কলহার মুখোপাধ্যায়: কয়েক মাস শান্ত থাকার পর ফের রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠল রাজারহাট। সোমবার দশমীর রাতে প্রতিমা ভাসানকে কেন্দ্র করে শিখরপুরে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বিজেপি (BJP) ও তৃণমূল (TMC)। তখনকার মতো পুলিশ অবস্থা সামাল দিলেও ওই ঘটনার জের টেনে একাদশীর দিন সকালে ফের দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ায় দুই রাজনৈতিক দলের কর্মী সমর্থকরা। এই ঘটনায় দু’পক্ষের অন্তত দশজন আহত হয়েছেন। ছ’জনকে সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করেছে রাজারহাট থানা।
[আরও পড়ুন: করোনা কালে ৩০০ বছরের প্রথায় ছেদ, দুর্গাপুরে কার্নিভাল বাদেই এবার প্রতিমা বিসর্জন]
ঘটনাটি ঘটেছে শিখরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাজেতরফ এলাকায়। ঘটনার সূত্রপাত সোমবার রাতে। মিলন সংঘ মাঠের ধারে একটি পুকুরে কোন পক্ষের প্রতিমা আগে নিরঞ্জন হবে তা নিয়ে কথা কাটাকাটি শুরু হয় স্থানীয় বিজেপি ও তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে। ওই দুটো পুজোর একটি তৃণমূল প্রভাবিত অন্যটি বিজেপি সমর্থকরা এবছর উদ্যোগ নিয়ে করেছেন। দু’পক্ষের কথা কাটাকাটি দিয়ে গন্ডগোলের সূত্রপাত। অচিরেই তা গড়িয়ে যায় হাতাহাতিতে। তারপর দু’দলেরই স্থানীয় কর্মী-সমর্থকরা ঘটনাস্থলে এসে মারপিটে জড়িয়ে পড়েন যা তুমুল সংঘর্ষের চেহারা নেয়। ঘটনাস্থলে আসে রাজারহাট (Rajarhat) থানার বিশাল পুলিশবাহিনী। অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনতে দু’পক্ষের বেশ কয়েকজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
তখনকার মত ব্যাপারটি ধামাচাপা পড়ে গেলেও তৃণমূলের অভিযোগ, মঙ্গলবার একাদশীর দিন সকালে চাঁদপুর অঞ্চল সভাপতি তরণী নস্করের বাড়িতে হামলা চালায় বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। তরণীবাবুর ভাইয়ের হাত ভেঙে দেওয়া হয়। মারধর করা হয় বাড়ির মহিলাদেরও। তারপর স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা ঘটনাস্থলে হাজির হলে ফের একদফায় সংঘর্ষ শুরু হয়। যা সামলাতে ফের নামানো হয় পুলিশ বাহিনী। সব মিলিয়ে দু’পক্ষের ছ’জনকে এ দিন রাত পর্যন্ত আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
রাজারহাটের বিজেপি নেতা প্রসেনজিৎ ঘোষ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের হাতে বিজেপির আটজন কর্মী আহত হয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, বাড়ি ভাঙচুর এবং মারধর করা হয়েছে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের। এর পাশাপাশি প্রসেনজিৎবাবুদের পক্ষ থেকে পুলিশের সমালোচনা করে বলা হয়েছে, তৃণমূলের দলদাসের মতো আচরণ করেছে রাজারহাট থানা। রাজারহাট বিজেপির পক্ষ থেকে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে। বিজেপির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে রাজারহাট-নিউটাউন তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি প্রবীর কর সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ভাসানকে কেন্দ্র করে পাড়ার মধ্যে একটি গন্ডগোল ঘটেছিল। সেটি সেই পাড়ার মধ্যেকার বিষয়। কিন্তু পরে দাঙ্গাবাজ বিজেপির এক মণ্ডল সভাপতির নেতৃত্বে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতির বাড়িতে হামলা চালানো হয়। পরিবারের চারজনকে মারধর করা হয়। তাঁরা আহত হয়েছেন বিজেপির আক্রমণে। এর পাশাপাশি চাঁদপুর তৃণমূলের দাবি, সম্প্রতি বিজেপির এক পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলে যোগদান করেছেন। সেই আক্রোশেই তৃণমূলের ওপর পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছে বিজেপি কর্মী ও দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনায় জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কিনা সেই বিষয়ে এ দিন রাত পর্যন্ত সরকারিভাবে পুলিশের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি।