shono
Advertisement

Breaking News

কোভিড পরবর্তী নানা উপসর্গে ভুগছেন? সুস্থ থাকতে জেনে নিন বিশেষজ্ঞর পরামর্শ

স্বাস্থ্য দপ্তর বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে পোস্ট কোভিড ক্লিনিক খুলেছে।
Posted: 04:40 PM Dec 29, 2021Updated: 02:00 PM Dec 30, 2021

কোভিড (Covid 19) থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। কিন্তু তারপর? আবার বিভিন্ন রোগ! হাসপাতালে কোভিড জয়ীদের ভিড় বাড়ছে বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে। সব পর্যবেক্ষণ করে সতর্ক রাখতে কলম ধরেছেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. অজয় চক্রবর্তী

Advertisement

বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা। কিন্তু কোভিড?

করোনা থেকে মুক্ত হওয়ার পরেও বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। ডাক্তারি পরিভাষায় আমরা এই উপসর্গগুলিকে পোস্ট কোভিড সিম্পটম বা লং কোভিড বলছি। স্বাস্থ্য দপ্তর বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে পোস্ট কোভিড ক্লিনিক খুলেছে। মনে রাখতে হবে কোভিডকে কিন্তু আমরা এখনও সম্পূর্ণ চিনে উঠতে পারিনি এবং এই সব হাসপাতালের পোস্ট কোভিড ক্লিনিকে যে সব সমস্যা নিয়ে মানুষ আসছেন তা কিছু ক্ষেত্রে উদ্বেগজনক। করোনামুক্ত মানেই যে সম্পূর্ণ সুস্থ তা নাও হতে পারে। এ কথা ঠিক যে কোভিড পরবর্তী উপসর্গ অধিকাংশ ক্ষেত্রে দু-চার মাসেই উপশম হচ্ছে তবে কোনও কোনও ক্ষেত্রে, বিশেষত যাঁদের সিরিয়াস কোভিড হয়েছিল, অথবা অত্যধিক কোমর্বিডিটি রয়েছে তাঁদের উপসর্গ দূর হতে সময় লাগছে। যাঁদের ক্ষেত্রে কোভিডে শারীরিক অঙ্গ আক্রান্ত হচ্ছে, দেখা যাচ্ছে যে তাঁদের অনেকের পোস্ট কোভিড সময়ে ডায়াবেটিস, হাই প্রেশার, হৃদরোগ বা লিভারের সমস্যার মতো রোগের শিকার হয়ে পড়ছেন। আমরা একথা জানি যে মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা মিলিয়েই সুস্বাস্থ্য। কোভিড কিন্তু মনের উপরেও ছাপ ফেলতে পারে। কারও কারও কোভিডের পরে মানসিক উদ্বেগ থেকে অনিদ্রা অথবা নার্ভের সমস্যা দেখা যায়। ভরসার বিষয় এটাই যে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এই সব কমপ্লিকেশনগুলির নিরাময় সম্ভব।

[আরও পড়ুন: না ফুটিয়ে গরুর দুধ খাচ্ছেন, নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনছেন না তো? ]

এবার আসা যাক রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে। পোস্ট কোভিড সিম্পটম সবসময় আটকানো না গেলেও রোগটিকে প্রতিরোধ করা কিন্তু সম্ভব। এ কথা এখন সকলেই জানি যে যাঁদের বয়স বেশি, কোমর্বিডিটি রয়েছে বা আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন, তাঁদের অতিরিক্ত সাবধানতা নিতেই হবে। বাড়ির সদস্যদেরও সতর্ক থাকতে হবে যাতে কোমর্বিডিটির চিকিৎসা করা হয়। এছাড়া জ্বর, গলাব্যথা বা কাশি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার এবং পরীক্ষা করে রোগটাকে প্রথম অবস্থায় ধরে ফেলা উচিত। শুরুতেই বাড়াবাড়ি হয়ে গেলে কোভিড পরবর্তী সমস্যা বাড়ে। তাই সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করলে পোস্ট কোভিড উপসর্গ নাও হতে পারে।
একই সঙ্গে মনে রাখবেন জ্বর কিন্তু শুধু কোভিড নয়, ডেঙ্গু, ফ্লু বা ম্যালেরিয়ার লক্ষণও হতে পারে।

করোনামুক্তির পর অন্তত একবছর পোস্ট কোভিড ক্লিনিকে ডাক্তারবাবুর পরামর্শ মেনে চিকিৎসা করতে হবে। ভরসা রাখুন সমস্যা যেমন অাছে, তেমনই তার সমাধানও আছে। এটা এমন একটা ভাইরাস যে নিজে চলে গেলেও বেশ কিছু রোগকে ডেকে নিয়ে আসতে পারে। তাই করোনামুক্তি মানেই রোগমুক্তি নাও হতে পারে। কোভিডের পরে নিয়ম করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। রুটিন রক্তপরীক্ষা, এক্সরে, ইসিজি, ইকো কার্ডিওগ্রাফির মতো কিছু পরীক্ষাও করতে হবে। বলা হচ্ছে কোভিডের পর অন্তত একবছর সতর্ক থাকতে হবে। প্রথম ছ’মাস ফিমাসে রাজ্যের পোস্ট কোভিড ক্লিনিক বা হাসপাতালে গিয়ে চেকআপ করতে হবে। এরপর তিন মাস অন্তর ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিতে হবে। সঙ্গে বেশ কয়েকটি রক্তের পরীক্ষা এবং এক্সরে বা ইসিজির মতো পরীক্ষা করতে হবে।

