ার ভোরবেলা। বেশিরভাগ বাড়িতে এ দিনই শুধু রেডিওর রোলকল হয়। তাও ওই সকালবেলাটুকু। যে যাই বলুক, দুর্গাঠাকুর প্রতিবারই আসেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রর গলা থেকে। তার পর চলে পুজোসংখ্যাগুলো নেড়েচেড়ে দেখা। একটু ভাল চা খাওয়া। ব্রেকফাস্টে হয়তো লুচি! একবার যদি বেরিয়ে পড়া যায় রাস্তায়। প্যান্ডেলের ভিতরে তখন খবরের কাগজে মুখ ঢেকে আছে পরিবার-সহ ঠাকুরসকল। উত্তর কলকাতার এমন এক গলিতে এই রকমই এক প্যান্ডেলের পিছন থেকে ভেসে আসছে কিশোর কুমারের গান। লাইভ! ২০১৮ সালে কিশোর কুমার লাইভ! কেবলমাত্র এটুকু পড়েই কেউ গাঁজাখুরি গপ্পো দিচ্ছি ভেবে বসবেন না যেন! উত্তর কলকাতার বেনিয়াটোলা লেনের এই গলি ধরে যত এগোবেন, গলা ততই স্পষ্ট হতে থাকবে!

গলাটা আসছে একটা চায়ের দোকান থেকে। না, কোনও ধেড়ে মিউজিক সিস্টেম থেকে নয়, গার্ডার মারা ভাঙাচোরা কোনও রেডিও থেকেও নয়। একেবারে টাটকা নিখুঁত গলার স্বর। তবু কোথাও সুরচ্যুতি হচ্ছে না। পাড়াটাও যেন গানের মধ্যে ডুবে আছে। কিশোর কুমারের গানের সময় থেকেই তার যেন কোনও বদল হয়নি। শান্ত, নিশ্চুপ গলির এই মোড়টি। যেন বাকি পাড়াদের থেকে আলাদা। শিল্পীর সাধনার মতো একা।

ভাওয়াল রাজার আদালতে একান্তে ধরা দিলেন যিশু সেনগুপ্ত ]

তবু তিন সত্যি করে বলছি, এ গান কিশোর কুমার গাইছেন না। গাইছেন তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত পল্টন নাগ। অবিকল কিশোর কুমারেরই গলা যেন! সেই পাগলামো, অভিমান, হাসি- এ সব কিশোর-গান গাইতে গাইতে ঢুকে গিয়েছে পল্টনদার ভিতরেও। গান গাইতে গাইতেই তাঁর চায়ে চিনি মিশিয়ে দেওয়া, ঘুগনিতে পিঁয়াজ ছড়িয়ে অমর করে দেওয়া, আলুর দমের সঙ্গে দুটো পাঁউরুটি দেবে কি না- জিগ্যেস করে নেওয়া!

মিউজিক ট্র‌্যাক চালু থাকে দোকানে। ট্র‌্যাকে লিরিকের অংশ এলে- পল্টনদা গেয়ে ওঠেন। শুধু মিউজিকের অংশটুকুতে খদ্দেরদের সঙ্গে অল্পস্বল্প কথা বলা। কার কী লাগবে জেনে নেওয়া, অনেকটাই ইশারায়। তার পর চলে একের পর এক অসামান্য সব গান।

পল্টন বাপি টি হাউস। ২২/এ বেনিয়াটোলা লেন। যে সাইনবোর্ডটি দোকানের মাথায় লাগানো-লেখার সামনে ও পিছনে রয়েছে কিশোর কুমারের ছবি। পল্টনদা কেবলমাত্র এতেই ক্ষান্ত নন। তাঁর দোকানেই প্রমাণ সাইজের দু-দু’খানা কিশোর কুমারের ছবি রয়েছে। তা ছাড়া প্রতি বছর কিশোর কুমারের জন্মদিনে এই দোকানটি সেজেগুজে ওঠে। আরও আনন্দ করে গান-বাজনা হয়।

এই দোকানেই রয়েছে পুরনো রেকর্ড দিয়ে পল্টনদার নিজের হাতে বানানো ঘড়ি। গানের রেকর্ড দিয়ে ঘড়ি বানানো কি গান দিয়ে সময়কে ধরে রাখাও নয়? পল্টনদার দোকানে নিদেনপক্ষে একবার ‘ডবল হাফ’ চায়ে চুমুক দিতে দিতে তাঁর গান শুনলে এ কথাই মনে হয়।

“কিশোর কুমারের গান প্রথমবার শুনি ১৯৭০ সালে। কিশোরদাকে ভালবাসি, কিশোরদার গান দু’তিনটে আমাকে মোহিত করে দিয়েছিল। যেমন ‘ইয়ে দিল না হোতা বেচারা’। এ ছাড়া ‘গীত গাতা হু ম্যাঁয়’- এ সব গান। এই গানটা দোকানে আমি প্রায়শই গেয়ে থাকি।”

