নব্যেন্দু হাজরা: সিঙ্গুর দিবসের মঞ্চে তিনি থাকছেন না৷ আইনি জটিলতায় সেই উপায়ও নেই৷ কিন্তু মন পড়ে রয়েছে সেই সিঙ্গুরেই৷ শরীর ভেঙেছে চাপে৷ মানসিকভাবে কিছুটা বিপর্যস্তও৷ তবু মনের কোণায় সেদিনের সিঙ্গুর৷
সিঙ্গুরের থেকে অনেকটাই দূরে এলগিন রোডের হোটেলের ৫০২ নম্বর রুমের জানলার কাচে মোটা পর্দায় আটকে গিয়েছে দিনের আলো৷ হালকা আলোয় টিভি-সেটের দিকে ঠায় তাকিয়ে প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্র৷ চোখ টিভির পর্দায়৷ মন বোধহয় সিঙ্গুরের প্রান্তে৷ অস্ফুটে বলে উঠলেন, “ওখানে যেতে না পারার কষ্টটা বোঝানো যাবে না…৷”
বোঝা যাচ্ছিল তাঁর কথাবার্তায়৷ মন খারাপ নিয়ে বলে চললেন একটানা, “তখন আমি অ্যাকটিভলি ছিলাম৷ এখন হয়তো সেভাবে থাকতে পারলাম না৷ কিন্তু মন তো পড়ে থাকবে সিঙ্গুরেই৷”
সকালে একবার কিছুক্ষণের জন্য বের হয়েছিলেন হোটেলের রুম থেকে৷ তা-ও স্রেফ পুজো দিতে৷ সামনের মন্দিরে৷ পরনে লাল পাঞ্জাবি৷ হাঁটাচলা কিছুটা শ্লথ৷ সেই চেনা মেজাজটাও তেমন নেই৷ তবু পুজো দেন মদন৷ মন্ত্রোচ্চারণ করেন৷ পরে বেরিয়ে জানান, “আগে ছিলাম গারদে বন্দি, এখন আমি রুমবন্দি৷ বাড়ি ফেরার আবেদন তো করবই৷ ফেরার জন্য মন ছটফট করছে৷ এখন আমি প্রভাবশালী নই৷ আমি এখন অভাবশালী৷”
আইনি জট বাধা না হলে বোধহয় ফের বেরিয়েই পড়তেন তিনি৷ কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তা সম্ভব নয়৷
তবে সিঙ্গুর উৎসবের মঞ্চে না থাকলেও চোখ থাকবে সেদিকেই৷ “মানসিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত আমি৷ একগুচ্ছ ওষুধ খেতে হচ্ছে৷ তবু কাল সকাল থেকেই দেখব সিঙ্গুরের উৎসব৷ হোটেলের ঘরে শুয়েই৷” বললেন মদন মিত্র৷
অন্যদিকে সারদা কাণ্ডে আলিপুর জেলা ও দায়রা আদালতে মদন মিত্রর জামিনের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে এদিনই হাই কোর্টে আবেদন জানাল সিবিআই৷ মঙ্গলবার বিচারপতি নিশীথা মাত্রের ডিভিশন বেঞ্চে মদন মিত্রর জামিন খারিজের আবেদন জানিয়েছে তারা৷ এই আবেদনের কপি সরাসরি মদন মিত্রর হাতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এদিন তদন্তকারী অফিসার-সহ সিবিআই-এর তিন আধিকারিক বিকেলে ভবানীপুরের হোটেলে যান৷ সেখানে সিবিআইয়ের এই আবেদনের কপি নিতে অস্বীকার করেন মদন মিত্রের আইনজীবীরা৷ তাঁদের বক্তব্য, আদালতের নির্দেশ ছাড়া তাঁরা এই কপি নিতে পারবেন না৷ এদিন সিবিআইয়ের আধিকারিকরা হোটেলে পৌঁছতেই মদনের অনুগামীরা জানিয়ে দেন, মদন মিত্র অসুস্থ৷ তাঁর সঙ্গে দেখা করা যাবে না৷ মদনের ঘরে থাকা চিকিৎসকও জানিয়ে দেন তিনি অসুস্থ৷
মদন মিত্রর জামিনের বিরোধিতার প্রধাণ কারণ হিসাবে প্রভাবশালী তত্ত্বকে ফের সামনে এনেছে সিবিআই৷ সিবিআইয়ের যুক্তি, রাতারাতি মদন মিত্রর প্রভাবশালী তকমা চলে যেতে পারে না৷ এছাড়াও সিবিআই আবেদনে বলেছে, মদন মিত্র জামিনে মুক্ত থাকলে তদন্ত প্রভাবিত করতে পারেন৷ সাক্ষীদেরও প্রভাবিত করতে পারেন তিনি৷ তাই মদন মিত্রর জামিনের আবেদন খারিজ করা হোক৷
The post শহরে বসেই সিঙ্গুরে চোখ মদনের appeared first on Sangbad Pratidin.