পাঁচটি বিষয়কে খুব মামুলি মনে করলে ডায়াবেটিসের প্রকোপ অনিবার্য। জীবনশৈলীর সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে থাকা বিষয়গুলি অজান্তেই বাড়িয়ে তোলে রক্তে শর্করার মাত্রা। তাই কতটা হলে থামতে হবে? কারা বেশি সংকটে? জানালেন এসএসকেএম হাসপাতালের বিশিষ্ট এন্ডোক্রিনোলজিস্ট ডা. প্রদীপ মুখোপাধ্যায়। শুনলেন জিনিয়া সরকার।
ডায়াবেটিসের কারণগুলি রোজকার জীবনযাপনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই বলে কি এগুলি পুরোপুরি বাদ দিয়ে জীবন কাটালে তবেই মধুমেহকে দমিয়ে রাখা সম্ভব? উত্তর হল, না। পারিবারিক বা জেনেটিক কারণ, বয়স, মানসিক চাপ, ওজন বৃদ্ধি ও খাদ্যাভ্যাস-শত্রু শিবিরে এই কারণগুলিই প্রথম দিকে। আবার প্রতিটি বিষয়ই খুব আপেক্ষিক। তাই ঠিক কতটা হলে বা কাদের বিপত্তি বেশি? সেটা জানা জরুরি।
পরিবারের সূত্র ধরে
ডায়াবেটিসের গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হল, জেনেটিক ইনহেরিট্যান্স। পরিবারের সুতো বেয়ে যেভাবে ডায়াবেটিস ছড়িয়ে পড়ে পরবর্তী প্রজন্মে তা বেশ অন্যরকম। যদি কারও প্রথম সারির আত্মীয় অর্থাৎ বাবা-মা, ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোনের মধ্যে কারও একজনের ডায়াবেটিস থাকে সেক্ষেত্রে তার ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সম্ভাবনা ১০-১৫ শতাংশ। সেকেন্ড ডিগ্রির রিলেটিভ বা দ্বিতীয় সারির আত্মীয় যেমন, কাকা, জ্যাঠা, মামার ডায়াবেটিস থাকলেও আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা রয়েছে। তবে সম্ভাবনা কিছুটা কম। আরও সহজ করে বলতে গেলে বাবা অথবা মা, কারও একজনের ডায়াবেটিস থাকলে সন্তানের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ১০-১৫ শতাংশ। আর যদি বাবা-মা দুজনেরই ডায়াবেটিস থাকে সেক্ষেত্রে ঝুঁকি ৭০-৭৫ শতাংশ।
যাঁরাই মোটা তাঁদেরই ডায়াবেটিস?
পরিবারের সঙ্গে এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট বা পরিবেশগত কারণ জড়িত। অর্থাৎ পরিবারে ডায়াবেটিস থাকার সঙ্গে একজনের ওজন কতটা তার উপর নির্ভর করে ঝুঁকি কতটা। বিএমআই বা বডি মাস ইনডেক্স ২১-২৩ এর মধ্যে থাকলে তা স্বাভাবিক বলা হয়। কিন্তু, এই পরিমাপ ২৫-এর বেশি হলে ওবেসিটিতে আক্রান্ত বলেই গণ্য করা হয়। স্বাভাবিক ওজন কি না তা বুঝতে অঙ্ক কষে দেখুন। উচ্চতা (সেমি)- ১০০ = সঠিক ওজনের মাপ। স্বাভাবিক মাত্রা পেরিয়ে যাওয়া মানেই রিস্ক আছে।
[আরও পড়ুন: মৃ্ত্যুকে হারিয়ে দেওয়ার গল্প, আশা দেখাচ্ছেন কলকাতার ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা]
বয়সের দোষ
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে রোগের ফিরিস্তি বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে চেপে ধরে নানা অসুখ। বর্তমানে এই ডায়াবেটিস কোনও বয়স মানছে না। খুব ছোটদেরও হচ্ছে। বিশেষ করে পরিবারে কারও ডায়াবেটিস থাকলে সেই পরিবারের শিশুরা যদি খেলাধুলো না করে। খাদ্যাভ্যাসে ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড বেশি থাকে। ওজনও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়। তাহলে তাঁদের ১০-১২ বছর বয়সেও টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। এই প্রবণতা সম্পন্ন শিশুদের ঘাড়ের কাছে কালো দাগ লক্ষ্য করা যায়।
একদিকে লাইফস্টাইল ঠিক না থাকা ও অন্যদিকে বয়সের জাঁতাকল রক্তে ইনসুলিন নিঃসরণ এবং কার্যকারিতার পথে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে কোনও শারীরিক সমস্যা নেই, তা সত্ত্বেও ৩০-৩৫ ঊর্ধ্বদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি দেখা দেয়।
মিষ্টি খান? কারণ ডায়াবেটিসের?
মিষ্টি খেলে ডায়াবেটিস হয়, এটার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি জোরালো নয়। তবে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক না থাকলেও রান্না বা তরকারিতে অধিক মিষ্টি ডায়াবেটিস বা রক্তে ব্লাড সুগারের মাত্রাকে ত্বরান্বিত করে। আর ডায়াবেটিস যাঁদের রয়েছে তাঁদের জন্য মিষ্টি বিপজ্জনক হতে পারে। তাই খুব কম মাত্রায় মিষ্টি খেতে হবে। কার্বোহাইড্রেট-প্রোটিন-ফ্যাটের সমন্বয়ে ডায়েট মানতে হবে। চাল-গম-ডাল পরিমাণ মেপে, শাক-সবজি, স্যালাড বেশি করে খাওয়া উচিত। আপেল, কমলালেবু ইতাদি টাটকা ফল খান। তেল-ঘি-মাখন প্রাপ্তবয়স্কদের খুব বুঝে মেপে খেতে হবে। মিষ্টি বা চিনি খুব প্রয়োজনে বা মাঝে মধ্যে খাওয়া যেতে পারে।
চাপেই চাপে ডায়াবেটিস
মানসিক চাপ কতটা ডায়াবেটিসের কারণ সেই নিয়ে নানা জনের নানা মত। তবে অবসাদ ডায়াবেটিসের কারণ। এ ব্যাপারে অনেকেই একমত। যাঁদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাঁদের যেমন অবসাদও বেশি। তেমনি উলটো দিক থেকে যাঁরা অবসাদের শিকার তাঁদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও মারাত্মক। এই সম্ভাবনাকে আরও প্রগাঢ় করে পারিবারিক ইতিহাস। কাজেই পরিবার সবক্ষেত্রেই বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই দুই কারণই আপনার থাকলে নিজের প্রতি আরও বেশি সচেতন হতে হবে। অনিয়ন্ত্রিত ওজন, খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান ও মদের নেশা এই সম্ভাবনাকে আরও ত্বরান্বিত করে। চিন্তা বা অবসাদ বিশেষ করে যাঁদের ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা রয়েছে তাঁদের ডায়াবেটিসের রিস্ক বাড়ায়। ডিপ্রেশন নিয়ন্ত্রণ না করলে ডায়াবেটিসকে বাগে আনাও বেশ কঠিন।
[আরও পড়ুন: ওবেসিটি + ডায়াবেটিস= ডায়াবেসিটি, শরীরে বাসা বাঁধলে সাবধান!]
The post এই পাঁচটি কাজ করলেই ডায়াবেটিস থাকবে দূরে appeared first on Sangbad Pratidin.