দুলাল দে: চারিদিকে পরস্পর বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির ভাষা সন্ত্রাস আর হানাহানির যুগে, ১১১ নং ওয়ার্ডে অন্যরকম রাজনৈতিক সৌহার্দ্যের বাতাবরণ তৈরি করলেন সদ্যজয়ী তৃণমূল কাউন্সিলর সন্দীপ দাস (Sandip Das)। নিজেই লাল রংয়ে রাঙিয়ে দিলেন সিপিএমের উদ্বাস্ত সংগঠনের অফিস, দীনেশ স্মৃতি ভবন। যা ২০১৭ পর্যন্ত সিপিএম-এর এল সি অফিস ছিল।
একটা সময় পর্যন্ত বলা হত, ১১১ নং ওয়ার্ডে কোনও প্রার্থীর দরকার হয় না। কলকাতা কর্পোরেশন ভোটে সিপিএম-এর কাস্তে, হাতুড়ি, তারা চিহ্নের কোনও পতাকা ঝুলিয়ে রাখলেও হাসতে হাসতে জিতে যাবে সিপিএম। ১১১ নং ওয়ার্ড ছিল সিপিএমের লাল দুর্গ। আর সেই লাল দুর্গের হেভিওয়েট প্রার্থী চয়ন ভটাচার্যকে হারিয়ে এবার ১১১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হয়েছেন তৃণমূলের সন্দীপ দাস।
[আরও পড়ুন: Shaoli Mitra: ‘শিরদাঁড়া সোজা রেখে চলতে শিখিয়েছিলেন’, শোকস্তব্ধ শাঁওলি মিত্রর ‘মানসকন্যা’ অর্পিতা ঘোষ]
ঊষাপল্লী মাঠ সংলগ্ন তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) ওয়ার্ড অফিসের পাশেই সিপিএমের দীনেশ স্মৃতি ভবন। আর তার পাশেই বিশাল জঙ্গল। কাউন্সিলর হয়েই জঙ্গল পরিষ্কারের সময়েই সিপিএমের সংগঠনের অফিসটি দেখে কিছুটা হতাশ হয়ে পড়েন সন্দীপ। রং চটে গিয়ে জঙ্গলে ঘেরা কিছুটা অপরিষ্কার হয়ে রয়েছে দীনেশ স্মৃতি ভবন। সন্দীপ ঠিক করেন, তৃণমূলের ওয়ার্ড অফিস যদি রং করে পরিষ্কার রাখা হয়, তাহলে পাশের সিপিএমের অফিসটিকেও ঝাঁ চকচকে করতে হবে। সেইমতো বিদায়ী কাউন্সিলর চয়ন ভট্টাচার্যকে গিয়ে সন্দীপ বলেন, “ আমাদের অফিসের পাশাপাশি আপনাদের অফিসটিকেও আমরা সুন্দর করে লাল রং করে দিতে চাই।”
এ প্রসঙ্গে সন্দীপ দাসের বক্তব্য হল, “আমি পুরো ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। সেখানে ওয়ার্ডের সবার উন্নতি দেখাটাই আমার কাজ। আমাদের অফিস সুন্দর রংয়ে রাঙান হবে, আর ওদেরটা অপরিষ্কার থাকবে, এটা হতে পারে না। তাই চয়ন দা’কে মনের কথা বলে লাল রং করে দিই। তবে ওনাদের সিনিয়র নেতারা এই রংয়ের পুরো খরচটা দিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। আমি অর্থ নয়। ওদের আশীর্বাদ চেয়েছি। আর চেয়েছি ওয়ার্ডের উন্নতিতে ওদের সহযোগিতা।”
তাঁদের অফিস তৃণমূল কাউন্সিলরের রং করে দেওয়া প্রসঙ্গে সিপিএমের (CPM) সদ্য পরাজিত প্রার্থী চয়ন ভট্টাচার্য বললেন, “এলাকায়, রাজনৈতিক সৌহার্দর পরিবেশ আমরাও চাই। কিন্তু দেখতে হবে, এর পিছনে অন্য কোনও উদ্দেশ্য আছে কি না। রং করতে চাওয়ার কথা সন্দীপ আমাদের জানানোর পর, ওকে বলেছিলাম, আমার একার সিদ্ধান্তে হবে না। পার্টির সবার সঙ্গে আলোচনার জন্য দু’একদিন সময় দিতে হবে। কিন্তু আশ্চর্যভাবে দেখলাম, আমাদের সিদ্ধান্তর আগেই সন্দীপ আমাদের অফিস রং করে দিয়েছে। তাই ভাবছি, সৌহার্দের আড়ালে অন্য কোনও উদ্দেশ্য নেই তো? আমরা কিন্তু এর আগে নিজেদের খরচেই দীনেশ স্মৃতি ভবন সারিয়েছি।”
সন্দীপ এর উত্তরে হাসতে হাসতে বললেন, “অবশ্যই উদ্দেশ্য আছে। আর তা হল, ১১১ নং ওয়ার্ডকে মডেল ওয়ার্ড করে তোলা।”