সুমিত বিশ্বাস ও অমিত সিং দেও, পুরুলিয়া ও মানবাজার: একপাশে ঝাড়খণ্ড। আরেকপাশে বাঁকুড়া-ঝাড়গ্রাম সীমানা। ময়ূরঝর্ণা হস্তি প্রকল্পের আওতায় থাকা পুরুলিয়ার (Purulia) বান্দোয়ান এখনও বনদপ্তরের খাতায়-কলমে ‘হাতি উপদ্রুত’। সেইসঙ্গে আছে কালাচ, চন্দ্রবোড়ার মত বিষধরের দাপট। সেই বান্দোয়ানে ২৫ মে ‘তৃণমূলে নবজোয়ার’ কর্মসূচির অধিবেশনের তাঁবুতে রাত্রিযাপন করবেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। তাই কোনওরম ঝুঁকি না নিয়েই ঝাড়খণ্ড-সহ ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়ার সীমানায় হুলাপার্টি মোতায়ন করবে কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগ। অধিবেশনস্থলের পাশেও রেঞ্জ কার্যালয়ে থাকবে একটি হুলা পার্টি। থাকবে ওয়াইল্ড লাইফ স্কোয়াড (Wild life Sqaud), স্নেক ক্যাচার টিম। এডিএফও-র তত্ত্বাবধানে তিনজন রেঞ্জ আধিকারিক এই সমস্ত বিষয়টি সামাল দেবেন।
বরাবাজার বান্দোয়ান (Bandoan) সড়কপথে একেবারে বান্দোয়ান ঢোকার মুখে ডানদিকে ডবলডি শালতলা মাঠে অভিষেকের এই অধিবেশনস্থল। যার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে রবিবার থেকেই। পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের নির্দেশ মোতাবেক এই ভিভিআইপির কথা মাথায় রেখে হুলা পার্টি প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেয়। যদিও বান্দোয়ান সদরে গত ১০ বছরে বুনো হাতি (Wild elepahnt) আসার কোন উদাহরণ নেই। তবুও কোন ঝুঁকি নিতে চায় না প্রশাসন। কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগের ডিএফও অসিতাভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “প্রশাসনের নির্দেশ মোতাবেক বান্দোয়ানে হুলাপার্টি মোতায়েন থাকবে। বন্যপ্রাণের কথা মাথায় রেখে সব রকম পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”
[আরও পড়ুন: রহস্যজনক মৃত্যু আদিত্য সিং রাজপুতের, বাথরুমে মিলল অভিনেতার দেহ]
কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগের বান্দোয়ান ১, বান্দোয়ান ২, যমুনা বনাঞ্চল মিলিয়ে ঝাড়খণ্ড ছুঁয়ে থাকা এই বান্দোয়ান ব্লক। দুই বনাঞ্চলের কুঁচিয়া থেকে প্রায় ২০ কিমি দূরেই দলমা পাহাড় রেঞ্জ। যমুনা বনাঞ্চলের কুইলাপাল পার হলেই দক্ষিণ বাঁকুড়ার বারিকুল। এই কুইলাপাল থেকে আরেক দিকে ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ির বকডুবি। সাম্প্রতিক কালে সেভাবে এই এলাকায় দলমার বুনো হাতি দাপিয়ে বেড়ার উদাহরণ না থাকলেও এই এলাকা বুনো হাতির করিডর। যে কোনও সময়েই দক্ষিণ বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম বা ঝাড়খণ্ড (Jharkhand) থেকে হাতির দল চলে আসতে পারে। সবচেয়ে উদ্বেগ দলছুট দাঁতালকে নিয়ে।
বুনো হাতির দলের গতিবিধি আগে থেকে আন্দাজ করতে পারা গেলেও দলছুট দাঁতালের গতিবিধি একেবারেই ঠাহর করা যায় না। এই কারণেই বান্দোয়ান ব্লকে থাকা তিন বনাঞ্চল মিলিয়ে মোট ১০ টি হুলা পার্টি মোতায়েন থাকছে। একটি হুলাপার্টিতে ১৫-২০ জন করে সদস্য থাকবে। তাদের সঙ্গে থাকবে মশাল। একটি হুলা পার্টি থাকবে অধিবেশনস্থল লাগোয়া বান্দোয়ান এক বনাঞ্চল কার্যালয়ে। বাকি ন’টি হুলা পার্টি থাকবে তিনটি বনাঞ্চলে তিনটি করে। এই তিনটি বনাঞ্চলের যে সকল এলাকা দিয়ে বুনো হাতি প্রবেশ করতে পারে সেখানেই মোতায়েন করা হবে তাদের। বান্দোয়ান এক বনাঞ্চলের ঝাড়খণ্ড লাগোয়া বুড়িগড়া গঙ্গামান্না ও সিরকা। বান্দোয়ান দুই বনাঞ্চলের ঝাড়খন্ড ছুঁয়ে থাকা আসনপানি, থরকাদহ। যমুনা বনাঞ্চলের ঝাড়খণ্ড ছুঁয়ে থাকা গুড়পানা, গোলকাটা। এছাড়া ঝাড়গ্রাম সীমানায় রয়েছে দুলুকডি, লেদাম। বাঁকুড়া সীমানায় রয়েছে পুকুরকাটা ও আঁধারঝোড়। বিস্তীর্ণ এই এলাকা হাতির করিডর। যা দিয়ে বান্দোয়ান সদরে ঢুকে যেতে পারে।
[আরও পড়ুন: সমালোচনা উড়িয়ে ফের মাঝ সমুদ্রে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের পাঠাল বাংলাদেশ]
যে মাঠে অধিবেশন হবে সেখানে তাঁবু পোতার কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে ২৪মে সকালেই। তাই সেই সময় থেকেই ওই অধিবেশন স্থলের পাশেই ১৪ জন সদস্যের ওয়াইল্ড লাইফ স্কোয়াড থাকবে চারটে খাঁচা নিয়ে। যদি জঙ্গল থেকে বুনো শূকর, শেয়াল অধিবেশন স্থলে চলে আসে তা রুখতে! অধিবেশনস্থলের পাশেই থাকবে চারজন করে দুটি স্নেক ক্যাচার টিম। আসলে এই মাঠ একেবারে পরিত্যক্ত। প্রায় বছর আটেক আগে এই মাঠে জনসভা করেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই মাঠ আয়তনে অনেক বড় বলেই নবজোয়ার কর্মসূচির অধিবেশনস্থল হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। আগে বান্দোয়ান ব্লক মাঠকে অধিবেশনস্থল হিসেবে ভাবা হয়েছিল। কিন্তু সেই মাঠ অপেক্ষাকৃত ছোট হওয়ায় বদল ঘটেছে। তাতেই চ্যালেঞ্জ বনদপ্তরের। ফাঁকা মাঠে যে রাত্রিযাপনের জন্য ভিভিআইপির তাঁবু ফেলা হবে!