ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: ব্যাপারটা কয়েকদিন ধরেই ঘটে চলেছে। সেভাবে সাধারণ মানুষের নজরে আসেনি। কিন্তু মহাকাশে নিয়মের কোনও ফাঁকি নেই। ইহজগতের মানুষকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কঠোর নিয়ম পালনের জন্য যেখানে কার্যত নাকানিচোবানি খেতে হচ্ছে প্রশাসনকে, আকাশে সেখানে সব নিয়ম অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেছে মোট তিন গ্রহ। শনি, মঙ্গলের সঙ্গে বৃহস্পতিও। তফাৎ শুধু এই যে, সেই দূরত্বটা নেহাৎ এক বা দেড় মিটারের নয়। কয়েক লক্ষ কিলোমিটারের!
গত প্রায় মাস খানেক ধরেই খালি চোখে ভোরের আকাশের দিকে তাকালে বৃহস্পতি, শনি ও মঙ্গল এই তিন গ্রহকে মোটামুটি এক সরলরেখায় দেখা যাচ্ছে। মার্চের ২০ তারিখের আগে মঙ্গল ছিল পশ্চিমে। বাকি দু’জনের সামনে। তারপর বৃহস্পতির থেকে দৌড়ে পিছিয়ে পড়তে থাকে সে। গত ২৬ মার্চ সে ছিল বৃহস্পতি আর শনির মাঝামাঝি। সেদিন ভোরে আকাশের প্রেক্ষাপটে এই তিন গ্রহ তৈরি করেছিল একটি কম উচ্চতার অবশীর্ষ সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ। যার ভূমির দু’টি বিন্দুতে ছিল যথাক্রমে বৃহস্পতি ও শনি। আর মঙ্গল ছিল শীর্ষ বিন্দুতে। গ্রহগুলো যদি এই সময় প্রায় ঘাড়ে ঘাড়ে এসে পড়ত, তাহলে তাদের মিলিত উজ্জ্বলতা হত চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার মতো।
[আরও পড়ুন: করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে তৈরি ৪৫ টাকার মাস্ক, নজির দিল্লি আইআইটির পড়ুয়াদের]
১ এপ্রিলের পর দৌড়ে শনির কাছেও হার মেনেছে মঙ্গল। ক্রমশ পিছিয়ে পড়েছে। এখন তাকে দেখা যাবে তিনজনের মধ্যে একেবারে পুব দিকে। যে সরলরেখায় এখন তাদের অবস্থান তার শুরুতে এই মুহূর্তে রয়েছে চাঁদও। দিন যত এগোবে, রাত যত গড়িয়ে সকালের দিকে যাবে তাদের এই অবস্থানও বদলাবে। আগামী অন্তত এক মাস একেবারে ভোরে মহাজাগতিক এই ঘটনা কলকাতার আকাশ থেকেই ঘটতে দেখা যাবে।
পৃথিবীতে যখন মহামারির কোপ, সে সময় মহাকাশে এসব ঘটনার সঙ্গে কি তার কোনও সূত্র থাকতে পারে? “না। কখনওই না। এটা স্রেফ একটা মহাজাগতিক ঘটনা। এর সঙ্গে কোনও গ্রহ বা নক্ষত্রের ওপর তার প্রভাব পড়ার বা কোনও সূত্র থাকার কোনও সম্ভাবনা নেই” – স্পষ্ট করে দিলেন হাওড়া বিজ্ঞান চেতনা সমন্বয়ের প্রধান প্রদীপ দাস। তাঁর কথায়, “জ্যোতির্বিজ্ঞান আর জ্যোতিষচর্চার মধ্যে আকাশপাতাল তফাৎ। কোনও বিতর্কের মধ্যে না গিয়েই বলছি, এক সরলরেখায় এই দূরত্বে গ্রহদের চলন একেবারে নিয়মমাফিক। তার সঙ্গে মহামারির যোগ একান্তই কাকতালীয়।” বৃহস্পতি, শনি, মঙ্গল ও চাঁদের এক সরলরেখার চলন মূলত রাশিচক্রের পথ ধরেই। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, রাত পেরিয়ে ভোরের কাছাকাছি পুব আকাশে চোখ রাখলে এই মহাজাগতিক চমৎকার দৃশ্য দেখা যাবে খালি চোখেই। চাঁদ এখন ক্ষীণ, অমাবস্যার দিকে। মেঘ না থাকলে আকাশ ধোঁয়া ও ধুলো মুক্ত। তাই স্পষ্টই দেখা যাবে এই দৃশ্য।
১৯ তারিখ রাত অর্থাৎ ২০ এপ্রিল ভোরের আকাশের মানচিত্রের ছবিটা দেখলে বিষয়টা স্পষ্ট হতে পারে। আকাশের পুব দিকে এখন ধনুরাশিতে আছে উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক বৃহস্পতি। পাশেই আর একটু পূর্বে আছে শনি। অনেকটা পূর্বে মঙ্গল। যদিও শনি ও মঙ্গল দু’জনেই এখন মকর রাশিতে। আরও পূর্ব দিগন্ত ঘেঁষে উদীয়মান চাঁদ। সে আছে কুম্ভ রাশিতে। প্রদীপবাবুর কথায়, এ সময়টা এই তিন গ্রহ আর চাঁদকে এক সরলরেখায় রেখে দেখা একটু কষ্টকর। কারণ, তিন গ্রহ থেকে চাঁদের দূরত্ব অনেকটা থাকলেও ভোরের আলো ফুটবে প্রায় সাড়ে চারটেয়। সূর্য ওঠার আগেই চাঁদকে উঁচু বাড়ির ছাদ থেকে পুব আকাশে খুঁজে নিতে পারলে তা থেকে একটু পশ্চিমে বৃহস্পতি পর্যন্ত কাল্পনিক সরলরেখা টানা খুব একটা কষ্টকর হবে না। আর এই সরল রেখার মধ্যেই পূর্ব থেকে অর্থাৎ চাঁদের দিক থেকে প্রথমে লাল রঙের মঙ্গল আর তারপর শনিকে চিনে নেওয়া সহজ।
[আরও পড়ুন: প্রচণ্ড গরমেও কাবু হবে না করোনা! দাবি ফ্রান্সের গবেষকদের]
বলে রাখা ভাল, এক সরলরেখায় আকাশের দৃষ্টিপটে এরা কাছাকাছি থাকলেও আসলে পৃথিবী থেকে মঙ্গলের দূরত্ব থাকবে প্রায় ১৯ কোটি ৬৩ হাজার কিলোমিটার। কিন্তু বৃহস্পতি থাকবে প্রায় ৭৫ কোটি কিলোমিটার দূরে। শনি থাকবে অনেক দূরে প্রায় ১৪৯ কোটি ৪৫ লক্ষ কিলোমিটারের ব্যবধানে। সেই তুলনায় চাঁদ মাত্র ৪ লক্ষ ৬ হাজার কিলোমিটার দূরে। এদের দূরত্বের তারতম্য দেখলেই বোঝা যাবে সবাই পারস্পরিক শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখেই ঘুরে চলেছে সূর্যের চারদিকে।
The post এখানেও ‘দূরত্ব’ বজায়ের নিয়ম! নির্দিষ্ট ব্যবধানে এক সরলরেখায় শনি-মঙ্গল-বৃহস্পতি appeared first on Sangbad Pratidin.