সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: দেবীর আর্শীবাদে দাহের আগের মুহূর্তে প্রাণ ফিরে পেয়েছিলেন জমিদার। সেই থেকেই ডায়মন্ড হারবারের কাছেই বারদ্রোণ গ্রামে ভট্টাচার্য বাড়িতে শুরু দুর্গা পুজো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আয়োজনে কাটছাঁট হয়েছে। তবে আজও পুরনো নিয়ম রীতি মেনে চলছে পুজো (Durga Puja 2022)।
ডাক্তার মৃত্যু নিশ্চিত করতেই জমিদার লক্ষ্মীকান্ত ভট্টাচার্যকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল শ্মশানে। দাহ করতে দেহ চিতায় শোওয়ানোর পরই ঘটে আশ্চর্য ঘটনা। নড়ে ওঠে দেহ। চোখ খোলেন শায়িত জমিদার লক্ষ্মীকান্ত ভট্টাচার্য। অলৌকিক কাহিনী ছড়িয়ে পড়ে দিকে। বাড়ি ফিরে দীর্ঘ চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। তারপরই ধুমধাম করে দুর্গাপুজোর আয়োজন করেন স্বয়ং জমিদার। সালটা ১৭২৯ খৃষ্টাব্দ। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ডায়মন্ড হারবারের কাছেই বারদ্রোণ গ্রামে ভট্টাচার্য বাড়িতে শুরু হয় দুর্গা পুজো। পুজোর বয়স প্রায় ৩০০ বছর। সাতপুরুষ ধরে তৎকালীন প্রাচীন রীতি মেনেই জমিদার বাড়িতে পূজিত হচ্ছেন উমা।
[আরও পড়ুন: স্বপ্নাদেশেই বদলে যায় দেবীর রূপ, বনগাঁর দত্তবাড়িতে মা বিরাজ করেন ‘বিড়াল হাতি’ রূপে]
একসময় খুব জাঁকজমক করেই পুজো হত জমিদার বাড়িতে। পরিবারের প্রবীণ সদস্য সত্যগোপাল ভট্টাচার্য বলেন, সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী তিনদিনই সেই শুরুর সময় থেকে পাঁঠাবলি দেওয়ার প্রথা ছিল। আজও সেই ধারা অব্যাহত। পাঁঠাবলি ছাড়াও বলি দেওয়া হয় আখ ও লাউ। একসময় অষ্টমীতে শূন্যে ছোঁড়া হত বন্দুকের গুলি। পুজোর চারদিন বিলি হত মুড়কি ও নাড়ু। নবমীতে সারাগ্রামের মানুষ জমিদার বাড়িতে নিমন্ত্রিত থাকতেন। তাঁদের প্রত্যেকের জন্য করা হত ভাত ও মাংসের আয়োজন।
পরিবারের আর এক সদস্য নিমাই ভট্টাচার্য জানান, কালের নিয়মে সেসব আয়োজন বন্ধ হয়েছে অনেক আগেই। তবে দেবী দুর্গার আরাধনায় খামতি নেই কোথাও। পুরোন সমস্ত প্রথা মেনেই এবারও ভট্টাচার্য পরিবারের একাদশতম বংশধররা আয়োজন করেছে মাতৃ আরাধনার। ভট্টাচার্য পরিবারের সদস্যদের অনেকেই কর্মসূত্রে গ্রামের বাইরে থাকেন। কিন্তু পুজো উপলক্ষে গ্রামে ফেরেন সকলেই। পুজোর চারদিন একসঙ্গে সকলেই মেতে ওঠেন শুধুই হাসি, শুধুই আনন্দ আর গানে। দশমীতে বেশ আকর্ষণীয় মহিলাদের সিঁদুরখেলা। প্রতিমা বিসর্জন পর্ব শেষ হলে চলে বিজয়ার প্রণাম, কোলাকুলি আর মিষ্টিমুখের পালা। পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও গ্রামের বহু মানুষও জমিদারবাড়ির পুজোর নানা অনুষ্ঠানের সঙ্গে সেই অনুষ্ঠানেও অংশ নেন। পারিবারিক পুজো যেন হয়ে ওঠে সর্বজনীন।