বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: রিমোট ভোটিং মেশিন চালু নিয়ে নির্বাচন কমিশনে তীব্র আপত্তি জানাল তৃণমূল-সহ বিজেপি বিরোধী সমস্ত রাজনৈতিক দল। যেখানে ইভিএম নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে সেখানে রিমোট ভোটিং মেশিন মারফৎ ভিনরাজ্যে বসবাসকারী ভোটারদের কীভাবে স্বচ্ছতার সঙ্গে ভোটগ্রহণ সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তৃণমূলের দুই প্রতিনিধি সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও মহুয়া মৈত্র। বিরোধীদের আপত্তিতে অবস্থান বদল করতে কার্যত বাধ্য হয় কমিশন। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা ঘোষণা করেও এদিন সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে কমিশন। আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সব রাজনৈতিক দলকে তাদের বক্তব্য জানাতে বেলেছে কমিশন।
পরিযায়ী শ্রমিক বা ভিনরাজ্যে বসবাসকারী ভোটারদের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবিত রিমোট ভোটিং মেশিন চালু করার বিরোধিতা করল বিজেপি বিরোধী জোটে নেতৃত্ব। আজ দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে সর্বদলীয় বৈঠকে বিজেপি বিরোধী সব রাজনৈতিক দলের তরফে কমিশনের প্রস্তাবের বিরোধিতা করা হয়। বিরোধিতা করার পিছনে একাধিক কারণ তুলে ধরেন বিরোধী নেতৃত্ব। বিরোধীদের যুক্তি, প্রথমত, কোন রাজ্যে কত ভিন রাজ্যের মানুষ কর্মসূত্রে বা অন্যান্য কারণে বসবাস করেন, তার কোনও তথ্য কমিশন বা কেন্দ্রের কাছে নেই।
[আরও পড়ুন: ধোনি ও কোহলির মেয়েদের নিয়ে অশ্লীল মন্তব্য, কড়া পদক্ষেপ দিল্লি পুলিশের]
দ্বিতীয়ত, পৃথিবীজুড়ে সাইবার অ্যাটাকের ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। রিমোট ভোটিং মেশিনে তা হবে না সেই নিশ্চয়তা কোথায়, তৃতীয়ত, ভোটগ্রহণ চলাকালীন পোলিং ও গণনার সময় কাউন্টিং এজেন্টে কীভাবে থাকবে, চতুর্থ, নির্বাচনী আচরণবিধি নিয়েও হাজারো প্রশ্ন থাকছে। কারণ যখন যে রাজ্যে ভোট সেখানে আচরণবিধি লাগু থাকলেও অন্য রাজ্যে থাকে না। সেক্ষেত্রে ভিন রাজ্যের ভোটারদের প্রভাবিত করার সবরকম প্রক্রিয়া খোলা থাকছে। পঞ্চম, ফলে যতক্ষণ পর্যন্ত রাজনৈতিক দল ও ভোটারদের সম্পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদান করা যাচ্ছে ততক্ষণ রিমোট ভোটিং মেশিন চালু করলে কমিশনের স্বচ্ছতা প্রশ্নের মুখে পড়বে।
তাই কমিশনের পক্ষে এখনই এই পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ চালু করা কার্যত অবাস্তব। কংগ্রেসের অভিযোগ, বিজেপির এজেন্ডা বাস্তবায়িত করার পাশাপাশি কাশ্মীরি পণ্ডিত ইস্যু ফের খুঁচিয়ে দিতেই কমিশন এই নিয়ম চালু করতে চাইছে। তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুক্তি, এই পদ্ধতিতে ভিনরাজ্যে বসবাসকারী ভোটারদের ভোটগ্রহণ নিয়ে বহু প্রশ্ন থাকছে। তাই কমিশন আগে রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য শুনুক। তারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিক।
পরিযায়ী শ্রমিকদের ভোটদানের সুবিধায় রিমোট ভোটিং মেশিন চালুর প্রস্তাব দেয় নির্বাচন কমিশন। কমিশনের যুক্তি, এই নিয়ম চালু হলে পরিযায়ী শ্রমিকরা তাঁদের কর্মস্থল থেকেই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। ভোটের সময় বিপুল অর্থ খরচ করে নিজের রাজ্যে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে হবে না।