প্রতীকী চিত্র।

করোনামুক্ত হওয়ার পর বিভিন্ন বয়সিদের মধ্যে যে সব সমস্যা প্রায়ই দেখা যায়, তার মধ্যে রয়েছে মাংসপেশি বা জয়েন্ট পেন, দুর্বলতা, অবসাদ, স্মৃতিশক্তি কমতে থাকা। অনেক সময় মৃত্যুভয়ও রোগীকে কাবু করে ফেলে। আবার কোভিডের সময়ে হৃদরোগ বা সেরিব্রাল স্ট্রোকের মতো সমস্যাও দেখা যেতে পারে । একটা বড় অংশের মানুষের মধ্যে ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন ও কিডনির সমস্যা দেখা যাচ্ছে। এমনকী, নির্দিষ্ট সময়ান্তরে ডায়ালাসিসও করতে হতে পারে। শুরুতে যা বলেছি এখনও তাই বলব, করোনামুক্ত হওয়ার পর সামান্যতম সমস্যা থাকলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে ও প্রয়োজনে বিভিন্ন পরীক্ষা করতে হবে।

ডা. কৌশিক চৌধুরি (পোস্ট কোভিড ইনচার্জ বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল) করোনামুক্তির পর মূলত তিনধরনের রোগী দেখা যায়। বাড়ি বা হোম আইসোলেশেনে থেকে সুস্থ হয়ে যাওয়া রোগী বা মাইল্ড সিম্পটম। হাসপাতালে থেকে সুস্থ বা মডারেট রোগী। সিভিয়ার বা হাসপাতালে অক্সিজেন সাপোর্টে বা ভেন্টিলশনে থেকে সুস্থ হওয়া রোগী।

মাইল্ড বা বাড়িতে থাকা রোগীদের উপসর্গ: এই ধরনের কোভিড মুক্তদের প্রায় ৫০ ভাগের মধ্যে অনিদ্রা, অহেতুক চিন্তা, ক্লান্তভাব, বুক ধড়ফড়, উদ্বেগ এমনকী মৃত্যুভয় দেখা যায়। এর সঙ্গে দেখা যায় মাংশপেশী ও অস্থিসন্ধিতে ব্যথা। আবার এঁদের মধ্যে ৩০ ভাগের দেখা যায় পেটের সমস্যা। হঠাৎ পেট খারাপ। এই রোগীদের অক্সিজেন নিতে না হলেও পরে কাশির সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই ধরনের সমস্যা হলে রুটিন রক্ত পরীক্ষা সঙ্গে ডিডাইমার এবং এক্সরে করা হয়। এইসব রিপোর্টে গন্ডগোল পাওয়া গেলে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা হয়। দেখা যাচ্ছে সেই সময়ে যাঁদের কাশির সমস্যা ছিল পরেও একই উপসর্গ হতে পারে।

মডারেট কোভিড : মডারেট কোভিডের ২০-৩০ ভাগের হার্টের সমস্যা দেখা যাচ্ছে। সেই অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে। আর বাকি ৫০-৬০ শতাংশ শ্বাসকষ্ট দেখা যায়। অনেকের কাশির সমস্যা শুরু হয় কোভিড মুক্ত হওয়ার পরে। আবার একটু পরিশ্রম করলে বা হাঁটলে শ্বাসকষ্ট দেখা যায়। ইকো করে দেখা হচ্ছে হার্ট ঠিক আছে কি না। এছাড়াও ফুসফুসে রক্ত জমাট বাঁধার মতো সমস্যায় মৃত্যু হতে পারে। তাই দ্রুত এই সমস্যা জানতে ডিডাইমার ও রক্তের রুটিন পরীক্ষা করা হয়। সমস্যা থাকলে অ্যান্টি কোয়াগুলেন্ট বা রক্ত পাতলার ওষুধ দিতে হবে। যদি শ্বাসকষ্ট তীব্র হয়।

সাবধানতা : রোগীকে বাড়িতে পালস অক্সিমিটারে অক্সিজেন স্যাচুরেশন যদি ৯৪ এর নিচে থাকে তবে হাসপাতালেও ভর্তি হতে পারে। এই ধরনের সমস্যা ৩-৬ মাস থাকতে পারে। পাশাপাশি বেলুন ফোলানো এবং স্টেরয়েড দিয়ে রোগী সুস্থ করা হয়। দফায় দফায় এই ধরনের রক্তপরীক্ষা এবং ইকো কার্ডিওগ্রাফি করে হার্টের অবস্থা দেখতে হবে।

ফাইল ছবি

সিভিয়ার কোভিড : যে ক’জন রোগীর সুস্থ হয়ে বাড়ি গিয়ে মৃত্যু হয়েছে। অথবা সুস্থ হওয়ার পর ফের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তাঁদেরই মূলত সিভিয়ার কোভিড বলা হয়। মোট ১০ শতাংশ রোগী যাঁদের অক্সিজেন নিতে হয়েছে বা দীর্ঘসময় ভেন্টিলেশনে ছিলেন বা হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা দিয়ে অক্সিজেন দিতে হয়েছে তাঁদের এই সমস্যা হতে পারে। করোনামুক্ত হওয়ার পর প্রায় ৩-৬ মাস পর্যন্ত চিকিৎসকের নিয়মিত পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে। আবার যাঁদের ডায়াবেটিস, ক্যানসার বা অন্যধরনের কোমর্বিডিটি রয়েছে তাঁদের খুব সাবধানে থাকতে হবে। সেরিব্রাল স্ট্রোক তুলনায় কিছুটা কম। তবে পালমোনারি থ্রম্বোসিস বা হৃদরোগ বেশি দেখা যায়।

অনুলিখন : ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য

[আরও পড়ুন: ওমিক্রন আটকাতে কোন মাস্ক সবচেয়ে বেশি কার্যকরী? জেনে নিন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ]

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement