অর্ণব দাস: বোমা, গুলি, হুমকি, লাগামছাড়া সন্ত্রাস। একটা সময় এগুলো কার্যত রোজনামচা ছিল শাসনের বাসিন্দাদের কাছে। আতঙ্ককে সঙ্গে নিয়েই দিনাতিপাত করতেন দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলো। একদা শাসনের বেতাজ বাদশা মজিদ মাস্টারের ‘শাসনে’তটস্থ হয়ে থাকতেন সবাই। সে দিন গিয়েছে, সন্ত্রাসের সেই রাজপাটও অতীত। কিন্তু, বাম আমলের সেই বিভীষিকাময় দিনগুলির সাক্ষী হয়ে এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে শাসনের কীর্তিপুর ১ নম্বর পঞ্চায়েতের ভুবনপুরের একটি একতলা বাড়ি। যে বাড়িতে বসেই সন্ত্রাসের ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করত মজিদ মাস্টারের সাঙ্গোপাঙ্গরা।
২০১১ রাজ্যে পালাবদলের পর প্রায় দুই যুগ অতিক্রান্ত হয়ে গিয়েছে। এখন উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে শাসনে। তবে, সন্ত্রাসের চিহ্ন হিসাবে এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে সেই বাড়ি। বর্তমানে তার ভগ্নদশা। যে বাড়ি একদা শাসনবাসীর কাছে ছিল মূর্ত বিভীষিকা, আজ তা পরিণত হয়েছে পোড়োবাড়িতে। বাম আমলে সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর হিসাবে পরিচিত ছিল বারাসত ২ নম্বর ব্লকের শাসন। সিপিএম নেতা মজিদ মাস্টারের দলবলের হুমকি, ঘরছাড়া করা, বোমাবাজিতে তটস্থ হয়ে থাকত শাসনের সর্দারহাটি, তেহাটা, দেওপুকুর, দাদপুর, খড়িবাড়ি-সহ বিভিন্ন এলাকার গ্রামবাসীরা। এর মধ্যে কীর্তিপুর ১ নম্বর পঞ্চায়েতের ভুবনপুর এলাকাটি ভেড়িবেষ্টিত। সেখানের আনন্দ চক্রবর্তী নামে এক প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তির বাড়ি দখল করে মজিদ মাস্টারের দলবল। অভিযোগ, ওই ব্যক্তিকে সেখান থেকে উৎখাত করে জোর করেই তাঁর যাবতীয় সম্পত্তি কবজা করে নিয়েছিল সিপিএমের হার্মাদ বাহিনী। এরপর ১৯৯৮ থেকে প্রায় দশ বছর ওই বাড়ি থেকেই লাগামহীন সন্ত্রাস পরিচালিত হত। এজন্য সেখানে যাবতীয় সরঞ্জামও মজুত থাকত বলেও অভিযোগ। তবে, হাড়হিম করা দুর্বিষহ সেই দিন এখন অতীত। তৃণমূল জমানায় সন্ত্রাসমুক্ত শাসনে লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। পাকা রাস্তা, পানীয় জল, বিদ্যুৎ, রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিদ্যুতের আলো সবকিছুই এখন পৌঁছে গিয়েছে প্রান্তিক গ্রামগুলিতে।
[আরও পড়ুন: ‘DA আন্দোলনকারীরা কাজ করছেন না, বেতন কাটা হোক’, মন্ত্রী অখিল গিরির মন্তব্যে বিতর্ক]
পুলিশ সূত্রে খবর, গত তিন বছরে কোনও রাজনৈতিক খুন বা বড় ধরনের কোনও অপরাধ সংগঠিত হয়নি শাসন থানা এলাকায়। আমূল এই পরিবর্তন হয়েছে বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টাতেই। শুধু তাই নয়, ভেড়ির দখলদারি হোক কিংবা খাস ভেড়ির টাকা বণ্টন যা নিয়ে বারবার অভিযোগ উঠেছে বিগত বাম সরকারের আমলে, এখন সেই ভেড়ির খাজনার টাকা বণ্টন হয়ে সরাসরি পৌঁছে যাচ্ছে গ্রামের গরিব মানুষের কাছে। এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে পুলিশ প্রশাসনের তরফে নিয়মিত স্থানীয় ক্লাবগুলির সঙ্গে বৈঠক হয়। তবে, ফেলে আসা কালো দিনগুলির কথা মনে পড়লে আজও আতঙ্কিত হন শাসনবাসী।
স্থানীয় বাসিন্দা সাধন মণ্ডল, তাপস পাত্ররা বলেন, ‘‘পরিত্যক্ত ওই বাড়ি থেকেই একসময় মজিদ মাস্টারের বাহিনী শাসনের গ্রামে গ্রামে সন্ত্রাস চালাত। সেসব দিন আর মনে করতে চাই না। এখন আর এখানে বোমা, গুলির শব্দ পাওয়া যায় না। মানুষ শান্তিতেই রয়েছে। যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে এলাকায়। ভেড়ির খাজনার টাকাও এখন ঠিকঠাক ভাবে বণ্টন হচ্ছে।’’ এ প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বদলা নয় বদল চাই স্লোগানে শাসনের মানুষ সাড়া দিয়েছিলেন। এরপর শাসনে উন্নয়নের মাধ্যমে শান্তি ফিরে এসেছে। আমার বিশ্বাস, মুখ্যমন্ত্রীর একাধিক জনমুখী প্রকল্প এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নব জোয়ার যাত্রার ফলে আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনেও মানুষ আমাদের ব্যাপকভাবে সমর্থন করবে।’’ যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে সিপিএম জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আহমেদ আলি খান বলেন, ‘‘তৃণমূল মানুষকে বিভ্রান্ত করতেই এসব প্রচার চালাচ্ছে। উলটে তৃণমূলই এলাকায় সন্ত্রাস করছে। আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে শাসনের মানুষ এর উত্তর দেবে।’’