সৌরভ মাজি, বর্ধমান: একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়াল বর্ধমানের (Bardhaman) লাকুড্ডি এলাকায়। ঘরের মধ্যে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় ৪২ বছরের বিকাশ কুমার সাউ এবং তাঁর স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা সাউয়ের (৩৮) দেহ। পাশেই পড়েছিল দু’জনের ১৩ বছরের মেয়ে সুরভী সাউয়ের নিথর দেহ। মেয়েকে মেরেই আত্মঘাতী হয়েছেন দম্পতি। এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়রা। দু’জনের ছোট একটি ছেলেও রয়েছে। তার কোনও ক্ষতি হয়নি বলেই জানা গিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আনন্দ অধিকারী জানান, বুধবার সকালে এলাকার মাঝে গরু বাঁধতে গিয়েছিলেন তিনি। তখনই মৃত দম্পতির ছেলে কাঁদতে কাঁদতে তাঁর কাছে আসে। হিন্দিতে বলতে থাকে, “মা-বাবা ঝুলছে।” বাচ্চা ছেলেটির কথা শুনে তিনি দৌড়ে ঘরে গিয়ে দেখেন সিলিংয়ের সঙ্গে ফাঁস লাগানো অবস্থায় বিকাশ কুমার সাউ এবং প্রিয়াঙ্কা সাউয়ের দেহ। পাশে অচেতন হয়ে রয়েছে সুরভী। তার গলায় আঙুলের দাগও রয়েছে। আনন্দবাবুই দৌড়ে প্রতিবেশীদের খবর দেন। খবর দেওয়া হয় পুলিশকেও। ঘটনাস্থলে এসে দেহগুলি উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। সেখানে সুরভী সাউকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
[আরও পড়ুন: দিনেদুপুরে গুলিতে মৃত্যু যুবকের, মমতার সভার দিনই উত্তপ্ত কোচবিহার]
স্থানীয়দের থেকে খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে আসেন প্রিয়াঙ্কা সাউয়ের দাদা ঘনশ্যাম সাউ। জানান, উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা বিকাশ কুমার সাউ। অশান্তির জেরে শ্বশুরবাড়িতে থাকতে পারতেন না তাঁর বোন। বারবার চলে আসতেন। প্রথমে বোনকে নিজের কাছেই রেখেছিলেন। জামাইবাবুর রোজগারের বন্দোবস্তও করে দিয়েছিলেন। কিন্তু বিকাশ কোনও কাজ করতে চাইতেন না। লকডাউনের সময় গ্রামের বাড়িতে পরিবার সমেত বোনকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন ঘনশ্যাম। সেখানে ১০ বিঘা জমির দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। নিয়মিত টাকাও পাঠাতেন। কিন্তু নভেম্বর মাসে আচমকা বিকাশ পরিবার নিয়ে চলে আসেন। জানান, তিনি সেই কাজ করতে পারবেন না। এরপর আলাদা একটি বাড়িতে বোনেদের থাকার বন্দোবস্ত করে দেন ঘনশ্যাম। নীলপুরে একটি সবজির দোকানেরও ব্যবস্থা করে দেন। সে দোকানও চালাতে পারছিলেন না বিকাশ। ১০-১৫ দিন আগে ফের ঘনশ্যামকে কিছু বন্দোবস্ত করতে বলেছিলেন। দু’দিন আগে বোনের বাড়িতে এসে জামাইবাবুকে বোঝানোর চেষ্টাও করেছিলেন বলে জানান ঘনশ্যামবাবু। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হল না বলেই জানান তিনি। তাঁর মতে, পারিবারিক অশান্তির জেরে মেয়েকে খুন করেই আত্মঘাতী হয়েছে দম্পত্তি।