সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চিনে (China) প্রবল নির্যাতিত সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমরা। প্রতিবাদে দীর্ঘদিন ধরেই সরব আন্তর্জাতিক মহল। যদিও এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে চিন। কিন্তু বারবারই বেজিংয়ের নানা আপত্তি উড়িয়ে প্রকাশ্যে এসেছে উইঘুরদের দুরবস্থার ছবি। এবার ফের সংখ্যালঘুদের নির্যাতন সংক্রান্ত চিনের কিছু গোপন নথি ফাঁস হয়েছে। সেই নথি থেকে জানা গিয়েছে, কীভাবে হাজার হাজার উইঘুরদের বন্দি করে রেখেছে চিন।
[আরও পড়ুন: চিনা বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক তালিবানের, উইঘুর বিচ্ছিন্নতাবাদ নিয়ে উদ্বিগ্ন বেজিং]
ওয়াশিংটন স্থিত ‘ভিক্টিম্স অফ কমিউনিজম মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন’এর চিন বিশেষজ্ঞ এড্রিয়ান জেনজ জানিয়েছেন, সম্প্রতি চিনের উইঘুর নির্যাতন সংক্রান্ত ১৩৭ পাতার নথি ফাঁস হয়েছে। ওয়ার্ড বা এক্সেলে তৈরি ওই নথিতে রয়েছে বেশ কিছু বিস্ফোরক তথ্য। সেখানে বিস্তারিত ভাবে বলা হয়েছে, কীভাবে শিনজিয়াং প্রদেশের উইঘুরদের বন্দিশিবিরে রাখা হয়েছে। তাঁদের জীবনযাপন, ধর্মাচরণ-সহ সমস্ত গতিবিধির উপর কীভাবে কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে সেই কথাও রয়েছে ওই নথিতে। সূত্রের খবর, নজরদারি ও বন্দিশিবিরের খবর হিমশৈলের চূড়ামাত্র। ওই ডিটেনশন ক্যাম্পগুলিতে বন্দিদের উপর নাৎসি কায়দায় নিপীড়ন ও গবেষণা চলছে।
বলে রাখা ভাল, উইঘুর নিপীড়ন নিয়ে এর আগেও বেশ কয়েকটি নথি ফাঁস হয়েছে। এক প্রতিবেদনে রজসিনা মামাত্তহতি নামের উইঘুর মহিলার কথা তুলে ধরে সিএনএন। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফাঁস হওয়া নথি থেকে শিনজিয়াংয়ের বন্দিশিবিরে নিজের আত্মীয়দের বিষয়ে জানতে পারেন রজসিনা। সেখানে পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে ওই বিবরণ পড়ার পর আতঙ্কে বেশ কয়েকদিন খেতে বা ঘুমোতে পারেননি তিনি। চিনা কমিউনিস্ট শাসকদের বর্বরতার ওই প্রমাণ পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরে।
উল্লেখ্য, যত দিন যাচ্ছে, চিনে (China) ততই কোণঠাসা হচ্ছে সংখ্যালঘু উইঘুর (Uyghur) সম্প্রদায়। শিক্ষা দেওয়ার নামে তাঁদের ‘ডিটেনশন ক্যাম্পে’ নিয়ে গিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অত্যাচার চালাচ্ছে চিনা প্রশাসন৷ এমনকী, ক্যাম্পগুলিকে ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান’ আখ্যা দিয়ে, এদের স্বীকৃতিও দিয়েছে বেজিং৷ তবে এ তো হিমশৈলের চূড়া মাত্র। উঠেছে ভয়ংকর অভিযোগ, জোর করে উইঘুর মুসলিমদের শরীর থেকে লিভার, কিডনির মতো অঙ্গ বের করে নিচ্ছে চিন।
প্রসঙ্গত, চিনের নানা বন্দিশিবিরে প্রায় ২০ লক্ষ উইঘুর মুসলিমকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই ওই বন্দিদের মানবাধিকার ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে শি জিনপিং প্রশাসনের বিরুদ্ধে। মহিলা বন্দিদের ধর্ষণের পাশাপাশি নিষিদ্ধ ওষুধ প্রয়োগের মতো নানা অভিযোগ তুলেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলি। রাষ্ট্রসংঘে চিনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছে আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন-সহ ৪৩টি দেশ। শিনজিয়াং প্রদেশে মুসলিম উইঘুর সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে সরব হয় তারা। শুধু তাই নয়, বেজিংয়ের কাছে সংখ্যালঘুদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আরজি জানায় ওই দেশগুলি।