সৌরভ মাজি, বর্ধমান: দেওয়ালে ফুটে উঠছে কার্টুন চিত্র। শিল্পীর নিপুন হাতে তুলির টানে ফুটে উঠছে কারও গুণগান। কারও বদনাম! লোকসভা ভোটের (Lok Sabha Election 2024) বাজারে কদর বাড়ছে চিত্রশিল্পীদের। এ পাড়া থেকে ও পাড়ায় রং-তুলি নিয়ে ছুটছেন শিল্পী। বড় বড় দেওয়ালে কোথাও রঙিন, কোথাও সাদাকালো রঙে ফুটে উঠছে কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, বার্ধক্য ভাতার মতো প্রকল্পের কথা। কোথাও আবার বঞ্চনার কথা। ছন্দ মিলিয়ে দুইচার লাইন ‘ছড়া’। সঙ্গে চিত্র বা ব্যঙ্গচিত্র।
বর্ধমান শহরের বিভিন্ন এলাকায় সোমবার থেকে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে চিত্রশিল্পী অনিল দত্তর। রবিবার ব্রিগেডের জনগর্জন সভা থেকে প্রার্থী ঘোষণার পরই বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী তথা ১৯৮৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ী দলের অন্যতম সদস্য কীর্তি আজাদের সমর্থনে দেওয়াল লিখন শুরু হয়। তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের মধ্যে যাঁরা একটু আঁকার হাত রয়েছে তাঁরাই মূলত এই কাজ শুরু করেন। তবে এবার ‘প্রফেশনাল আর্টিস্ট’ বা পেশাদার শিল্পীদেরও ডাক পড়ছে। বর্ধমান শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ড, ১৬ নম্বর ওয়ার্ড, ১১ নম্বর ওয়ার্ডে পেশাদার শিল্পীর রঙ-তুলি রাঙিয়ে উঠেছে কীর্তি আজাদের প্রচার।
[আরও পড়ুন: অবশেষে কার্যকর CAA, কী এই আইন? কেন এনিয়ে এত বিতর্ক?]
বর্ধমান শহরের ইছলাবাদ এলাকায় ঘুরে দেখা গেল, কার্টুন চিত্রে ফুটে উঠেছে একজন পুরুষ ও মহিলা কোদাল, বেলচা, ঝুড়ি নিয়ে ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ করছেন। পাশে লেখা, ‘মোদি দিল ধোঁকা, দিদি দিল টাকা’। আর একটা দেওয়াল ভরেছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার কাঁখে নিয়ে মহিলার চিত্র। সঙ্গে লেখা, ‘দিদি আমাদের পাশে, আমরা দিদি সাথে’। কোনও দেওয়ালে ফুটে উঠেছে অসহায় বৃদ্ধর ছবি। পাশে বার্ধক্য ভাতার ১০০০ টাকার কথা উল্লেখ করে লেখা, ‘দিদির আমাদের মাথায় হাত, দু বেলা দু-মুঠো খাই ভাত’। রূপশ্রী, কন্যাশ্রী-সহ রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কথাও ছড়া ও কার্টুন চিত্রে ভরেছে তৃণমূলের প্রচারের দেওয়াল। শহরের নীলপুর, মুচিপাড়া সহ অন্যত্রও দেওয়াল চিত্র নজর কাড়ছে এবার।
চিত্রশিল্পী অনিল দত্ত বড়নীলপুর শক্তিপাড়ার বাসিন্দা। তিনি সারাবছর সাইনবোর্ড লেখা, ওয়ালপেন্টিং করে। ছবি এঁকে জীবিকা নির্বাহ করেন। স্থায়ী কজ কিছু নেই। যখন যেমন ডাক পড়ে তেমন কাজ করেন। সোমবার ইছলাবাদ এলাকায় দেওয়াল চিত্র ফুটিয়ে তুলতে তুলতেই বলেন, “এবারের ভোটপ্রচারে কার্টুন চিত্রর কদর রয়েছে। নিজেই ছড়া লিখে তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কার্টুন চিত্র আঁকছি। অনেক জায়গা থেকেই ডাক পড়ছে। সব জায়গায় যেতে পারছি না এখনই। চেষ্টা করছি যেখানেই কাজ করছি সেই দেওয়াল যেন সকলের নজর কাড়ে। কেউ যেন চোখ ফেরাতে না পারে। তাতেই তৃপ্তি।” এখন তো শুধু তৃণমূলেরই দেওয়াল লিখছেন। বিরোধীরা ডাকলে যাবেন প্রশ্নে ছবির মতোই নির্মল হাসি ফুটে ওঠে অনিলের মুখে।