পল্টনদা, কিশোর কুমারের জন্য মারও খেয়েছিলেন এককালে। তাঁর বাবার কাছে। “বাবা আসলে আগেকার দিনের লোক। তাঁর আরও পুরনো শিল্পীদের পছন্দ। এ দিকে আমি কিশোরদার অন্ধ ভক্ত। তাঁর গান গাওয়া আমাকে গানের দিকে টেনে নিয়ে যায়। গানকে যেহেতু ভালবেসে ফেলেছি, অনুষ্ঠানও দেখতাম নানা রকম। একদিন রাত জেগে অনুষ্ঠান দেখলাম। তখন গায়ক ছিল মাস্টার আনন্দ, গৌতম ঘোষ-এঁরা। সারা রাত বাড়ির বাইরে। ফলে বাবার মার জুটল কপালে। তবু এমনই ভালবাসা, বাবার মারেও ছুটে যায়নি।”

পল্টনদার গুনগুন করা গেল না। বরং কিশোরের গানগুলো আরও আঁকড়ে ধরল তাঁকে। তালিম নেই, হারমোনিয়াম জানেন না- কিন্তু এ সব বাধা হয়ে দাঁড়াল না মোটেই। কিশোর কুমারের গানের সঙ্গে গান মিলিয়ে গাইতে গাইতে, কিশোরের গলাকে তাঁর গলায় এনে ফেলার চেষ্টা। ‘স্পেশাল’ চা ছাড়াও পল্টনদার স্পেশাল ব্যাপার হল বারচারেক শুনলেই তাঁর গান মনে থাকে। ফলে এই গান শুনতে শুনতে, গাইতে গাইতেই একটা থেকে দুটো, দুটো থেকে দশটা- অবিশ্বাস্য লাগলেও এখন প্রায় ২০০০ গান গাইতে পারেন পল্টনদা। খাতা, ডায়েরি কিছু না নিয়েই কম করে ৩০০-র বেশি স্টেজ শো করে ফেলেছেন পল্টনদা।

পুজোয় নিশ্চিন্তে ঘুরতে চান? এই অ্যাপগুলো ফোনে ইনস্টল করুন ]

কিশোরকণ্ঠী না পল্টনদা? উত্তরে জানালেন, “আমি গানগুলো কিশোরদার গাই। ভয়েসটা পল্টনদার। আমি আমার মতো করে গাই। লোকে অবশ্য বলে, কিশোরদার মতো করে গান গাওয়ার চেষ্টা করি। অনেকে কিন্তু কিশোরদার গান গেয়েই উঠেছে। তারা একটা জায়গা যখন করে নিয়েছে, নিজস্ব স্টাইল ব্যবহার করেছে। সেই জায়গা আমি পাইনি। আমি নিজস্ব গানের সুযোগ পাইনি। তখন ‘কপিসিঙ্গার’ হতাম না। আমার একটা ফ্যামিলি রয়েছে। ৬-৭ জন আমার উপর নির্ভর করে আছে। আমি তাদেরকে ফেলে নিজের কেরিয়ার করতে চলে যাইনি। কর্তব্য করেছি পরিবারের জন্য।”

শিল্পী হওয়ার জন্য যে বিশ্বমানের উদাসীনতা দরকার, তা পল্টনদা কোনও দিন দেখাননি। যে স্বার্থপরতা দরকার একজন প্রকৃত শিল্পীর, তা কোনও দিন প্রকাশ করেননি। কিন্তু চায়ের দোকান তাঁর কাছে উপাসনাগৃহ ছাড়া কিছু নয়।

সকাল ৬টায় দোকান খোলেন কিশোর কুমার জুনিয়র, বন্ধ করেন রাত্রি ৯টায়। দুপুরেও দোকান বন্ধ থাকে না। কেবলমাত্র রবিবার দোকান বন্ধ। রোজ প্রায় ২-৩ ঘণ্টা গান গেয়ে চলেন পল্টন কুমার।

দিল্লির ন্যাশনাল চ্যানেল ‘ঢুন্ডতে আয়না’ নামে একটি অনুষ্ঠান করত। তারাই প্রথমবার খোঁজ করতে করতে এসেছিল এই বেনিয়াটোলা লেনে। এখন নানা জায়গায় ফাঁক পেলেই অনুষ্ঠান করে আসেন পল্টনদা। স্বচক্ষে কিশোর কুমারের দেখা পেয়েছিলেন তাঁর ভক্ত পল্টন কুমার। ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ‘কিশোর কুমার নাইট’-এ, আর একবার ‘হোপ ’৮৬ কনসার্ট’-এ।

কিন্তু যখনই গাইতে থাকেন কিশোর কুমারের গান, তখনই কি ভক্তের সঙ্গে ভগবানের দেখা হয়ে যায় না?

পুনশ্চ: কেবলমাত্র চায়ের দোকান হিসাবে এই দোকানটিকে বিচার করলে ভুল বোঝা হবে। কলকাতায় কোনও ‘কিশোর কুমার মন্দির’ যদি থাকে, তা হলে এটাই।

পুজোয় সুন্দরী হতে এভাবেই সারুন লাস্ট মিনিটের রূপচর্চা ]

The post লাইভ কিশোর কুমারের গান শুনতে চান? ঢুঁ মারুন বেনিয়াটোলা লেনে appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement